1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কলকাতায় এবার দাড়ি-পায়জামা দেখে অতিথি বিদায়

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০

দাড়ি ও পাঞ্জাবি-পায়জামা দেখেই কয়েকজন মাদ্রাসা শিক্ষককে অতিথিশালা থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কলকাতায় ৷ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷

https://p.dw.com/p/3j2L0
Indien Protest in Kalkutta gegen Belästigung muslimischer Lehrer
ছবি: Payel Samanta/DW

কলকাতার সল্টলেকের একটি অতিথিশালায় ঘর ভাড়া করেছিলেন মালদহের মাদ্রাসার কয়েকজন শিক্ষক৷ ২১ সেপ্টেম্বর সকালে ১০ জন শিক্ষক ট্রিনিটি গেস্ট হাউসে ওঠার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তাদের ঘর ছেড়ে দিতে বলা হয়৷ অন্যত্র ঘরের ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তা হয়নি বলে অভিযোগ৷ বৃষ্টির মধ্যে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর উড়ালপুলের নীচে তারা আশ্রয় নেন৷ শিক্ষকদের বক্তব্য, তাদের থাকার ব্যাপারে অন্যান্য আবাসিকরা আপত্তি করেছেন বলে দাবি করেছেন অতিথিশালার ম্যানেজার ও কর্মীরা৷

ধর্মীয় পরিচয়ের জন্য শিক্ষার্থীদের ঘর ভাড়া দেওয়া হয়নি, এই ঘটনা একাধিকবার সামনে এসেছে৷ শুধু ধর্মবিদ্বেষ নয়, অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রেও এ ধরনের বৈষম্যের নজির কলকাতায় আছে৷ কিন্তু অনলাইনে বুকিং নেওয়া ঘরে চেক-ইনের পর সেখান থেকে বের করে দেওয়ার মতো ঘটনা আগে প্রকাশ্যে আসেনি৷ মালদহের কালিয়াচকের বাসিন্দা আলিপুর মাদ্রাসা শিক্ষাকেন্দ্রের প্রধান শিক্ষক মহম্মদ মাহবুবুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘আমার জীবনে কখনো এ ধরনের অভিজ্ঞতা হয়নি৷ কতবার কলকাতায় এসেছি৷ এবার আমরা ছাত্রদের কীভাবে পড়াবো, বিবিধের মাঝে দেখো মিলন মহান! সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধ ভাবে বেঁচে থাকবো কীভাবে?’’

শিক্ষকের এই আক্ষেপ দূর করাই এখন কলকাতার কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ৷

‘আমার জীবনে কখনো এ ধরনের অভিজ্ঞতা হয়নি’

উপমহাদেশে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের উপর উৎপীড়ন নতুন বিষয় নয়৷ কিন্তু ভারতের কোনো রাষ্ট্রধর্ম নেই, ধর্মনিরপেক্ষ দেশে কেন ধর্মীয় পরিচয়ের জন্য এমন হেনস্থার অভিযোগ উঠবে?

সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গে আল-কায়েদা জঙ্গি সন্দেহে কয়েকজন গ্রেফতার হওয়ার পরপরই দাড়ি-পাঞ্জাবি-টুপির প্রতি বিদ্বেষ প্রকাশ পেলো সল্টলেকের ঘটনায়৷ প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ শিক্ষাবিদ অমল মুখোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মুসলমান-খ্রিস্টান-বৌদ্ধরা আমাদের জাতির অংশ৷ কোনো সম্প্রদায়ের সদস্যকে জঙ্গি সন্দেহে ধরা হলে সবাই দায়ী হয়ে যায় না৷ সংখ্যাগরিষ্ঠের এই অধিকার নেই যে, শিক্ষকদের ধর্মীয় পরিচয়ের জন্য গেস্ট হাউস থেকে বের করে দিতে হবে৷ এটা ভারতীয় ঐতিহ্যের বিরোধী৷’’

শিক্ষকদের পাশে দাঁড়িয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক মইদুল ইসলাম৷ তার অভিযোগের ভিত্তিতে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷ যদিও অতিথিশালার কর্ণধার অমিত ভট্টাচার্য দাবি করেছেন, শিক্ষকরা সেখানে যাননি৷ আগে থেকেই সব ঘর ভর্তি ছিল৷

একাধিক বাম অরাজনৈতিক সংগঠনও শিক্ষকদের হেনস্থার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে ৷ দ্রুত গ্রেপ্তারের ফলে বিভেদের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তাতে মানসিকতার পরিবর্তন হবে কি? ভাষা ও চেতনা সমিতির সাধারণ সম্পাদক, অধ্যাপক ইমানুল হক বলেন, ‘‘আমাদের রাজ্যে চাপা সাম্প্রদায়িকতা রয়েছে৷ তাতে ঘৃণার চাষ হচ্ছে৷ হোয়াটসঅ্যাপে সবসময় ঘৃণার প্রচার চলছে৷ এই গেস্ট হাউসের আবাসিক থেকে কর্মীরা এই প্রচারের শিকার হয়েছেন৷ তাদের ভুল বোঝানো হয়েছে৷ আসলে সবটাই দেশের অর্থনৈতিক সংকট থেকে নজর ঘোরানোর চেষ্টা৷'' মইদুল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সংখ্যালঘুদের আক্রমণের মুখে ফেলছে বিজেপি৷ তারই পরিণামে এ ধরনের ঘটনা৷ রবীন্দ্র-নজরুলের বাংলায় রেহাই পাচ্ছে না৷’’

এই রাজ্যে বরাবর সংখ্যালঘুর তোষণ ও সংখ্যাগুরুর বঞ্চনার অভিযোগ তুলেছে বিজেপি৷ তাদের সংখ্যালঘু মুখ, উত্তরবঙ্গের নেত্রী মাফুজা খাতুনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল ডয়চে ভেলে৷ তিনি প্রশ্ন শুনে পরে প্রতিক্রিয়া দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন৷ যদিও তার কাছ থেকে আর প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি৷ সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম এই ঘটনার নিন্দা করে বিবৃতি দিয়েছেন৷

স্বাধীনতার পর থেকে পশ্চিমবঙ্গ শাসিত হয়েছে ঘোষিতভাবে ধর্মনিরপেক্ষ ডান ও বামপন্থি দলগুলির দ্বারা৷ সেই রাজ্যেই বিজেপি যে অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে তা বোঝা গেছে গত লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান