1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কুমারীত্ব পরীক্ষার বিরুদ্ধে সরব হওয়া দরকার

২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১

বিশ্বের বহু দেশে এখনো কুমারীত্ব পরীক্ষা একটি রীতি। এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার। লিখছেন ক্যারিন স্খায়ার।

https://p.dw.com/p/3pprC
ভার্জিনিটি টেস্ট
ছবি: Mohammed Huwais/AFP/Getty Images

মরক্কোর একটি মানবাধিকার সংস্থা এই বিজ্ঞাপনটি তৈরি করেছে। ভার্জিনিটি টেস্টের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিবাদ হিসেবে।

ধপধপে সাদা চাদর পাতা খাটে। তার উপর ছড়িয়ে আছে সূর্যের আলো। একটি খুব সুন্দর বাক্স খোলা হলো। তার ভিতর আরো একটি সাদা কাপড়। স্ক্রিনে লেখা ফুটে ওঠে-- 'ঐতিহ্যবাহী কুমারীত্ব পরীক্ষার সরঞ্জাম'। এরপর সেই কাপড়ের ভিতর থেকে বের হতে শুরু করে তুলো, রুমাল ইত্যাদি। সব শেষে স্ক্রিনে ফুটে ওঠে আরো একটি বাক্য-- 'রক্তের নমুনা পাওয়ার গ্যারান্টি দেওয়া হচ্ছে'। কারণ, প্রথাগত ভাবে মনে করা হয়, প্রথম যৌন মিলনের সময় নারীর ভ্যাজাইনা থেকে রক্তপাত হবে। যদিও এই ধারণার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।

মরক্কোয় নারীর অধিকার নিয়ে গত ফেব্রুয়ারি থেকে কাজ করতে শুরু করেছে একটি প্রতিষ্ঠান। তাদের নাম মরক্কোস অল্টারনেটিভ মুভমেন্ট ফর দ্য ডিফেন্স অফ দ্য ইনডিভিজুয়াল ফ্রিডম (মালি)। তারাই ওই প্রোমোশনাল ভিডিওটি বানিয়েছে। বেট্টি লাছগার ওই সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা। ডিডাব্লিউকে তিনি জানিয়েছেন, মরক্কো সহ পৃথিবীর বহু দেশে কুমারীত্ব পরীক্ষা এখনো রীতিমতো রীতি হিসেবে পালিত হয়। বিয়ের রাতে বেডশিটে রক্ত নারীদের অগ্নিপরীক্ষার মতো। মনে করা হয়, তার মানে নারীর কুমারীত্ব অক্ষুণ্ণ। ওই রীতির বিরুদ্ধেই তাঁরা প্রোমোশনাল ভিডিওটি বানিয়েছেন। লাছগারের বক্তব্য, ওই রীতি আসলে পুরুষতান্ত্রিকতার ধারক। দীর্ঘদিন ধরে সমাজ যা বয়ে বেড়াচ্ছে।

বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই

মরক্কো সহ বিশ্বের বহু দেশে কুমারীত্ব পরীক্ষা নিয়মিত হয়ে থাকে। নারীদের প্রমাণ করতে হয় যে তাঁরা ভার্জিন। নইলে নানারকম সামাজিক এবং পারিবারিক সমস্যার মুখে তাঁদের পড়তে হয়। এমনকী, কোনো কোনো দেশে রাষ্ট্রীয় শাস্তির মুখেও পড়তে হয়। সৌদি আরবে একটি খবর হয়েছিল। এক ব্যক্তি বিয়ের রাতে স্ত্রী এবং গোটা পরিবার নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। চিকিৎসককে সকলের সামনে স্ত্রীর ভারজিনিটি পরীক্ষা করতে বলা হয়েছিল। বহু পারিবারিক অশান্তির ঘটনাও ঘটেছে এই ভারজিনিটি টেস্টকে ঘিরে।

গোটা পৃথিবীতে কত পরিমাণ কুমারীত্ব পরীক্ষা হয়, তার কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা জানা যায়নি। এর রেকর্ড রাখা হয় না। কিন্তু গোটা বিশ্বেই এই টেস্টের জন্য নারীদের শারীরিক সমস্যা যে হচ্ছে, তা স্পষ্ট। সে কারমেই ২০১৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিবৃতি দিয়ে জানায়, যে প্রক্রিয়ায় কুমারিত্ব পরীক্ষা হয়, তার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। কুমারীত্ব পরীক্ষা বাস্তবে সম্ভব নয়।

