কলকাতায় মুসলিমপ্রধান এলাকার হাল
২০১১ সালের জনগণনা বলছে, কলকাতায় মুসলিমদের সংখ্যা নয় লাখেরও বেশি। নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় তাদের অধিকাংশের বাস। সেই এলাকার হাল নিয়ে এই ছবিঘর।
কলকাতার মুসলিম এলাকা
কলকাতায় মুসলিমদের বসবাস দীর্ঘদিনের। তবে এখন তারা মূলত কয়েকটি এলাকাতে বেশি সংখ্যায় বসবাস করেন। রাজাবাজার, গার্ডেনরিচ, পার্ক সার্কাস, মেটিয়াবুরুজ, বেলগাছিয়া, খিদিরপুরের মতো এলাকায় তাদের বসবাস বেশি। কিন্তু ঘিঞ্জি, জনবহুল এই এলাকাগুলি খুবই অবহেলিত।
রাজাবাজারের হাল
রাজা রামলোচন রায় ১৮৪২ সালে একটা বাজার তৈরি করেন। পরে তারই নাম হয় রাজাবাজার। ১৮৫৭ সালে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের পর বিহার ও উত্তরপ্রদেশ থেকে গরিব মুসলিমরা এখানে আসেন। দেড় বর্গকিলোমিটার এলাকায় ৬০ হাজার মানুষের বাস।
আবর্জনার স্তূপ
রাজাবাজারে একটু ঘুরলেই দেখতে পাওয়া যাবে রাস্তার ধারে আবর্জনার স্তূপ, যা একেবারেই স্বাস্থ্যকর নয়। ছোট এলাকায় প্রচুর মানুষ এই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করেন।
মেটিয়াবুরুজের কাহিনি
নবাব ওয়াজেদ আলি শাহ ইংরেজের কাছে বিচার চাইতে লখনউ থেকে সদলবলে চলে আসেন কলকাতায়। থাকতে শুরু করেন মেটিয়াবুরুজে। তিনি সঙ্গে নিয়ে আসেন লখনউয়ের মোগলাই খাবারের ঐতিহ্য। কলকাতার দক্ষিণ পশ্চিমে এই ১১ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে আছেন দেড় লাখের বেশি মানুষ। সিংহভাগই মুসলিম।
নারীদের জন্য মসজিদ
শুধুমাত্র নারীদের জন্য একটি মসজিদ আছে মেটিয়াবুরুজে।
বেলগাছিয়ার হাল
মুর্শিদাবাদের নবাব সিরাজউদ্দৌলা পলাশির যুদ্ধে হেরে যাওয়ার পর ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি মীরজাফরের কাছ থেকে পঞ্চান্নটি গ্রাম কিনে নেয়। যা ডিহি পঞ্চান্নগ্রাম নামে পরিচিত ছিল। সেই পঞ্চান্নটি গ্রামের একটি হলো বেলগাছিয়া। উত্তর কলকাতার এই বেলগাছিয়ার একটি বড় অংশে কয়েক হাজার মুসলমানের বাস। অনুন্নত ঘিঞ্জি অঞ্চল।
বিক্রি হচ্ছে গোমাংস
ভারতের অনেক রাজ্যে গোমাংস বিক্রি আইনত বন্ধ। তবে পশ্চিমবঙ্গে গরু কাটা ও গোমাংস বিক্রির উপর কোনো বিধিনিষেধ নেই। রাজাবাজারে গোমাংস বিক্রি হচ্ছে।
চাঁদনি চকের বাজার
মধ্য কলকাতায় চাঁদনি চক বাজার সবসময় জমজমাট। মোবাইল, কম্পিউটার, আসবাব থেকে শুরু করে নানারকম জিনিস পাওয়া যায় এখানে। বিক্রেতারা অনেকেই মুসলিম।
খিদিরপুরের ফ্যান্সি মার্কেট
কলকাতার আরেকটি মুসলিম-প্রধান এলাকা খিদিরপুর। এখানে একসময় বিখ্যাত ছিল ফ্যান্সি মার্কেট। বিদেশি জিনিসের জন্য। তবে উদারীকরণের পর বিদেশি জিনিস এখন সব জায়গায় পাওয়া যায়। তাই আকর্ষণ কমেছে ফ্যান্সি মার্কেটের।
চৌভাগার অবস্থা
পশ্চিম চৌভাগায় প্রচুর মুসলিমের বাস। এখানকার পরিস্থিতি খুবই খারাপ। নোংরা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। ন্যূনতম পুর সুযোগসুবিধার অভাব রয়েছে এখানে।
বেহাল রাস্তা
চৌভাগায় রাস্তার অবস্থা। ভাঙা, কাদায় ভর্তি রাস্তা দিয়ে ট্রাক, গাড়ি সমানে চলছে।
মার্কাস স্কোয়ারের পরিস্থিতি
মধ্য কলকাতার মার্কাস স্কোয়ারে টিনের কণ্টেনারের ব্যবসা। পুতিগন্ধময় জায়গায় তৈরি হচ্ছে এগুলি। প্রচুর মুসলিম এর সঙ্গে যুক্ত।
পার্ক সার্কাসের মুসলিমরা
পার্ক সার্কাসও মুসলিম প্রধান এলাকা। পার্ক সার্কাস স্টেশনে ঢুকতে গেলে এই বাজারের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।
স্টেশনের বাইরে
পার্ক সার্কাস স্টেশনের বাইরের এলাকাও নোংরা। পুর পরিষেবা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেয় এই সব এলাকা।
পদ্মপুকুরের জুতোর দোকান
পদ্মপুকুরে প্রচুর জুতোর দোকান আছে। খুব সস্তায় জুতো পাওয়া যায় এখানে। বিক্রেতারা অধিকাংশই মুসলিম।
বিয়ের জায়গা
পার্ক সার্কাসে বায়তুল হুজ্জাজ। মুসলিম ম্যারেজ হল। পশ্চিমবঙ্গ হজ কমিটির উদ্যোগ।
বাংলাদেশের মানুষের প্রিয় জায়গা
বাংলাদেশ থেকে এলে অনেকেই মার্কুইস স্ট্রিটের হোটেলে খেতে পছন্দ করেন। একাধিক হোটেলে বাংলাদেশের মানুষের রসনাতৃপ্তির ব্যবস্থা আছে।
মুসলিম পোশাক শিল্পীরা
একসময় কলকাতার নামী পোশাক শিল্পীরা ছিলেন প্রায় সকলেই মুসলিম। এখনো এই পেশায় তারাই সেরা। পার্ক সার্কাস এলাকায় একজন পোশাক শিল্পী।
নাখোদা মসজিদ
চিৎপুরে জাকারিয়া স্ট্রিট ও রবীন্দ্র সরণীর সংযোগস্থলে নাখোদা মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয় ১৯২৬ সালে। দশ হাজার মানুষ এখানে প্রার্থনা করতে পারেন। অসাধারণ স্থাপত্যের নিদর্শন এই মসজিদ।