কলকাতার অনেক রাস্তায় কেন সাইকেল নিষিদ্ধ?
বিশ্ব এখন পরিবেশবান্ধব সাইকেলের দিকে ঝুঁকছে। কলকাতা ব্যতিক্রম। বিশ্ব বাইসাইকেল দিবসের আগে বিশেষ প্রতিবেদন।
কলকাতা সাইকেলবান্ধব নয়
কলকাতাকে একেবারেই সাইকেলবান্ধব শহর বলা যাবে না। নিউটাউন, সল্টলেকের বাইরে এই শহরের অন্য কোনো জায়গায় সাইকেল চালানোর জন্য উৎসাহ দেয়া হয় না। বরং কলকাতার অনেক রাস্তাতেই সাইকেল নিষিদ্ধ। কলকাতা পুলিশ রীতিমতো ট্রাফিক সাইন দিয়ে সে কথা জানিয়ে দিয়েছে।
সাইকেল লেন নেই
কলকাতা শহরের মোট জমির মাত্র ছয় শতাংশ রাস্তার জন্য ব্যবহার করা হয়। ফলে আয়তনের তুলনায় রাস্তা খুবই কম। আর সেই রাস্তায় বাস, ট্রাম, ট্রাক, ম্যাটাডোর, গাড়ি, অটো, টোটো, রিকশ, মোটরসাইকেল, ঠেলার সমাবেশ। সাইকেল এখানে ব্রাত্য। সাইকেলের আলাদা লেন মূল কলকাতায় ভাবাই যায় না। সেখানে রাস্তায় রাস্তায় লাগানো থাকে 'সাইকেল প্রবেশ নিষেধ' বোর্ড।
একের পর এক রাস্তায়
একের পর এক রাস্তায় এই বোর্ড ঝোলে। ফলে মূল কলকাতার মানুষ একেবারেই সাইকেলবান্ধব হয়ে উঠতে পারেননি। কলকাতায় সাইকেল একেবারে গরিব মানুষের যান হিসাবেই থেকে গেছে। গোটা বিশ্বের বিভিন্ন শহর যখন এই পরিবেশবান্ধব যানকে সাদরে বরণ করে নিচ্ছে, সেখানে কলকাতা ব্যতিক্রম।
নিউটাউন ছাড়া
নতুন গড়ে ওঠা উপনগরী নিউটাউন ব্যতিক্রম। সেখানে সাইকেলের জন্য আলাদা রাস্তা আছে। সাইকেল রাখার জায়গা আছে। সাইকেল ভাড়া নেয়ার আধুনিক ব্যবস্থা আছে। সল্টলেকেও প্রচুর সাইকেল চলে। এই দুই জায়গা বাদ দিলে শহরের অধিকাংশ জায়গার ছবি আশা জাগায় না।
মিল্টন ওঝার অভিজ্ঞতা
একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী মিল্টন ওঝা সাইকেল ব্যবহার করেন। তিনি ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ''অনেক সময় বুঝতে পারি না, কোন রাস্তায় সাইকেল নিষিদ্ধ। সেখানে ঢুকে পড়লে পুলিশ একশ টাকা জরিমানা নেয়। কখনো সাইকেল নিয়ে চলে যায়।''
শতঞ্জীবের বক্তব্য
কলকাতার সাইকেল মেয়র শতঞ্জীব গুপ্ত। তিনি বলেছেন, ''সাইকেল ব্যবহার করলে যে কলকাতার ভয়ংকর যানজটের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়, সেটাই মানুষ বুঝতে পারলো না।''
দৃষ্টান্ত গোলাপ
গোলাপ দাশগুপ্ত ৫২ বছর বয়সে সাইকেল চালানো শুরু করেন। একটা দুর্ঘটনার পর তার পিঠের ব্যথা সারানোর জন্য তিনি সাইকেল হাতে তুলে নেন। এখন তিনি একান্তভাবে সাইকেল-অনুরাগী।
পুলিশের চালান
কলকাতায় সাইকেল চালাতে গেলে মানুষ ভয়ে থাকেন। সাইকেল-নিষিদ্ধ রাস্তায় ঢুকে পড়লেই পুলিশের হাতে পড়তে হবে। একশ টাকা জরিমানা দিতে হবে। এমনই একজনকে জরিমানা করছে পুলিশ।
কেন সাইকেল-বান্ধব হবে না কলকাতা?
আসলে কলকাতার মুশকিলও আছে। একে রাস্তা কম। অনেক রাস্তা আদৌ চওড়া নয়। অধিকাংশ রাস্তার ফুটপাথ দখল হয়ে গেছে। সেখানে হকাররা বসে আছেন। পথচারীরা রাস্তায় নেমে হাঁটেন। ফলে গাড়ি, মোটরসাইকেল, বাস, মিনিবাস, ম্যাটাডোর অনেক সময় নিয়ম না মেনে যেখানে সেখানে দাঁড়ায়। ফলে বড় রাস্তায় সাইকেল চালানোর ঝুঁকি প্রচুর।
তাহলে উপায়?
সাইকেলপ্রেমীরা বলেন, একমাত্র উপায় হলো, যে সব জায়গায় সাইকেল চালানো সম্ভব, সেখানে মানুষ যাতে সাইকেলকে আঁকড়ে ধরেন, তার প্রচার করা। এলিটের দৃষ্টিভঙ্গি বদল করে শহরের নতুন জায়গাগুলিকে সাইকেলবান্ধব করা এবং পরিবেশের জন্য স্বাস্থ্যের জন্য এই সাইকেলকে বরণ করে নেয়ার ব্যবস্থা করা। এককথায় মানসিকতার বদল ঘটানো।