বেডশিটে রক্ত কুমারীত্ব পরীক্ষার একটি চিরাচরিত সামাজিক রীতি। এ ছাড়াও টু ফিঙ্গার টেস্ট আছে। চিকিৎসকরা যে পরীক্ষা করে থাকেন। বিশ্বের বহু দেশের নারীরা বিয়ের আগে চিকিৎসকদের কাছে গিয়ে এই পরীক্ষা করান এবং সার্টিফিকেট নিয়ে আসেন।

টু ফিঙ্গার টেস্টও ভয়াবহ। চিকিৎসক নারীর ভ্যাজাইনায় দুইটি আঙুল ঢুকিয়ে এই পরীক্ষা করেন। আধুনিক বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় প্রমাণ হয়েছে, টু ফিঙ্গার টেস্টও যথেষ্ট বিজ্ঞানসমম্ত নয়। নারী ভার্জিন হলেও তাঁর রক্তপাত না হতে পারে।

এ তো গেল বিজ্ঞানের কথা। যে কোনো কুমারীত্ব পরীক্ষা নারীকে মানসিক ভাবেও ভেঙে দেয়। শারীরিক কষ্ট হতে পারে। নারীর অমতে ভার্জিনিটি টেস্ট যৌন নিগ্রহ হিসেবে ধরা হয় বিশ্বের বহু দেশে।

ফ্রান্স, ভারত, মিশর, আফগানিস্তানের মতো বহু দেশে কুমারীত্ব পরীক্ষা নিষিদ্ধ হয়েছে। এক সময় মিশরে কুমারীত্ব পরীক্ষা সরকারি ভাবে স্বীকৃত ছিল। প্রতিবাদী নারীদের মিশরের প্রশাসন ধরে ধরে ভার্জিনিটি টেস্টে পাঠিয়েছিল। নারী অধিকার কর্মীদের বক্তব্য, এই ধরনের কাজ সম্পূর্ণ অবৈধ এবং মানবাধিকারের পরিপন্থী।

পুরুষতন্ত্রের প্রকাশ

মালি সংস্থাটির তৈরি করা ভিডিওটিতে মরক্কোর বহু নারী কথা বলেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, কুমারীত্ব পরীক্ষা অন্যায়। এতে নারীর সম্মান নষ্ট হয়। ২৭ বছরের আমিরা জানিয়েছেন, ''বিয়ের আগে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে সার্টিফিকেট নিয়ে আসা অন্যতম জরুরি কাজ।'' তবে তাও যথেষ্ট নয়। আমিরার বক্তব্য, আসল পরীক্ষা হয় বিয়ের রাতে। বেডশিটে রক্ত থাকা সব চেয়ে জরুরি।

ভয় এমন জায়গায় পৌঁছে গেছে যে, বহু নারী নানা ধরনের রাসায়নিক পণ্য কিনতে শুরু করেছেন। ভার্জিন নারীরাও এ ধরনের জিনিস কিনছেন। এক ধরনের জেলির মতো ক্যাপসুল পাওয়া যায় বাজারে। যার ভিতরে রক্তের মতো উপাদান থাকে। লাছগার ওই ধরনের পণ্য বিক্রি বন্ধের আন্দোলন শুরু করেছেন। কিন্তু তাঁরা জানেন, সমাজের মানসিকতা না বদলালে ওই ধরনের পণ্য বিক্রি বন্ধ করা সম্ভব নয়।

একটি জার্মান কোম্পানি ওই ধরনের জিনিস বিক্রি করে। তার ডিরেক্টর ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, শুধু ব্লাড ক্যাপসুল নয়, ভূয়া সার্টিফিকেটও তাঁর সংস্থা বিক্রি করে। এবং এই ব্যবসাটিকে তাঁরা জনকল্যাণমূলক বলে মনে করেন।

তবে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ওই ধরনের পণ্য শরীরের পক্ষে যথেষ্ট ক্ষতিকারক। মালির কর্মীদের বক্তব্য, এই মুহূর্তের সবচেয়ে জরুরি কাজ হলো, ভার্জিনিটি পরীক্ষা যে বিজ্ঞানসম্মত নয়, তা প্রচার করা। এর জন্য, বিজ্ঞানী, চিকিৎসক সকলকে সামনে আসতে হবে। যে চিকিৎসকরা এখনো কুমারীত্ব পরীক্ষার সার্টিফিকেট দিচ্ছেন, তাঁদের তা বন্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে সমাজের সমস্ত স্তরে যৌন শিক্ষা চালু করতে হবে।

 LINK: http://www.dw.com/a-56675125