1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনায় প্রবাসীদের ‘বন্দি জীবন’

১৩ নভেম্বর ২০২১

ছুটির দিনগুলোতে জনাকীর্ণ ডর্মের বাইরে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে সময় কাটাতেন মো. শরীফ উদ্দিন৷ কিন্তু করোনার কারণে গত আঠারো মাস ধরে অবসরও ছোট্ট ঘরের কোণে কাটাতে হচ্ছে তার৷

https://p.dw.com/p/42xVc
সিঙ্গাপুরে অনেক অভিবাসী শ্রমিক কাজ করেন (ফাইল ফটো)ছবি: Reuters/E. Su

সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন ডর্মে বসবাস করেন তিন লাখের মতো অভিবাসী কর্মী, যাদের অনেকেই এসেছেন বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে৷ তারা সাধারণত এক রুমে অনেকে মিলে আলাদা আলাদা বাঙ্ক বিছানায় থাকেন৷

করোনা মহামারির শুরুর দিকেই এসব ডর্মে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে সেগুলোতে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়৷ তখন কার্যত পুরো সিঙ্গাপুরেই করোনারোধে নানা নিয়মকানুন কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হয়৷ 

সাম্প্রতিক সময়ে অবশ্য সেসব বিধিনিষেধ অনেকটা তুলে নেয়া হয়েছে৷ বিশেষ করে সিঙ্গাপুরের নাগরিকদের মধ্যে যারা করোনা টিকা নিয়েছেন, তারা কেনাকাটা করাসহ রেস্তোরাঁয় এমনকি চুল কাটার দোকানেও যেতে পারছেন৷

তবে, এখানে একটি বৈষম্য পরিষ্কার৷ নিম্নআয়ের অভিবাসী শ্রমিকদের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তেমন একটা তোলা হয়নি৷ অধিকাংশ সময় তাদের শুধু বাসা থেকে কাজে যাওয়ার আর সেখান থেকে ফেরার সুযোগ দেয়া হচ্ছে৷

‘‘এক বেদনাদায়ক জীবন পার করছি... অনেকটা জেলের মতো,'' বলেন উদ্দিন৷ করোনার আগে ছুটির দিনগুলোতে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরে বেড়াতে পারতেন তিনি৷ কফির কাপে চুমুক দিয়ে কবিতা আবৃত্তি আর নানা গল্পে কেটে যেতো সময়৷

‘‘আমাদেরকে এখন শুধু কাজে যেতে এবং বাসায় ফিরতে অনুমতি দেয়া হয়েছে৷ অন্য কোথাও যাওয়ার সুযোগ নেই৷ এটা অনেকটা হাউজ এরেস্টে থাকার মতো ব্যাপার,'' বলেন ৪৩ বছর বয়সি এই বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মী৷

১৩ বছর ধরে সিঙ্গাপুরে বসবাস করছেন তিনি৷ প্রবাস জীবন নিয়ে ইতোমধ্যে দু'টি বইও লিখেছেন উদ্দিন৷

অভিবাসী শ্রমিকরা কাজে যাওয়ার বাইরে মাঝেমাঝে বিশেষভাবে নির্মিত ‘বিনোদনকেন্দ্রে' যেতে পারেন যেগুলো কোনো একটি চত্বরে দোকান এবং খেলাধুলার ব্যবস্থা করে তৈরি করা হয়৷

সিঙ্গাপুরে বহুতল ভবন গড়া থেকে শুরু করে শহরটি পরিষ্কার রাখা ও গণপরিবহনের দেখভাল করার দায়িত্ব মূলত অভিবাসী শ্রমিকরা পালন করলেও তাদের জীবনমানের উন্নয়নে দেশটির উদাসীনতা রয়েছে৷ এই নিয়ে নানা সময় অভিযোগ তুলেছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা৷

সরকার অভিবাসী শ্রমিকদের আবাসস্থলের আধুনিকায়ন এবং তাদের জন্য আরো বেশি জায়গা বরাদ্দের কথা বলছে৷ কিন্তু বাস্তবে নানা নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই থাকতে হচ্ছে এই কর্মীদের৷ বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল দেশটিতে এসব মানুষের মাসিক গড় আয় ৩৭০ থেকে ৭৪০ মার্কিন ডলার৷ 

সিঙ্গাপুরে অভিবাসী শ্রমিকদের মুক্তির আনন্দ

অভিবাসীদের অধিকার বিষয়ক গোষ্ঠি ‘ট্রানসিয়েন্ট ওয়ার্কার্স কাউন্ট টু' এর ভাইস প্রেসিডেন্ট এলেক্স আউ বলেন, ‘‘আমাদের সরকার তাদের (অভিবাসী শ্রমিক) পুরোপুরি মানুষ হিসেবে বিবেচনা করে না৷''

সিঙ্গাপুরি কর্তৃপক্ষ অভিবাসীদের ‘‘একটি অর্থনৈতিক পণ্য'' হিসেবে দেখে এবং দেশটির নাগরিকদের মতো সমান অধিকার বা স্বাধীনতা দেয় না বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷

সিঙ্গাপুর সরকার অবশ্য তীব্র সমালোচনার মুখে অভিবাসীদের বিনোদনের জন্য কিছু উদ্যোগ নিলেও জানিয়েছে যে বাংলাদেশ, ভারত এবং চীনের মতো দেশগুলো থেকে আসা শ্রমিকদের উপর নিষেধাজ্ঞা বজায় থাকবে কেননা তারা যেখানে, যেভাবে বসবাস করেন, তাতে করোনা ছড়ানোর ঝুঁকি বেশি৷

এআই/এসএস (এএফপি)