কলকাতায় পরিবেশ নিয়ে ছবির আন্তর্জাতিক উৎসব
বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে কলকাতায় অনুষ্ঠিত হলো জলবায়ু সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। ৩ থেকে ৫ জুন একগুচ্ছ তথ্যচিত্র দেখানো হয় নজরুলতীর্থে। ছবিঘরে বিস্তারিত...
প্রথম আসর
উৎসবের নাম ‘আরবান ক্লাইমেট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’। এই প্রথম এ ধরনের চলচ্চিত্র উৎসবের আসর বসলো কলকাতায়। উদ্যোগ ভারত সরকারের অধীন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ আরবান অ্যাফেয়ার্স (এনআইইউএ)-এর। সহযোগিতায় আবাসন ও নগর বিষয়ক মন্ত্রক, ফ্রেঞ্চ ডেভলপমেন্ট এজেন্সি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
এক ডজন দেশ
তিন দিনে ১২টি দেশের ১৬টি তথ্যচিত্র দেখানো হয়। ভারত ছাড়াও বাংলাদেশ, ইরান, ফ্রান্স, ইতালি, ডেনমার্ক, বেলজিয়াম, আইসল্যান্ড, পোল্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ক্যানাডা এবং ব্রাজিলের তথ্যচিত্রও ঠাঁই পায় উৎসবে। বাংলার পাশাপাশি হিন্দি, ইংরেজি, পার্সি, ইতালীয়, ফরাসি, ডাচ, ড্যানিশ, সোয়াহিলি ভাষার সংলাপ ছুঁয়ে যায় কলকাতাকে।
২০ দেশের ১৫০
নগর সভ্যতার আগ্রাসন কীভাবে চ্যালেঞ্জ করছে প্রকৃতি-পরিবেশকে, সেই প্রশ্ন মাথায় রেখে উৎসবের জন্য ছবি নির্বাচন করেছে নয়াদিল্লির ‘সিএমএস বাতাবরণ’। এই সংস্থার সহ অধিকর্তা সব্যসাচী ভারতী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মনোনয়নের জন্য ২০টি দেশের ১৫০টি ছবি জমা পড়েছিল। তিন সদস্যের কমিটি তথ্যচিত্র নির্বাচন করেছে।’’
চলনবিলের চলচ্ছবি
মৎস্যজীবীদের সমস্যা, সুন্দরবনের বিপদ, কাশ্মীরের সংকট নিয়ে ভারতীয় ছবিগুলি এ দেশের পরিবেশপ্রেমীরা আগেও দেখেছেন। উন্নত ইউরোপ ও অ্যামেরিকার পরিবেশে বিপদঘণ্টি তারা শুনতে পেলেন শহরে বসে। প্রশংসা কুড়িয়েছে বাংলাদেশের একমাত্র তথ্যচিত্র ‘এডুকেশন অন দ্য বোট’। চলনবিলের ভাসমান পাঠশালা বিষয়ে এই ছবির নির্মাতা কে এম তাজবি-উল হাসান।
উৎসবের তীর্থ
‘আরবান ক্লাইমেট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এর সূচনা চলতি বছর নয়াদিল্লিতে। এরপর উৎসব অনুষ্ঠিত হয় মুম্বইয়ে। দু’টি ক্ষেত্রেই অনুষ্ঠানস্থল ছিল সংশ্লিষ্ট শহরের ফরাসি প্রতিষ্ঠান আলিয়াস ফ্রঁসে। কলকাতায় উৎসবের আয়োজন করা হয় পরিবেশবান্ধব স্মার্ট সিটি নিউটাউনে। নজরুলতীর্থ সেজে উঠেছিল উৎসবের সাজে।
আলোচনায় পরিবেশ
উৎসবের তিন দিনই ছিল আলোচনাসভা। তথ্যচিত্রের মতো আলাপচারিতায় উঠে আসে বৃক্ষচ্ছেদন, জলস্তর বৃদ্ধি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু আইনসহ নানা বিষয়। সংকট মোকাবিলার পথও খোঁজা হয়। পরিবেশকর্মী থেকে তথ্যচিত্র নির্মাতা কিংবা চলচ্চিত্রবিদ্যার শিক্ষক, সকলের মত বিনিময়ে সমৃদ্ধ হয় মঞ্চ।
তথ্যচিত্রের প্রভাব
আলোচনায় উঠে আসে তথ্যচিত্রের ইতিবাচক প্রভাবের কথা। চলচ্চিত্রে জাতীয় পুরস্কারজয়ী পরিচালক ফারহা খাতুন ‘কোরাল উওম্যান’-এর প্রসঙ্গ তোলেন। তার ভাষায়, ‘‘সমুদ্রের নীচে প্রবালদ্বীপের সংকট কতটা গভীর, সেটা এই ছবি না দেখলে জানা যেতো না। এই তথ্যচিত্র মুক্তি পাওয়ার পর ডুবুরিদের মাধ্যমে প্রবাল প্রতিস্থাপনের উদ্যোগও নেয়া হচ্ছে। চলচ্চিত্রের ক্ষমতা এতটাই।’’
স্বাধীন ছবির রসদ
রাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠে আসছে স্বল্প বাজেটের তথ্যচিত্রে। কিন্তু ছবি নির্মাণের খরচ কোথা থেকে আসবে? এমনই প্রশ্ন নির্মাতা ও ‘সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট’ (এসআরএফটিআই)-এর অধ্যাপক অনির্বাণ দত্তের। তাঁর বক্তব্য, ‘‘একটা ছবি করতে সাত-আট লাখ টাকা যদি লাগে, সেটা কে জোগাবে? রাষ্ট্র দেবে না, কর্পোরেট দেবে না, নির্মাতারা কীভাবে কাজ করবেন?’’
প্রশ্নের মুখে আয়োজকরা
বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ে উদ্বেগ ক্রমশ বাড়ছে। প্রচণ্ড তাপে পুড়ছে কলকাতাও। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের যন্ত্র বাড়াচ্ছে তাপমাত্রা। এক দর্শকের প্রশ্ন, ‘‘প্রয়োজনের তুলনায় কেন বেশি মাত্রায় এসি চালানো হচ্ছে প্রেক্ষাগৃহে? কেন প্লাস্টিকের জলের বোতল দেয়া হয়েছে অতিথি বক্তাদের?’’ পরিবেশ সংক্রান্ত ছবির উৎসবে এসব যে সত্যিই অনভিপ্রেত তা আয়োজকরাও স্বীকার করেছেন ।
সবুজের অভিযান
আগামী প্রজন্মের হাতেই এই পৃথিবীর জঞ্জাল সরানোর ভার। তথ্যচিত্রের দর্শক হিসেবে তরুণরাই ছিলেন দলে ভারী। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়ারা আন্তর্জাতিক পরিবেশ ভাবনার সঙ্গে পরিচিত হলেন এই তিন দিন। এনআইইউএ-র আধিকারিক পৌলমী পাল ডয়চে ভেলেকে জানান, প্রতি বছর কলকাতাসহ সব মেট্রো শহরে এমন উৎসবের আয়োজন করা যায় কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।