1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘কারও কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেওয়া বেআইনি’

সমীর কুমার দে ঢাকা
১৯ আগস্ট ২০২২

সম্প্রতি আবারও আলোচনায় ‘গুম’৷ বিশেষ করে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল বাচেলেটের ঢাকা সফরে বিষয়টি বেশ গুরুত্ব পেয়েছে৷ প্রশ্নের মুখে পড়েছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী৷

https://p.dw.com/p/4FlOp
গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্য
ছবি: Md. Rakibul Hasan/ZUMA Press Wire/picture alliance

ডয়চে ভেলের কাছে এই বিষয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে কথা বলেছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক৷

ডয়চে ভেলে : বাংলাদেশে গুম নিয়ে এখন ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে৷ গুম নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?

এ কে এম শহীদুল হক : গুম নিয়ে নতুন কিছু ঘটেছে বলে জানি না৷ যে অভিযোগগুলো করা হয়, এগুলো বহুদিন যাবৎ করা হচ্ছে৷ একই অভিযোগ বারবার করা হচ্ছে৷ এটা নতুন কোন ইস্যু নয়, পুরান ইস্যু৷ তারা ২০১০ সাল থেকেই এগুলো বলে আসছে৷

সরকার বলছে, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কাউকে গুম করে না৷ তাহলে যারা নিখোঁজ হচ্ছেন তাদের পরিবার কী মিথ্যা বলছে?

আইন শৃঙ্খলা বাহিনী গুম করবে কী কারণে? আমি তো এর কারণ খুঁজে পাই না৷ পুলিশের তো প্রশ্নই উঠে না গুম করার৷ পুলিশের তো ক্ষমতা আছে, কাউকে গ্রেপ্তার করার, মামলা দেওয়ার৷ তাহলে সে গুম কেন করবে? গুম তো বিশ্বব্যাপী একটা সমস্যা৷ এ কারণে জাতিসংঘকে তো বছরে একদিন গুম দিবস পালন করতে হয়৷ এখন একটা লোক পালায়ে গেল, সেটাকে কী বলবেন? আর এই নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা তো বৃটিশ আমল থেকেই ছিল৷ দেখেন পুলিশ তো কাজে শতভাগ সফল হতে পারবে না৷ কিছু তো ব্যর্থতা থাকবেই৷ যেটা উদ্ধার করতে পারিনি বা খোঁজ নিতে পারিনি সেটা পুলিশের ব্যর্থতা৷ অনেক উদ্ধারও তো হচ্ছে৷ প্রতি মাসেই তো এমন দু'একটি মামলা হয়৷ গুম তো আর আইনের ভাষায় নেই৷ আইনে বলা আছে, অপহরণ বা নিখোঁজ৷

গুম বিশ্বব্যাপী একটা সমস্যা: এ কে এম শহীদুল হক

আপনি যেটা নিখোঁজ বলছেন, সেখানে তো তাদের সবাই বিরোধী মতাদর্শের মানুষ৷ অনেক অগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিও গুম হচ্ছেন, এতে আসলে সরকারের কী লাভ হচ্ছে?

এতে সরকারের তো কোন লাভ হচ্ছেই না৷ তাদের উদ্ধার করতে পারছে না বলেই তো সরকারের সমালোচনা হচ্ছে৷ যেমন ইলিয়াস আলী৷ তাকে উদ্ধারে তো চেষ্টার ত্রুটি করা হয়নি৷ আমি তখন অতিরিক্ত আইজিপি ছিলাম৷ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও তো তখন আমাদের বলেছেন, তার স্ত্রী আমার কাছে এসেছিল, আমি তো তার কষ্টটা বুঝি৷ তোমরা একটু সিরিয়াসলি দেখো তো ইলিয়াস আলী কোথায় গেলো? আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করেছি৷ আমি যতদূর জানি গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ, ব়্যাব, এসবি, সিআইডি, ডিবি সবাই চেষ্টা করেছে৷ কিন্তু পারেনি৷ আবার একদিন দেখলাম, মির্জা আব্বাস পাবলিক মিটিংয়ে বললেন দলীয় কোন্দলের কারণে ইলিয়াস আলী গুম হয়েছে৷ ফলে জিনিসটা ধোঁয়াশায়৷ তাকে উদ্ধার করতে না পারলে এই ধোঁয়াশা তো থেকেই যাবে৷

আমরা তো দেখছি, নিখোঁজের তালিকা অনেক লম্বা৷ এদের কাউকেই কী আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে খুঁজে পাচ্ছে না, আপনার সেটা মনে হয়?

রাজনৈতিক যে তালিকা দেখেন সেখানে তো একটা একটা করে ভেরিফাই করা হয়নি৷ অনেক সময় দেখা যায়, মানুষ মেরে রেললাইনের পাশে রেখে যায়৷ আবার অনেক সময় দেখা যায়, মেরে নদীতে ফেলে দেয়৷ এমন অজ্ঞাত লাশ কিন্তু প্রতি মাসেই পাওয়া যায়৷ এদের সনাক্ত করতে অনেক সময় আমরা বিভিন্ন কৌশল নেই৷ তারপরও কিন্তু অনেক লাশ অজ্ঞাতই থেকে যায়৷ রাজনৈতিক লোকজন যে তালিকা দেয়, সেটার রহস্য উদ্ঘাটন না করলে তো বোঝা যাবে না কারা করেছে বা কি করেছে? পুলিশ তো চেষ্টা করে পারিনি৷ পুলিশের তালিকার সঙ্গে তাদের তালিকা কিন্তু সব সময় মেলে না৷ তারা বেশি বেশি দেখায়৷ কিন্তু দেখবেন যে তাদের আত্মীয় স্বজন এসে যে কান্নাকাটি করে তাদের সংখ্যা কিন্তু সীমিত, কয়েকজন৷ 

তাহলে কি দেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর এ বিষয়ে অবস্থান ভুল?

মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কাজ কী? তাদের তো কাজ থাকতে হবে৷ তারা তো এগুলো করবেই৷ তারা এনজিও টাইপের৷ বিদেশি সংস্থা থেকে টাকা আনে৷ সেই টাকা দিয়ে তারা এগুলো দেখাবে, সেমিনার করবে- এটাই তো তাদের কাজ৷ সত্য, মিথ্যা তো তারা জানে না৷ যে অভিযোগ করা হয়, সেই অভিযোগ নিয়ে তারা হৈ চৈ করে৷

আপনি তো পুলিশের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন, সর্বোচ্চ পদ অর্থাৎ আইজি ছিলেন৷ আপনি কাজ করতে গিয়ে গুমের বিষয়ে আসলে কী জানতে পেরেছেন?

আমি তো সাধারণ নির্দেশনা সবাইকে দিয়েছি৷ এই মামলাগুলো যাদের কাছে আছে, অর্থাৎ ডিবি হোক, সিআইডি হোক তাদের বলেছি, তোমরা গুরুত্ব সহকারে এগুলো দেখো৷ ইউনিট প্রধানদের প্রতি মাসেই এগুলো নিয়ে নির্দেশনা দিয়েছি৷ এই মামলাগুলো বিশেষ মামলার আওতাভুক্ত করে তদারক করা হয়েছে৷ চেষ্টার ত্রুটি করা হয়নি৷ আইজি হিসেবে এই নির্দেশনা বারবার দিয়েছি৷ কিন্তু তারা যদি খুঁজে না পায়, কী করবেন? যেমন সাগর-রুনির মামলা৷ কত চেষ্টা করেছি, চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না৷ তারপর রহস্য বের করতে পারিনি, আসামি ধরতে পারিনি৷ এমন কিছু থেকে যায়৷

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গুমের তিনটি কারণ বলেছেন৷ এতে তিনি বলেছেন, অনেকে নিজেই নিখোঁজ হচ্ছে? আপনি কি তাই মনে করেন?

এমন কিছু থাকে৷ যেমন ধরেন কারও কাছ থেকে টাকা নিয়েছে, কিন্তু দিতে পারছে না৷ টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে৷ তখন অনেকেই নিজেই নিখোঁজ হয়ে যান৷ অনেক সময় সে নিজেই বেরিয়ে আসে৷ এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জের একটা ঘটনা আলোচিত হল৷ একটা মেয়ে নিখোঁজ হয়েছেন৷ পরে দেখা গেল তিনি নিজেই পালিয়ে গেছেন৷ এ কারণেই হয়ত মন্ত্রী এটা বলেছেন৷

অভিযোগ আছে, গুম হওয়া অনেকের কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে৷ এই স্বাক্ষরকে কী হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী?

কারও কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেওয়া বেআইনি৷ এটা নেবে কেনো? সেই যেই হোক৷ এতদিন পরে ভিকটিমের স্বজনদের কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেওয়ার কোন কারণ আমি খুঁজে পাই না৷ এটা করা ঠিক না৷ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যদি নতুন করে তদন্ত করে সেক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারে, সেটা ভিন্ন কথা৷ কিন্তু সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেওয়া কোন ক্রমেই আইন সিদ্ধ নয়৷ এতে মানুষের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি হয়৷ যদি এটা নিয়ে থাকে তাহলে বিধি মতো কাজ করেনি বা আইন মতো কাজ করেনি৷ 

অনেকেই সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ তোলেন৷ এমন কোন অভিযোগ পেলে কী পুলিশের কিছু করণীয় থাকে?

অন্য বাহিনী যদি করে থাকে, সেটা আমরা বলতে পারব না৷ আমাদের তদন্তে এমন কখনও পাইনি৷ আজ পর্যন্ত কোন পুলিশি তদন্তে এমনটা আসেনি৷ এখন কেউ যদি অভিযোগ করেন, তাহলে তিনি কিসের ভিত্তিতে অভিযোগ করেছেন সেটা যদি স্পষ্ট করে বলে তাহলে সেই ক্লু নিয়ে আগানো যায়৷ আর তারা যদি ঢালাও ভাবে বলে তাহলে তো কোন ক্লু পাওয়া যায় না৷ তবে আমরা অতীতে কখনও পাইনি৷ 

নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সত্যিকারে চেষ্টা করে বলে কি আপনি মনে করেন?

আমি মনে করি চেষ্টা করে৷ আমি যখন ছিলাম তখন আমি আন্তরিকভাবে নির্দেশনা দিয়েছি৷ মনিটরিং সেল করেছি, অনেক চেষ্টা করেছি৷ কিন্তু সব পারিনি৷ এটা ব্যর্থতা৷