1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে সাহায্য করতে পারে আলপাকা

২৩ মে ২০২২

করোনা মহামারি মোকাবিলায় বিজ্ঞানীরা কী না করেছেন! যথেষ্ট দ্রুত একাধিক টিকা ও কিছু ওষুধ বাজারে আসায় অনেক মানুষের প্রাণ বাঁচানো গেছে৷ দক্ষিণ অ্যামেরিকার এক প্রাণী এ ক্ষেত্রে আরো কার্যকর সমাধানসূত্র দিতে পারে৷

https://p.dw.com/p/4Bjpq
ছবি: Leandro Pinto Le Roux/DW

প্রথম দৃষ্টিতে দক্ষিণ অ্যামেরিকার এই আলপাকা সাধারণ প্রাণী মনে হবে৷ কিন্তু বিজ্ঞানীদের ধারণা, করোনা ভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় সেটি আমাদের সহায়তা করতে পারে৷ চিলির দক্ষিণে ভালদিভিয়ায় আউস্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ১৯টি আলপাকা বাস করে৷

বায়োকেমিস্ট হিসেবে আলেহান্দ্রো রোহাস আলপাকা নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন৷ তিনি একটি প্রাণী দেখিয়ে বলেন, ‘‘এই নর আলপাকার নাম বুদ্ধ৷ সেটি ওমিক্রন-সহ একাধিক কোভিড-১৯ প্রজাতি কাবু করার অ্যান্টিবডি তৈরি করেছে৷'' 

করোনা, নিপা ও হেন্দ্রা ভাইরাসের বিরুদ্ধে আলপাকার লড়াই

বিজ্ঞানীরা প্রথমে কোভিড-১৯ ভাইরাসের সারফেস প্রোটিন দিয়ে আলপাকার শরীরে টিকা দিয়েছিলেন৷ তারপর তাঁরা এই প্রাণীর রক্তের নমুনায় করোনা কাবু করার অ্যান্টিভাইরাস খুঁজে পেলেন৷ ন্যানোবডি সাধারণ অ্যান্টিবডির তুলনায় অনেক ছোট৷ সেগুলির কাঠামোও কম জটিল এবং সহজেই বংশবৃদ্ধি ঘটানো যায়৷ ইস্ট কালচারেই সেটা করা সম্ভব৷ একমাত্র ক্যামেলিড গোষ্ঠীর প্রাণীই ন্যানোবডি সৃষ্টি করতে পারে৷ অর্থাৎ আলপাকা, লামা, উট বা ড্রোমেডারি৷ হাঙরেরও সেই ক্ষমতা রয়েছে৷

মহামারি শুরু হবার আগেই রোহাস ও তার টিম নতুন ধরনের ভাইরাস মোকাবিলার লক্ষ্যে এক উদ্যোগ শুরু করেন৷ কিন্তু অপ্রত্যাশিত এক অতিথির আবির্ভাবের আগে তাঁদের কাছে পরীক্ষা চালানোর জন্য কোনো কোনো প্রাণী ছিল না৷ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে রোহাস বলেন, ‘‘২০১৯ সালে এক বৌদ্ধ সন্যাসী আমাদের সহায়তা করতে এসেছিলেন৷ তিনি আমাদের চারটি আলপাকা দান করেন৷ একটির নাম বুদ্ধ৷ তাছাড়া দিলগো, তারা এবং পেদ্রোও আছে৷ সেগুলি শুধু সার্স-কোভ-২ ভাইরাস মোকাবিলার অ্যান্টিবডি সৃষ্টি করে নি, নিপা ও হেন্দ্রা ভাইরাসও কাবু করেছে৷ যেমন পেদ্রো৷''

এই গবেষণায় আলপাকার কোনো অনিষ্ট করা হয় না৷ বছরে একবার পশু চিকিৎসক সেগুলিকে টিকা দেন এবং সামান্য রক্তের নমুনা নেন৷ চিলির দক্ষিণে ভালদাভিয়ায় আউস্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল বায়োটেকনোলজি গবেষণাগারে রোহাস ও তাঁর টিম ৩০টি অ্যান্টিবডির পেটেন্ট নিয়েছেন, যেগুলি সরাসরি সার্স-কোভ-২ ভাইরাস কাবু করে৷ 

এখন তাঁরা আলপাকার অ্যান্টিবডি ব্যবহার করে কোভিড-১৯ নিরাময়ের ওষুধ তৈরি করতে চান৷ সেই লক্ষ্যে আলপাকার অ্যান্টিবডির সঙ্গে মানুষের অ্যান্টিবডির অংশ মেশাতে হয়, যাতে সেটি মানুষের ইমিউন সিস্টেমের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়৷ সেই ওষুধ ইনহেলার, নাকের স্প্রে কিংবা ইঞ্জেকশন হিসেবে নেওয়া যেতে পারে৷ ফলে কোভিড-১৯ গুরুতর আকার ধারণ করতে অথবা মৃত্যুর কারণ হতে পারবে না৷

কিন্তু এমন ওষুধ চূড়ান্ত করতে বিজ্ঞানীদের আর্থিক সহায়তার প্রয়োজন৷ এখনো পর্যন্ত চিলির সরকার অর্থায়নের আশ্বাস দেয় নি৷ আলেহান্দ্রো রোহাস মনে করেন, ‘‘এটা মোটেই শুধু সার্স-কোভ-২ মোকাবিলায় অ্যান্টিভাইরাস থেরাপি সৃষ্টির প্রচেষ্টা নয়৷ সেইসঙ্গে চিলির দক্ষিণের মতো প্রত্যন্ত এক অঞ্চলে আমরাও যে বিশ্বব্যাপী মহামারি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারি, সেটাও দেখানো সম্ভব৷''

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রায় তিন হেক্টর জমিতে আলপাকার নিজস্ব চারণক্ষেত্র রয়েছে৷ সেখানে এই প্রাণী ইচ্ছামতো চরতে, ঘুমাতে অথবা খোরাক খেতে পারে৷

বুদ্ধ ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের তারকা হয়ে উঠেছে৷ শুধু ইনস্টাগ্রামেই তার ফলোয়ারের সংখ্যা ১৭,০০০-এরও বেশি৷ রোহাস জানালেন, ‘‘আলপাকা মোনোক্লোনাল অ্যান্টিবডির বিকল্প এবং অনেক সস্তার সমাধানসূত্র দেয়৷ আগামী বছরগুলিতে আমরা এই প্রাণীর ইমিউন সিস্টেম থেকে তৈরি অনেক পণ্য বাজারে দেখতে পাবো৷''

প্রয়োজনীয় অর্থায়ন সম্ভভ হলে আলপাকা হয়তো চলমান এবং ভবিষ্যৎ মহামারি মোকাবিলায় আমাদের সহায়তা করতে পারবে৷

প্রতিবেদন: সোফিয়া বডেনব্যার্গ/এসবি