কাল ভোরে গুজরাটে আঘাত হানছে ঘূর্ণিঝড় বায়ু
১২ জুন ২০১৯দেশটির আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় বায়ু যে গতিতে এগিয়ে আসছে তাতে, বৃহস্পতিবার ভোর নাগাদ স্থলভাগে আঘাত হানতে পারে৷ গুজরাটের জ্যেষ্ঠ রাজ্য কর্মকর্তা জেএন সিং জানিয়েছেন, ‘উপকূলবর্তী দশটি জেলার প্রায় তিন লাখ মানুষ ঝুঁকিতে রয়েছে৷ তাদের বুধবার বিকেলের মধ্যে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে আনা হবে৷ এজন্য সব প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে৷‘ ইতোমধ্যে, ৬৭টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি৷
উপকূলীয় জেলা সৌরাষ্ট্র ও কচ্ছের সব স্কুল কলেজ বৃহস্পিতবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও জানান জেএন সিং৷
ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাব্যতা বিবেচনা করে উদ্ধার তৎপরতা ও ত্রাণ নিশ্চিত করতে, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রুপানি, দেশটির সেনাবাহিনী ও জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা সংস্থার সহযোগিতা চেয়েছেন৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া এক বার্তায়, বুধবারের মধ্যে পর্যটকদের উপকূল ছেড়ে নিরাপদ স্থানে ফিরে আসারও অনুরোধ জানিয়েছেন রুপানি৷
ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পর দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ, টেলিযোগাযোগ এবং পরিবহন ব্যবস্থা সচল করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছন কেন্দ্র সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ৷
আবহাওয়ার খবর অনুযায়ী, আরব সাগরে অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘বায়ু‘ ক্রমে আরো শক্তিশালী হয়ে গুজরাটের দিকে অগ্রসর হচ্ছে৷ এর কেন্দ্রে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ১০৬ মাইল৷ ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে তুমুল বৃষ্টিপাত হচ্ছে৷ প্রায় সাতফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস তৈরি আশঙ্কাও রয়েছে৷ ফলে প্লাবিত হতে পারে নিম্নাঞ্চল৷
ঝড়টি স্থলভাগে আঘাত হানলে, ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি সড়ক যোগাযোগ ব্যহত হবার আশঙ্কা করছে, আবহাওয়া বিভাগ৷ এছাড়াও উপকূলীয় খড়ের ঘর, ছাউনি উড়িয়ে লণ্ডভণ্ড হওয়ার আশঙ্কা আছে৷ বিচ্ছিন্ন হতে পারে বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা৷
কিছুদিন আগে ঘূর্ণিঝড় ফণি আঘাত হেনেছিল ভারতের ওড়িশা ও বাংলাদেশের উপকূলে৷ এর প্রভাবে ভারতে ৩৪ ও বাংলাদেশে ১৫ জনের প্রাণহানি হয়৷
সাগর কিংবা মহসাগরে একইসঙ্গে দু-তিনটি ঘূর্ণিঝড় অবস্থান করতে পারে৷ তাই ঘূর্ণিঝড়ের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের সুবিধায়, আলাদা নাম দেয়া হয়৷ মুম্বাই আবহাওয়া বিভাগের উপ মহাপরিচালক কেএস হোসিলকার জানান, পৃথিবীর দক্ষিণাঞ্চলে ৮টি দেশের অবস্থান৷ এগুলোর মধ্য আছে, বাংলাদেশ, ভারত, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড৷ এই আটটি দেশ ধারাবাহিকভাবে ঘূর্ণিঝড়ের আগাম নাম ঠিক রাখে৷ তারপর সব দেশ মিলে নামটি চূড়ান্ত করে৷ সাগরে কোনো ঘূর্ণিঝড় দেখা দিলে, তখন ঠিক করা নামটি ব্যবহার করা হয়৷ এরপর নাম করণের দায়িত্ব মালদ্বীপের বলেও জানান তিনি৷ এর মধ্যে দেশটি ঘূর্ণিঝড়ের পরবর্তী নাম হিসেবে ‘হাইকা‘ চূড়ান্ত করেছে৷
চলতি গ্রীষ্ম থেকেই ভারতের আবহাওয়া বৈরি আচরণ করছে৷ আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে ভারতের প্রায় অর্ধেকটা জুড়ে খরার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে৷ বৃষ্টির আশায় দিন গুণছে এসব এলাকার প্রায় ৫০ কোটি মানুষ৷ প্রচণ্ড গরমে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা তাদের৷ রাজস্থানে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসও ছাড়িয়ে গেছে৷ দেরিতে হলেও, গেল সপ্তাহে দেশটির দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালায় বৃষ্টি হয়েছে৷
টিএম/কেএম