1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনার সময়ের খেলাধুলা

নোমান মোহাম্মদ ঢাকা
২ অক্টোবর ২০২০

গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের ওই বইটির স্প্যানিশ নাম আমাদের জন্য বেশ খটোমটো, ‘এল আমোর এন লোস তিম্পোস দেল কোলেরা’৷ ইংরেজী অনুবাদটা বরং বোধগম্য, ‘লাভ ইন দ্য টাইম অব কলেরা’৷ কলেরার সময়ের ভালোবাসা৷

https://p.dw.com/p/3jJwZ
২৩ আগস্ট লিসবনে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল ম্যাচের দৃশ্যছবি: Imnago Images/P. Schatz

 শতবর্ষ আগের সময়টায় ওই রোগের প্রাদুর্ভাব প্রবলভাবে ছিল পৃথিবীতে৷ এখন যেমন করোনা৷

করোনার কারণে বদলে গেছে পুরো বিশ্ব৷ ক্রীড়াবিশ্বও এর বাইরে থাকে কী করে! ‘স্পোর্টস ইন দ্য টাইম অব করোনা’-র সঙ্গে আগের সময়টার তো মিল নেই কোনো! বিশুদ্ধ বিনোদনের এই জায়গায় মানুষের ভালোবাসা অফুরান৷ কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বর্তমান বাস্তবতা মেনে সেই ‘মানুষ’ই যেন হয়ে পড়ছে ব্রাত্য৷

কিভাবে? দর্শকবিহীন স্টেডিয়ামে খেলা চালু করা এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ৷ অবশ্যই সেটি করোনাকালীন সময়ের স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনা করেই৷

ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এক ভাইরাস অদ্ভুত আঁধার নিয়ে এসেছে গোটা পৃথিবীতে৷ ক্যানভাসটা ছোট করে ক্রীড়াঙ্গনে, আরো ছোট করে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে নিয়ে এলেও সেই অন্ধকারের ছায়া৷ সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা যে ক্রিকেট, সেটি মাঠে ফেরানো যাচ্ছে না কিছুতেই৷ জাতীয় দলের শ্রীলঙ্কা সফরটিও তো বাতিল হয়ে গেল একই কারণে৷

অথচ এ সিরিজ নিয়ে প্রত্যাবর্তনের কী রোমাঞ্চই না খেলা করছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গনে! করোনার কারণে খেলা বন্ধ সেই মার্চ থেকে৷ স্থগিত হয়েছে একের পর এক সিরিজ; বিশ্বকাপ ও এশিয়া কাপের মতো টুর্নামেন্ট৷ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজও স্থগিত হয়ে ছিল৷ সেটি পুনরায় আয়োজনের চেষ্টা অক্টোবরে-নভেম্বরে৷ দুই দেশের ক্রিকেট বোর্ডের মতৈক্য ছিল, কিন্তু বাধ সাধে শ্রীলঙ্কায় কোভিড১৯ নিয়ন্ত্রণের জন্য গঠিত টাস্কফোর্স৷ সে দেশ সফরে ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে ছাড় দিতে রাজি নয় এক বিন্দু৷ সেটি আবার ক্রিকেটারদের মাঠের খেলার প্রস্তুতিতে বড় বাধা বলে মনে করেছে বিসিবি৷ বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন সে খবর জানিয়ে সিরিজটি ভবিষ্যতে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে সুবিধাজনক সময়ে আয়োজনের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন৷

কিন্তু সে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে কবে ফিরবে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন?

ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক সিরিজ হচ্ছে না সহসা৷ ঘরোয়া ক্রিকেট তাই চালু করতে চায় বিসিবি৷ করোনা পরিস্থিতিতে সেটিও হবে মহা চ্যালেঞ্জিং৷ আবার ক্রিকেটাররা এত দিন খেলার বাইরে থাকলে তাঁদের দক্ষতায় যে মরচে ধরবে, সে দুশ্চিন্তাও তো রয়েছে৷ আরেক চিন্তার কারণ, বাংলাদেশ শুরু করতে না পারলেও বিশ্ব ক্রিকেট তো ফেরার পর ঠিকই খুঁজে নিচ্ছে৷ ইংল্যান্ডে গিয়ে সিরিজ খেলে এসেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়া৷ নিজেদের দেশের পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় সংযুক্ত আরব আমিরাতে আইপিএল আয়োজন করছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড৷ তবে এ সব খেলাই হচ্ছে দর্শকবিহীন স্টেডিয়ামে৷ অবশ্য দীর্ঘ বিরতির পর টেলিভিশনে খেলা দেখার আনন্দও তো কম নয় দর্শকদের৷ অর্থপ্রবাহে স্পন্সরদের চাপে খেলা আয়োজন করা হচ্ছে, এ ‘অপবাদ’ সত্ত্বেও!

