1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কর্মক্ষেত্রে কতটা নিরাপদ শ্রমিকরা?

সমীর কুমার দে ঢাকা
২৪ এপ্রিল ২০২১

গার্মেন্টস, নির্মাণ শিল্প, যানবাহন, জাহাজ ভাঙা শিল্প, ট্যানারিসহ আরো অনেক পেশাতেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয় শ্রমিকদের৷

https://p.dw.com/p/3sW6X
Bangladesch Textilfabrik Dhaka
ছবি: Reuters/A. Biraj

আট বছর আগে সাভারে রানা প্লাজা নামে একটি ভবন ধ্বসে পড়ে৷ এই ভবনটিতে গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অফিস ছিল৷ ঘটনার সময় ওই ভবনে অবস্থান করা এক হাজার ১৩৫ জন মারা যান৷ পঙ্গুত্ব বা মানসিক ট্রমা নিয়ে বেঁচে আছেন আরো প্রায় এক হাজার মানুষ৷ এদের অধিকাংশই গার্মেন্টস শ্রমিক৷ এই রানা প্লাজা ধ্বসের পর শ্রমিকদের কর্মপরিবেশের বিষয়টি সামনে আসে৷ বিশেষ করে গার্মেন্টস শ্রমিকদের ক্ষেত্রে৷ তবে আশার কথা ওই ঘটনার পর পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নে নিয়োজিত বিদেশি ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের তত্ত্বাধানে এখন অধিকাংশ গার্মেন্টসের কর্মপরিবেশ অনেকটাই ভালো৷ যেটা শ্রমিক, শ্রমিক নেতা এবং গার্মেন্টস মালিকরা স্বীকার করেছেন৷

শুধু গার্মেন্টসনয়, আরো অনেক পেশাতেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয় শ্রমিকদের৷ নির্মাণ শিল্প, যানবাহন, জাহাজ ভাঙা শিল্প, ট্যানারিসহ এমন অনেক পেশাতে অবশ্য কোন পরিবর্তনই আসেনি৷ ফলে সেই সব জায়গায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন শ্রমিকরা৷ শ্রমিকদের জীবনের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি বলা হয় পরিবহনে৷ এরপরই নির্মাণ শিল্প৷ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের তথ্য মতে, ২০০২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরে নিহত হয়েছেন ১ হাজার ৬৭৭ নির্মাণশ্রমিক৷ অর্থাৎ বছরে ১০০ জনেরও বেশি৷ প্রতিষ্ঠানটির তথ্যমতে, বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ এই পেশায় কাজ করছেন প্রায় ৩৭ লাখ শ্রমিক৷

রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় নির্মানাধীন একটি ব্যক্তিমালিকানাধীন ভবনে কাজ করছেন নির্মাণ শ্রমিক নুরুন্নবী৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘আমরা এখন মালিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি জোর দিয়েই বলি৷ বছর চারের আগে মতিঝিলে একটি ভবনে কাজ করার সময় পাশ থেকে একজন পড়ে গিয়ে মারা গেছেন৷ সেই থেকে আমি অনেক বেশি সচেতন৷'' অন্য পেশাতে না গিয়ে কেন এই ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় এসেছেন? জানতে চাইলে নুরুন্নবী বলেন, ‘‘আসলে শিখেছিই এই কাজ, অন্য কাজ করব কিভাবে? অন্য পেশাতে যেতে চাইলেও তো আমাকে কেউ কাজে নেবে না৷ ফলে বাধ্য হয়েই এটা করি৷''

‘‘রিহ্যাবের সদস্য প্রতিষ্ঠানে দুর্ঘটনা ঘটলে শ্রমিককে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়’’: আলমগীর শামসুল আলামিন

নির্মান শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ ঝুঁকিমুক্ত করতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেয় রিয়েল এস্টেট হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)৷ সংগঠনের সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, আমরা শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছি৷ এ পর্যন্ত ২১ হাজার শ্রমিককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে৷ তবে রিহ্যাব সভাপতি স্বীকার করেন, তাদের সংগঠনের বাইরেও বহু নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আছে৷ যাদের প্রতিষ্ঠানে দুর্ঘটনা ঘটলে শ্রমিকরা ঠিকমতো ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না৷ রিহ্যাবের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে প্রতি শ্রমিককে ২ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়৷

