কলমের শক্তি
সমাজে কতই তো অন্যায়, অবিচার, বৈষম্য থাকে৷ ব্রাজিলে সমাজবাস্তবতার গভীরের সেই বিষয়গুলো পাঠকের সামনে পরিবেশন করছেন কয়েকজন লেখক৷ তাঁদের নিয়েই আজকের ছবিঘর৷
আন্দ্রেয়া ডেল ফুয়েগো: জাদু বাস্তবতা
নিজেকে সবসময় আড়ালে রাখতে পছন্দ করেন৷ নাম আন্দ্রেয়া ডোস সান্তোস, তবে লিখছেন আন্দ্রেয়া ডেল ফুয়েগো ছদ্মনামে৷ ব্লগে লিখেন, বেশ কয়েকটি গ্রন্থও আছে তাঁর৷ জার্মানিতে লেখক হিসেবে তাঁর অভিষেক ‘সিবলিংস অফ দ্য ওয়াটার’ গ্রন্থের মাধ্যমে৷ তিন ভাই-বোনের গল্প৷ পানির মতোই বহমান জীবন একসময় তাঁদের নিয়ে যায় অনেক দূরে৷ তিন জনের জীবনের পথ আর এক বিন্দুতে মেলেনি কখনো৷
মিল্টন হাটুম: আমাজন থেকে বিশ্বসাহিত্যে
বাবা-মা লেবাননের আর সহপাঠীরা সবাই অ্যামাজনের৷ সাহিত্যে মিল্টেন হাটুম তাই অনেকটা এই দুই জগতের সেতুবন্ধের মতো৷ জন্ম ১৯৫২ সালে, মাউনুসে৷ মৌলিক লেখা এবং অনুবাদ- দুভাবেই তাঁর লেখকপ্রতিভা প্রকাশিত৷ সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দুটি গ্রন্থের নাম ‘অ্যাশেজ অফ দ্য অ্যামাজন’ এবং ‘টু ব্রাদার্স’৷ গ্রন্থ দুটি ১৪টি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে৷
ফ্যার্নান্ডো মোরাইস: উপন্যাস যেন খবর
মনে-প্রাণে সাংবাদিক এই লেখক উপন্যাসও লেখেন অনেকটা খবরের ঢংয়ে৷ চলচ্চিত্রের কাহিনিও লেখেন৷ বেস্টসেলার ‘ওলগা’ তো বটেই, তাঁর বেশিরভাগ উপন্যাস নিয়েই নির্মান করা হয়েছে চলচ্চিত্র৷ ওলগা উপন্যাসে মোরাইস তুলে ধরেছেন এক জার্মান কমিউনিস্টের কথা, যাঁকে ব্রাজিল নাৎসিদের হাতে তুলে দিয়েছিল৷ ২০০৮ সালে পাওলো কোয়েলোর জীবনী লিখে বিতর্কের ঝড় তুলেছিলেন মোরাইস৷
চিকো বুয়ারকে : শব্দেরও শব্দ আছে
চিকো বুয়ারকে একাধারে সংগীত শিল্পী, লেখক এবং বুদ্ধিজীবী৷ তাঁর সমাজের সমালোচনামূলক উপন্যাসগুলো জার্মান ভাষাতেও অনুদিত হয়েছে, ‘দ্য হান্টেড’ এবং ‘বুদাপেস্ট’-এর মতো ক্লাসিকও আছে সেই তালিকায়৷ এ বছর তাঁর ‘স্প্লিট মিল্ক’ উপন্যাসটি প্রকাশিত হবে জার্মানিতে৷
জোয়াও উবালডো রিবেইরো: বার্লিনকে প্রেমপত্র
ক্রীতদাসের খুপড়ি থেকে উচ্চবিত্তের মহল-ব্রাজিলের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সর্বত্রই জোয়াও উবালডো রিবেইরোর বিচরণ৷ জন্ম ১৯৪১ সালে, বাহিয়ায়৷ লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ ১৯৭১ সালে, রাজনৈতিক উপন্যাস ‘সার্জেন্টো জেটুলিও’-র মাধ্যমে৷ জার্মানির রাজধানী বার্লিন নিয়ে স্মরণীয় কিছু লেখা আছে তাঁর৷ বার্লিন প্রাচীরের পতনের পর লিখেছিলেন, ‘এ ব্রাজিলিয়ান ইন বার্লিন’৷
ক্লারিসি লিসপেক্টর: পরতে পরতে বিদ্রোহী
ক্লারিসি লিসপেক্টর শুধু লেখায় নয়, বাস্তব জীবনেও স্বাধীনচেতা, বিদ্রোহিনী৷ জন্ম ১৯২০ সালে, ১৯৭৭ সালে মৃত্যু৷ জীবনাবসানের ৩৬ বছর পরও সাহিত্যজগতে তাঁকে নিয়ে আলোচনা হয়৷ ‘নিয়ার টু দ্য ওয়াইল্ড হার্ট’ লিখে ব্রাজিলের স্বৈরশাসক জেটুলিও ভার্গাসের কোপানলে পড়া এই লেখিকাকে ২০০৫ সালে দারুণ এক সম্মান দিয়েছে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস৷ ক্লারিসি লিসপেক্টরকে ‘ল্যাটিন অ্যামেরিকার ফ্রানৎস কাফকা’ হিসেবে বর্ণনা করেছে তারা৷
শর্শে আমাডো: ছোট মানুষ, বড় গল্প
কোকো, কার্নিভাল আর খ্যাপামো – ব্রাজিলের এই তিন সৌন্দর্যকে পরম দক্ষতায় তুলে ধরেছেন শর্শে আমাডো৷ পথশিশু আর পতিতারাই তাঁর লেখার হিরো৷ ব্রাজিলের আত্মার গভীরের কথা বাঙময় হয়ে উঠেছে ২০০১ সালে ৮৯ বছর বয়সে মারা যাওয়া এই লেখকের লেখায়৷ ৪৯ টি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে তাঁর লেখা, ছবি হয়েছে অনেক উপন্যাস নিয়ে৷ কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হওয়ায় আমাডো দীর্ঘদিন ছিলেন দেশছাড়া, তাই প্যারিসে কেটেছে অনেকগুলো বছর৷
মাশাডো ডি আসিস: ব্রাজিলের সাহিত্যের গ্র্যান্ডমাস্টার
জোয়াকিম মারিয়া মাশাডো ডি আসিস-এর জন্ম ১৮৩৯ সালে, মৃত্যু ১৯০৮ সালে৷ তবে সৃষ্টিকর্মে এখনো বেঁচে আছেন তিনি৷ ব্রাজিলের সাহিত্যে চিরস্থায়ী আসন তাঁর৷ গল্প বলার চমৎকার ঢং, সমালোচনার ধরণকে এখনো আধুনিক মনে হয়৷ ‘ডোম কাসমুরো’ উপন্যাসটি লিখেছিলেন ১৮৯৯ সালে৷ এক যাজকের গোপন প্রেমের গল্প৷ এবারের ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় থাকবে এ উপন্যাসের জার্মান অনুবাদের নতুন সংস্করণ৷