বাংলাদেশের ফুটবলপাড়া এখন ব্যস্ত নির্বাচন নিয়ে৷ করোনায় গিলে খেয়েছে পেশাদার ফুটবল লিগের একটি মৌসুম৷ বাতিল হয়েছে আন্তর্জাতিক ম্যাচও৷ আগামী ডিসেম্বর থেকে ফেডারেশন কাপ দিয়ে ঘরোয়া ফুটবল চালু হবার কথা৷ অবশ্য ততদিনে শীত জাঁকিয়ে বসবে এই ব-দ্বীপে৷ আর শীতের সময় করোনার দ্বিতীয় সংক্রমণের আশঙ্কা করা হচ্ছে দেশের শীর্ষমহল থেকে৷ ফুটবল তাই কবে মাঠে গড়াবে আবার, সেটি ভীষণ অনিশ্চিত৷

অনিশ্চয়তার সেই ঢেউ ঠেলে ইউরোপিয়ান ফুটবল ফিরেছে মাঠে৷ শীর্ষ লিগগুলোর মধ্যে পথ দেখিয়েছে জার্মান বুন্ডেসলিগা৷ স্থগিত হওয়া গত মৌসুমের খেলা সবার আগে শুরু করে তারা৷ এরপর ইংল্যান্ড, ইতালি, স্পেন সব দেশের লিগ শেষ করা হয়েছে৷ ফ্রান্সের মৌসুমটি অবশ্য বাতিলই ঘোষণা করা হয়৷ মৌসুমটা টেনে লম্বা করে চ্যাম্পিয়নস লিগ, ইউরোপা লিগও শেষ করা হয়৷ আর এ সবই দর্শকবিহীন স্টেডিয়ামে৷

দুই মৌসুমের মাঝে আড়াই-তিনমাসের বিরতি থাকে৷ এবার সেটি হওয়ার জো ছিল না৷ বিরতির সময় কমিয়ে আবার ফুটবলাররা নেমে গেছেন মাঠে; নতুন মৌসুমে৷ দর্শক-সমর্থনহীন মাঠে খেলার সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন ক্রমশ৷ বার্সেলোনার সমর্থকরা অবশ্য তাতেও বোধকরি খুশি৷ অন্তত লিওনেল মেসিহীন বার্সেলোনার সঙ্গে তো আর অভ্যস্ত হতে হচ্ছে না৷

ফিরতে শুরু করেছে অন্যান্য খেলাও৷ টেনিসের গ্র্যান্ডস্লাম ইভেন্ট ইউএস ওপেন যেমন হয়ে গেল৷ তবে তাতে অংশ নেননি পুরুষ ও মহিলা এককের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন রাফায়েল নাদাল ও বিয়াঙ্কা আন্দ্রেস্কু৷ কোভিড-১৯ মহামারির স্বাস্থ্যঝুঁকি কারণে প্রথমজন এবং পরেরজন সে কারণেই যথাযথ প্রস্তুতি না নিতে পারায়৷ ডমিনিক থিয়েম ও নাওমি ওসাকা হয়েছেন ইউএস ওপেনের নতুন রাজা-রানি৷

বাংলাদেশেও কোভিড১৯ পরিস্থিতি সামলে ফেরার চেষ্টায় অন্যান্য খেলা৷ দাবা অলিম্পিয়াড যেমন হয়ে গেল অনলাইনে৷ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের জিমনেসিয়ামে তায়াকোয়ান্দো ফিরেছে৷ ক্যাম্প হচ্ছে শ্যুটিং ও আর্চারির৷ কিন্তু সব কিছু স্বাভাবিক হতে নিশ্চয়ই সময় লাগবে আরো৷

কত সময়? কলেরার সময়ের ভালোবাসা নিয়ে মার্কেজের যে উপন্যাস, এর ঘটনার ব্যাপ্তিকাল ৫০ বছরেরও বেশি৷ এবার করোনার ধাক্কা পৃথিবীকে নিশ্চয়ই এত দিন সইতে হবে না! বরং ভালোবাসার ক্রীড়াঙ্গন অচিরে ফিরবে গমগমে স্বরূপে- এমন প্রত্যাশাই দর্শক-সমর্থকদের৷