বর্তমানে গার্মেন্টসে শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ কেমন? জানতে চাইলে বাংলাদেশ গার্মেন্টস এন্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি কল্পনা আক্তার ডয়চে ভেলে বলেন, ‘‘এটা আগের তুলনায় ভালো৷ অ্যাকর্ডের তত্ত্বাবধানে এক হাজার ৬০০ কারখানার সংস্কার সম্পন্ন হয়েছে৷ এসব প্রতিষ্ঠানে ২০ লাখ শ্রমিক কাজ করেন৷ তবে পুরোপুরি সব কারখানা ঝুঁকিমুক্ত হয়েছে সেটা নিশ্চিত করে বলা যাবে না৷ তবে এটা বলা যায়, আগের চেয়ে কর্মপরিবেশ অনেক ভালো হয়েছে৷'' গার্মেন্টস শ্রমিক বীথি আক্তারও বলছেন, আগের চেয়ে এখন ভেতরে পরিবেশ অনেক ভালো৷ তিনি যে ভবনটিতে কাজ করেন সেটাতেও নিরাপত্তার সব ধরনের ব্যবস্থা আছে৷ তারপরও কিছুটা ঝুঁকি তো থাকবেই৷

গার্মেন্টস মালিকরাও বলছেন, রানা প্লাজার ঘটনার পর ফ্যাক্টরিগুলোও আমূল পরিবর্তন এসেছে৷ বিজিএমইএর সাবেক সহ-সভাপতি ও পশমি সোয়েটার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউল আজম সজল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সরকারের সঙ্গে অ্যাকর্ড ও বিজিএমইএ একসঙ্গে কাজ করেছে৷ এখন আপনি বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত একটি ফ্যাক্টরিও দেখাতে পারবেন না, যেখানে কর্মপরিবেশ ভালো নয়৷ আর ফ্যাক্টরি দেখেই তো বায়াররা কাজ দিচ্ছেন৷ ফলে ফ্যাক্টরিতে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে কোন ফ্যাক্টরিতো বিদেশী বায়ারদের কাছ থেকে কাজই নিতে পারবে না৷''

‘‘সব কারখানা ঝুঁকিমুক্ত হয়েছে তা নিশ্চিত করে বলা যাবে না’’: কল্পনা আক্তার

শ্রমিকদের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ আরেকটি পেশার কথা বলা হচ্ছে চামড়া শিল্প৷ সারাদেশে চামড়া নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান আছে প্রায় ১ হাজার৷ এর মধ্যে চামড়াজাত বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে ২৩টি এবং মাঝারি প্রতিষ্ঠান ১০০টির মতো৷ এর মধ্যে লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (এলএফএমইএবি) সদস্য ১৫০টি ইউনিটে কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা ৫৩ হাজারেরও বেশি৷ তাদের সবাইকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয়৷ প্রতিনিয়তই তারা নানা ধরনের রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হলেও মালিকরা কোন খোঁজ নেন না৷

তবে বাংলাদেশ ট্যানারি এসোসিয়েশনের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু সাঈদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা সবসময় শ্রমিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে কাজ করি৷ তারা আমাদের যেভাবে বলে আমরা সেভাবেই শ্রমিকদের খোঁজ খবর নেই, চিকিৎসার ব্যবস্থা করি৷''

অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ আরেকটি পেশা জাহাজ ভাঙা শিল্প৷ পুরনো জাহাজে থাকে নানান বিষাক্ত দ্রব্য, যা কর্মীদের ফুসফুস ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়৷ এছাড়া অন্যান্য কারখানার কর্মস্থলে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে৷ এতে প্রাণও হারাচ্ছেন অনেক শ্রমিক৷ কিন্তু শ্রমিকরা প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না৷ এ কারণে দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের অনেককেই দুর্বিষহ জীবন কাটাতে হচ্ছে৷ অনেকে সারাজীবনের জন্য পঙ্গুত্ববরণ করছেন৷ এমনকি তাদের খোঁজও নেন না মালিকপক্ষের কেউ৷