কাশ্মীরের শেষ ‘জার্মান খার’
মহারাজা হরি সিংয়ের আমল থেকে কাশ্মীরে এই কাজটি করে আসছে গোলাম মহিউদ্দীনের পরিবার৷ এতকাল পরিবারের অনেকেই এভাবে মানুষের জীবন বাঁচানোয় ভূমিকা রেখেছেন৷ কিন্তু এখন আছেন মাত্র একজন৷ দেখুন ছবিঘরে...
তারা ‘জার্মান খার’
গোলাম মহিউদ্দীনের বয়স আশির কাছাকাছি৷ শ্রীনগরের রায়নাবারি জেলার ছোট্ট ওয়ার্কশপে এই বয়সেও হাসপাতালের ছোট ছোট সরঞ্জামগুলো তৈরি ও মেরামত করেন প্রতিদিন৷
কেন তারা ‘জার্মান খার’?
গোলাম মহিউদ্দীনের পূর্বপুরুষরা লোহা দিয়ে হাসপাতালের সরঞ্জাম তৈরি শুরু করেছিলেন ১৯৪০ সালের দিকে৷ মহারাজা হরি সিংয়ের শাসনামলে কাশ্মীরে তখন জার্মানির তৈরি সরঞ্জামই হাসপাতালে বেশি আসতো৷ সরঞ্জামগুলো নষ্ট হয়ে গেলে মহিউদ্দীনের বাপ-দাদারা মেরামত করে দিতেন৷ মেরামতের পর দেখে মনে হতো যেন নতুন কেনা হয়েছে৷ কাজ দেখে মুগ্ধ হয়ে মহারাজা হরি সিংই মহিউদ্দীনের বংশধরদের প্রথম ‘জার্মান খার’ ডেকেছিলেন৷
হাসপাতালে হাতে তৈরি সরঞ্জাম
কাশ্মীরিরা কারিগরকে বলেন ‘খার’৷ তো মহারাজা হরি সিং সেই যে ‘জার্মান খার’, অর্থাৎ ‘জার্মান শিল্পী’ ডেকে সম্মান জানিয়েছিলেন, সেই সম্মান এখনো ধরে রেখেছেন গোলাম মহিউদ্দীন৷ ছবিতে এক জোড়া ফোরসেপ বানাচ্ছেন মহিউদ্দীন৷ ৪৯ ডলার দামের এই ফোরসেপগুলো চলে যাবে হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে৷
আরো স্বীকৃতি
একবার শ্রীনগরের এক জার্মান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গোলাম মহিউদ্দীনের বাবাকে একটা চিঠি লিখেছিলেন৷ চিঠিতে কাজের প্রশংসা করতে গিয়ে বলা হয়েছিল, ‘‘আপনাদের কাজ এত নিখুঁত যে দেখে বোঝা যায় না কোনটা আসল আর কোনটা রেপ্লিকা৷’’
মানুষের জীবন বাঁচাতে...
আয় খুব সামান্য৷ নিখুঁতভাবে কাজ করেন বলে এক জোড়া ফোরসেপ তৈরি করতে এক সপ্তাহ লেগে যায় মহিউদ্দীনের৷ এত কম আয় জেনেও এই বয়সেও কেন এই কাজ করছেন? গোলাম মহিউদ্দীনের জবাব, ‘‘এসব সরঞ্জাম মানুষের জীবন বাঁচায়৷ এ কারণেই এসব তৈরি করি৷ না হলে অনেক আগেই এই কাজ ছেড়ে দিতাম৷’’
ভবিষ্যৎ ভাবনা
গোলাম মহিউদ্দীন আর তার ভাই কাজ শিখেছিলেন বাপ-দাদাদের কাছ থেকে৷ কিন্তু আর কেউ নেই বলে এখন একাই বানান হাসপাতালের দরকারি সব সরঞ্জাম৷ কাজে সহায়তার জন্য, কাজ শেখানোর জন্য লোক খুঁজেছেন অনেক৷ এ কাজে যেমন ধৈর্য দরকার, সেরকম ধৈর্যশীল মানুষ পাওয়া যায়নি৷ তাই শেষ ‘জার্মান খার’ গোলাম মহিউদ্দীন বাস্তবতা মেনে নিয়েছেন, ‘‘নেশার মতো হয়ে গেছে, তাই এ কাজ আমি করে যাব৷’’