1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনায় বদলে যাচ্ছে ভারতীয় সংসদের চেহারা

গৌতম হোড় নতুন দিল্লি
২৫ আগস্ট ২০২০

করোনা বদলে দিচ্ছে ভারতীয় সংসদকেও। এই প্রথম সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বসবেন সাংসদরা। প্রতিদিন স্যানিটাইজ করে সংসদের অধিবেশন হতে চলেছে।

https://p.dw.com/p/3hTtR
ছবি: picture-alliance/dpa

সেই ১৯৫২ থেকে এ পর্যন্ত কখনো এই দৃশ্য দেখেনি ভারতীয় সংসদ। রাজ্যসভা বা লোকসভার অধিবেশন এতদিন হয়েছে তাদের জন্য নির্দিষ্ট অর্ধচন্দ্রাকার কক্ষে। কিন্তু এই প্রথম সেই অধিবেশন কক্ষের বাইরেও বসতে হবে সাংসদদের। লোকসভা ও রাজ্যসভার গ্যালারিতেও সাংসদরা বসতে পারেন। বসতে পারেন সংসদ ভবনের সেন্ট্রাল হলে বা অন্যত্র।

নিয়ম অনুসারে, ২২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে লোকসভা ও রাজ্যসভার অধিবেশন ডাকতে হবে। কারণ, দুইটি অধিবেশনের মধ্যে ব্যবধান ছয় মাসের বেশি হতে পারে না। বাজেট অধিবেশন শেষ হয়েছিল ২৩ মার্চ। তাই ২২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাদল অধিবেশন করতে হবে।  সূত্র জানাচ্ছে, সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের শেষে বা তৃতীয় সপ্তাহে অধিবেশন ডাকা হতে পারে। তখনও করোনার প্রকোপ যথেষ্ট থাকবে। ফলে মানতে হবে সামাজিক দূরত্বের বিধি। লোককসভা, রাজ্যসভা থেকে শুরু করে মন্ত্রীদের চেম্বার, রাজনৈতিক দলের অফিস, লাইব্রেরি স্যানিটাইজ করার ববস্থা করা হচ্ছে। 

লোকসভা ও রাজ্যসভায় এখন রীতিমতো ঠাসাঠাসি করে বসেন সাংসদরা। ফলে সামাজিক দূরত্বের বিধি মানতে হলে লোকসভা বা রাজ্যসভায় সাংসদদের বসার জায়গা অন্ততপক্ষে এক তৃতীয়াংশ বা তারও বেশি কমাতে হবে। তা হলে বাকি সাংসদরা বসবেন কোথায়? এই সমস্যার সমাধান করতে লোকসভার স্পিকার, রাজ্যসভার চেয়ারম্যান এবং সংসদে আধিকারিকরা বৈঠক করেছেন, প্রচুর আলোচনা করেছেন। বিভিন্ন প্রস্তাব নিয়ে কথা হয়েছে।

স্পিকার, চেয়ারম্যান বা সরকারের তরফ থেকে এখনো কিছু জানানো না হলেও, যে পরিকল্পনা সব চেয়ে বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে, তা হলো, লোকসভা ও রাজ্যসভার অধিবেশন প্রতিদিন চার ঘণ্টার জন্য বসবে। ধরা যাক সকাল নয়টা বা সাড়ে নয়টায় রাজ্যসভার অধিবেশন বসল। সেই অধিবেশনে রাজ্যসভা, লোকসভা ও সেন্ট্রাল হল মিলিয়ে সাংসদরা বসলেন। পরে একটা থেকে দেড়টার মধ্যে অধিবেশন শেষ হলো। তারপর দেড় ঘণ্টা ধরে স্যানিটাইজ করতে লাগবে। বেলা তিনটে থেকে আবার লোকসভা বসবে। দ্বিতীয় বিকল্প হলো, রাজ্যসভার অধিবেশন রাজ্যসভাকক্ষ ও সেন্ট্রাল হলে হোক। লোকসভার অধিবেশন লোকসভাকক্ষ ও বালয়োগী অডিটোরিয়ামে করা যেতে পারে। প্রতিটি জায়গায় বিশাল স্ক্রিন, সাউন্ড সিস্টেম বসানো হয়েছে। এমনকী প্রয়োজনে লোকসভা ও রাজ্যসভার গ্যালারিতেও যাতে সাংসদরা বসতে পারেন, তার ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে। মোদ্দা কথা, যে পরিকল্পনাই নেয়া হোক না কেন, এই প্রথম, লোকসভা ও রাজ্যসভার অধিবেশন দুই কক্ষের বাইরেও যাবে।

তাছাড়া থাকবে স্যানিটাইজেশনের ব্যবস্থা। ইউভি রে দিয়ে জীবানুনাশ করার ব্যবস্থা। প্রাক্তন সাংসদদের আসতে মানা করে দেয়া হয়েছে। সাংবাদিকদের যাঁদের পার্মানেন্ট কার্ড আছে তাঁরাই ঢুকতে পারবেন। তবে লোকসভা গ্যালারিতে ১৫ জন ও রাজ্যসভা গ্যালারিতে সাতজন সাংবাদিক ঢুকতে পারবেন। সাংসদদের বলে দেয়া হবে, অধিবেশন হয়ে গেলে, তাঁরা যেন দ্রুত চলে যান। তবে করোনার ভয়ে অনেক সাংসদ অনুপস্থিত থাকবেন, সেই সম্ভাবনাও প্রবল।

অনেক ঐতিহাসিক অধিবেশন দেখেছে সংসদ ভবন। ১৯৫২ সালে প্রথম নির্বাচনের পরে প্রথম অধিবেশন। পঞ্চাশ বর্ষপূর্তির বিশেষ অধিবেশন। প্রচুর ঐতিহাসিক বিল পাস হয়েছে। অসাধারণ সব বিতর্ক হয়েছে। নেহরু, প্যাটেল, ইন্দিরা গান্ধী, লালবাহাদুর শাস্ত্রীর মতো প্রধানমন্ত্রী, জ্যোতির্ময় বসু, ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত, জর্জ ফার্নান্ডেজ, বাজপেয়ীর মতো অসাধারণ বক্তা বলেছেন। কিন্তু কখনো এই ধরনের অবস্থা হয়নি। সাংসদদের কক্ষচ্যূত হতে হয়নি। করোনা সেটাও করে দেখিয়ে দিল। তাই এই অধিবেশনও ঐতিহাসিক হতে চলেছে।