কলকাতার ঐতিহ্যবাহী কালীপুজো
কালীঘাট থেকে দক্ষিণেশ্বর, ফিরিঙ্গি কালীবাড়ি থেকে ঠনঠনিয়া-- ঘুরে দেখা কলকাতার ঐতিহাসিক কালীমন্দিরগুলি।
কালীঘাট, শক্তিপীঠ
২০০ বছরের পুরনো কালীমন্দির কালীঘাট। ১৮০৯ সালে সাবর্ণ রায়চৌধুরী জমিদার বংশের অনুদানে এই মন্দির তৈরির কাজ শেষ হয়। প্রধান চারটি শক্তিপীঠের অন্যতম কালীঘাট। পুরাণমতে যেখানে সতীর দেহাংশ পড়েছিল। ১৫ শতাব্দীর সাহিত্যেও অবশ্য কালীঘাটের উল্লেখ পাওয়া যায়। তবে বর্তমান মন্দিরটি তখন ছিল না। কালীপুজোর দিন এই মন্দিরে তিলধারণের জায়গা থাকে না।
কালীঘাটের মূর্তি
কালীঘাটের ঐতিহ্যপূর্ণ কালীমূর্তির ছবি। দেশ বিদেশের ভক্তরা পুজোর দিন ভিড় জমান এখানে।
দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দির
দক্ষিণ কলকাতায় কালীঘাট মন্দির যেমন প্রসিদ্ধ, উত্তরে তেমন দক্ষিণেশ্বর। গঙ্গার ঘাটে এই মন্দির তৈরি করেছিলেন রানি রাসমণি। ১৮৫৫ সালে তৈরি এই মন্দিরের প্রধান পুরোহিত ছিলেন রামকৃষ্ণ। রামকৃষ্ণের শিষ্য বিবেকানন্দেরও যাতায়াত ছিল এই মন্দিরে।
দক্ষিণেশ্বরের কালীমূর্তি
কালীমন্দিরের গর্ভগৃহে মূল কালীমূর্তির ছবি। কালীমন্দির ছাড়াও একই চত্বরে আছে রাধা-কৃষ্ণের মন্দির এবং ১২টি শিব মন্দির। কালীঘাট মন্দির ঘিঞ্জি এলাকার মধ্যে। দক্ষিণেশ্বর মন্দির চত্বর সেই দিকে থেকে অনেক খোলামেলা। মন্দির দেখে নৌকোয় পৌঁছে যাওয়া যায় বেলুড়মঠ।
ফিরিঙ্গি কালীবাড়ি
বৌবাজারের ফিরিঙ্গি কালীবাড়িও কম ঐতিহ্যের নয়। ঠিক ঠিক জানা না গেলেও মনে করা হয়, এই মন্দিরের বয়স প্রায় ৫০০ বছর। তবে এই মন্দির গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে অ্যান্টনি ফিরিঙ্গির নাম জড়িয়ে যাওয়ার পর। সাহেব অ্যান্টনি ভারতে এসে কালীভক্ত হয়ে পড়েন। হিন্দু ধর্মে দীক্ষিত হন। কবিগান গেয়ে বিখ্যাত হয়েছিলেন অ্যান্টনি। বৌবাজারের এই মন্দিরে তিনি পুজো করতে আসতেন। সেই থেকেই মন্দিরের নাম ফিরিঙ্গি।
ফিরিঙ্গি কালীবাড়ির কালীমূর্তি
কালীপুজোর দিন বিপুল ভিড় হয় এই মন্দিরে। দর্শনার্থীরা রাতের আরতির সময় ভিড় জমান। ছবিতে ফিরিঙ্গি কালীবাড়ির কালীমূর্তি।
ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি
কলেজস্ট্রিট মোড়ের কাছে ঠনঠনিয়া কালীমন্দির তৈরি হয়েছিল ১৮০৩ সালে। তৈরি করেছিলেন শংকর ঘোষ। তবে কেউ কেউ বলেন ১৭০৩ সালে তৈরি হয়েছিল এই মন্দির। কালীপুজোয় এই মন্দিরেও ভিড় জমান দর্শনার্থীরা।
ঠনঠনিয়ার কালীমূর্তি
এই কালীমূর্তির নাম সিদ্ধেশ্বরী। সারা বছরই এই মন্দিরে ভক্তদের লাইন থাকে। তবে কালীপুজোর দিন তিনধারণের জায়গা থাকে না। বন্ধ করে দেওয়া হয় বিধান সরণির একাংশ।
ফাটাকেষ্টর পুজো
কালীপুজোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানা রোমহর্ষক গল্প। একসময় ডাকাতরা পুজো করতেন কালীর। শক্তির দেবীর আরাধনা করেছেন সে কালের কলকাতার বহু দুঁদে মস্তানও। ফাটাকেষ্ট তেমনই এক মস্তান। গোটা উত্তর কলকাতা যার নামে কাঁপতো। ফাটাকেষ্টর কালীপুজো ঐতিহাসিকভাবে প্রসিদ্ধ।
ফাটাকেষ্টর পাড়া
পুরনো উত্তর কলকাতার এই পাড়াই ছিল ফাটাকেষ্টর জায়গা। এখনো সেখানেই প্যান্ডেল বেঁধে ফাটাকেষ্টর কালীপুজো হয়।
বারাসতের কালীপুজো
কলকাতা শহরতলির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল বারাসত। উত্তর ২৪ পরগনার এই অঞ্চলে দুর্গাপুজোর চেয়েও জাঁকজমকপূর্ণ হয় কালীপুজো। বিশাল উঁচু উঁচু কালীমূর্তি তৈরি হয় এখানে। তবে করোনাকালে জাঁক একটু কমেছে। বারাসতের তেমনই একটি প্যান্ডেলের ছবি।
আলোয় কালী
বারাসতের আলোকসজ্জাতেও কালী। কলকাতা তো বটেই, শহরতলী এখন সেজে উঠেছে আলোর মালায়।
আলোর দরজা
গোটা শহরে এমন অসংখ্য আলোর দরজা তৈরি হয়েছে। একেকটি পুজো কমিটি একেকরকম গেট তৈরি করেছে। দীপাবলিতে এভাবেই আলোয় সেজে ওঠে কলকাতা।