1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কলকাতার প্রাচীন ভবনও প্রমাদ গুনছে

২২ আগস্ট ২০২০

অনিবার্য ধ্বংসের জন্য প্রহর গুনছে কলকাতার ঐতিহ্যশালী ভবনগুলি৷ বারাণসীতে বিসমিল্লাহ খানের বাড়ির যে পরিণতি হয়েছে, সেটাই যেন তৃতীয় বিশ্বে স্মারকের ভবিতব্য৷

https://p.dw.com/p/3hLDW
Indien Kulturdenkmäler in Westbengalen
ছবি: DW/P. Samanta

সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় অর্থের অভাব-সহ অন্যান্য সমস্যায় আস্তে আস্তে মুছে যাচ্ছে ইতিহাস৷

কবীর সুমন গেয়েছিলেন, ‘হাত পেতে নিয়ে চেটেপুটে খাই, বিসমিল্লাহর পাগলা সানাই’৷ কিন্তু প্রবাদপ্রতিম সেই সানাই বাদকের পরিবারের সদস্যরাই ‘খেয়ে’ ফেললেন তাঁর বসত৷ উত্তরপ্রদেশের বারাণসী শহরের হাদরা সরাই এলাকায় ভারতরত্ন বিসমিল্লাহর বাড়ির একাংশ সম্প্রতি ভেঙে ফেলা হয়েছে৷ শিল্পীর ১৪তম প্রয়াণবার্ষিকী ২১ আগস্টের কয়েকদিন আগের এই ঘটনায় হইচই পড়েছে দেশজুড়ে৷ একইভাবে কলকাতারও অনেক ঐতিহ্যশালী ভবন ধ্বংস হয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় দিন গুনছে৷ আইন আছে ইতিহাস রক্ষার, আছে হেরিটেজ কমিটি৷ কিন্তু নানা বাধায় প্রাচীন ভবনগুলির সংরক্ষণ সম্ভব হচ্ছে না৷ শুধু কলকাতা নয়, পশ্চিমবঙ্গের জেলায় জেলায় এমন অনেক ভবন আজ নিশ্চিহ্ন বা ধ্বংসের মুখে৷

হরিপদ ভৌমিক

ভারত থেকে ইংরেজরা বিদায় নিয়েছে ৭৪ বছর আগে৷ তারও আগে কলকাতা ছিল ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী৷ এই শহরের রাস্তায় রাস্তায় ছড়িয়ে রয়েছে অনুপম স্থাপত্যশৈলীতে তৈরি অনেক ভবন৷ জাতির ইতিহাস ও সংস্কৃতির নিরিখে এই ভবনগুলি অশেষ গুরুত্ব বহন করে৷ কলকাতা পুরসভা অনেক ভবনকে হেরিটেজ বিল্ডিং বা ঐতিহ্যশালী ভবন বলে চিহ্নিত করেছে বটে, কিন্তু বিভিন্ন কারণে অধিকাংশ বাড়ির সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না৷ সাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী থেকে দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের বসত বা বাগবাজারের বসুবাটি, বিভিন্নভাবে তাৎপর্যমণ্ডিত এই ভবনগুলির রক্ষণাবেক্ষণ অসম্ভব হয়ে পড়েছে৷

কলকাতা পুরসভা সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ২০০০ সালে তৈরি ঐতিহ্যশালী বাড়ির তালিকা সংযোজন ও পরিমার্জন করা হবে৷ এজন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে হেরিটেজ কমিটিকে৷ এই কমিটি খতিয়ে দেখবে কলকাতার কোন কোন ভবনকে সংরক্ষণের আওতায় আনা যাবে৷ অতীতে এই তালিকা থেকে বাদ পড়ায় একাধিক ভবন প্রোমোটারের কবলে চলে গিয়েছে বলে অভিযোগ৷ পুরোনো নির্মাণ ভেঙে তৈরি করা হয়েছে বাণিজ্যিক ভবন৷ তবে সংরক্ষণের তালিকায় থাকলে সেই বাড়ি ভেঙে ফেলা সম্ভব নয়৷ পুরসভা প্রাচীন ভবনগুলিকে তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করেছে৷ প্রথম শ্রেণিভুক্ত বাড়িতে আবাসিকরা কোনও সংস্কারের কাজ করতে পারেন না৷ পরের দু'টি শ্রেণিভুক্ত বাড়ির ক্ষেত্রে অনুমতিসাপেক্ষে কিছু সংস্কার করা যায়৷ বাড়ি বিক্রি করার জন্য অনেক বাসিন্দাই চেষ্টা করেন তাঁদের ভবনকে এই তালিকার বাইরে রাখতে৷ এই প্রবণতা বন্ধে তালিকা পরিমার্জনের উদ্যোগ নিয়েছে পুরসভা৷

ড. তথাগত নিয়োগী

এই উদ্যোগ সত্ত্বেও পুরাতত্ত্ব গবেষক ও ঐতিহ্য রক্ষার পক্ষে আন্দোলনকারীরা ততটা আশাবাদী নন৷ এর মূল কারণ দু'টি৷ প্রথমত, অনেক পুরোনো হেরিটেজ আইন৷ দ্বিতীয়ত, সরকারের হাতে অর্থের অভাব৷ কলকাতা হেরিটেজ ওয়াক-এর যুগ্ম প্রতিষ্ঠাতা ড. তথাগত নিয়োগী বলেন, ‘‘১৯০৪-০৫ সালের আইনের সাহায্যে ঐতিহ্য রক্ষার কাজ চলছে৷ আইনের ভাষা বেশ জটিল ও তার ব্যাখ্যা করা কষ্টসাধ্য৷ তার থেকেও বড় সমস্যা, সংরক্ষণের জন্য তহবিলের অভাব৷ ইউরোপ-অ্যামেরিকায় যদি জিডিপি-র ১৫ শতাংশ সংস্কৃতি খাতে ব্যয় করা হয়, তাহলে আমাদের দেশে ১ শতাংশ৷ এত অল্প টাকায় সংরক্ষণের কাজ হবে কী করে?’’

এর পাশাপাশি রয়েছে মামলার সমস্যা৷ অনেক বাড়ি পুরসভা সংরক্ষণের তালিকায় রাখলেও আইনি জটিলতায় সংস্কারের কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না৷ যে বাড়িতে সুকুমার রায় জন্মেছিলেন, সেই বাড়ি নিয়ে আইনি লড়াই চলছে ২০১০ সাল থেকে৷ এই বাড়িতে কোনো ধরনের সংস্কার কাজের উপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে৷ ফলে সব মিলিয়ে বেশ হতাশ বিশিষ্ট কলকাতা গবেষক হরিপদ ভৌমিক৷ তিনি বলেন, ‘‘চোখের সামনে ঐতিহ্য ধ্বংস হতে দেখা ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার নেই৷ বাড়ি বেদখল হয়ে যাবে৷ সেগুলি বিক্রি হয়ে গড়ে উঠবে বহুতল৷ বিসমিল্লাহর বাড়ির যে পরিণতি হয়েছে, এখানে তার পুনরাবৃত্তি হবে৷ কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত থেকে হাল আমলে প্রয়াত ফুটবল কোচ অমল দত্তের বাড়ি, সবই আজ অতীত৷’’ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য