করোনায় ক্ষুধার্তদের বাঁচাচ্ছে শিখ মন্দির
ভারতে করোনা পরিস্থিতিতে দিল্লির শিখ সম্প্রদায় প্রতিদিন লাখো মানুষকে খাওয়াচ্ছেন। বিস্তারিত জেনে নিন ছবিঘরে।
দিল্লির ঐতিহাসিক গুরুদুয়ারা
ভারতে অন্তত দুই কোটি ১০ লাখ শিখের বাস। দেশটির চতুর্থ বৃহত্তম ধর্ম এটি। শিখ ধর্মের অন্যতম স্তম্ভ হলো সেবা। শিখ মন্দিরকে বলা হয় গুরুদুয়ারা। কোটি মানুষের মাঝে বিনামূল্যে খাবার বিতরণ করা হয় গুরুদুয়ারাগুলোতে।
করোনাকালে বিধিনিষেধ
করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় মার্চ মাস থেকে গুরুদুয়ারাগুলো বন্ধ রাখা হয়েছিল।তবে এ কারণে কোনো ভক্তের সমাগম না থাকলেও নিয়মিত প্রার্থনা আর সেবাদান অব্যাহত রেখেছিলেন গুরুদুয়ারার কর্মীরা। জুন মাসে ভারতে সব উপাসনালয় খুলে দেয়া হয়। এরপর থেকে মন্দিরে ঢুকতে শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা, হাত পরিষ্কার এবং মাস্ক বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
শিখ সম্প্রদায়ের রান্নাঘর
শিখ দর্শন অনুযায়ী, বিশ্বাসীরা কখনোই খালি হাতে বাড়ি ফিরবে না। গুরুদুয়ারাতে গেলে তিনটি জিনিস পাওয়া যাবে: শিখ গুরুর শিক্ষা, প্রসাদ (ময়দার পিঠা) এবং তিন বেলার খাবার।
প্রতিদিন লাখো মানুষের খাবার
প্রতিদিন ভোর তিনটায় রান্নাঘর খোলা হয়। এরপর এক লাখ মানুষের খাবার তৈরির প্রস্তুতি শুরু হয়। নারী-পুরুষ মিলে ডাল, রুটি এবং ভাত রান্না করেন। দিল্লি শিখ গুরুদুয়ারা ম্যানেজমেন্ট কমিটি এবং শিখ সম্প্রদায়ের ভক্তদের দানে চলে এই বিশাল আয়োজন।
২০টি স্থানে খাবার প্রদান
খাবার ভর্তি ট্রাক দিল্লি পেরিয়ে নয়ডা এবং গাজিয়াবাদে পৌঁছে যায়। কোন এলাকায় বেশি ক্ষুধার্ত মানুষ থাকতে পারে সেই ভিত্তিতে স্থান চিহ্নিত করে সেখানে গিয়ে খাবার পরিবেশন করা হয়। সরকারি কর্মকর্তা এবং স্থানীয় এনজিওগুলোর কাছ থেকেও লাখো মানুষকে খাবার দেয়ার অনুরোধ আসে তাদের কাছে।
দুস্থ মানুষের জন্য খাবার
শিখদের জন্য সবচেয়ে বড় পুণ্যের কাজ হলো দুস্থদের সাহায্য করা। ট্রাকে খাবার ভরার সময় গুরুদুয়ারার বাইরে দুস্থদের লম্বা লাইন দেখা যায়। খাবারের জন্য অপেক্ষা তাদের। তরুণ, তরুণী, পথশিশু, প্রতিবন্ধী, প্রবীণ সবাই আসেন খাবারের জন্য। করোনার কারণে কাজ হারিয়েছেন এমন অনেক মানুষও আসেন।
সুন্দর-সংগঠিত একটি প্রক্রিয়া
দু’টো লাইন করা হয়-একটি পুরুষদের জন্য, অন্যটি নারী, প্রতিবন্ধী এবং বয়স্কদের জন্য। খাবার পরিবেশনের প্রক্রিয়াটি বেশ গোছানো। কিন্তু ১৩০ কোটি মানুষের দেশে সামাজিক দূরত্ব মানা খুবই কঠিন ব্যাপার।
প্রখর তাপে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে
এমন অনেকেই আসেন যাদের দিনে এই একবারই খাওয়া হয় এবং সেটা এখানে। এমনকি অনেকেই পরিবার-পরিজনের মধ্যে যারা এখানে আসতে সক্ষম নন তাদের খাবার নেয়ার জন্যও প্যাকেট নিয়ে আসেন। গুরুদুয়ারার ট্রাক এমন সব জায়গায় পৌঁছে যায় যেখানে সরকারি এবং ত্রাণ সংস্থাগুলো পৌঁছতে পারে না।