করোনার ঝুঁকিতেই মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা
করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের মধ্যেই শুক্রবার সকাল ১০টায় দেশব্যাপী মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ পরীক্ষার কেন্দ্রগুলিতে ছিল না স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই৷
আগেভাগেই রওনা
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের নির্দেশনা অনুযায়ী মেডিকেল ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীদের সকাল ৮ টার মধ্যেই কেন্দ্রে উপস্থিত থাকতে বলা হয়৷ এ জন্য দূরের পরীক্ষার্থীরা কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে ভোরেই রওনা দেন৷
শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি
পরীক্ষার নির্ধারিত সময়ের ঘণ্টা তিনেক আগেই বাসা থেকে রওনা দিয়েছেন অনেক শিক্ষার্থী৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রে যাওয়ার সময় রিক্সাতে বসেই বইয়ে চোখ বুলিয়ের নিচ্ছেন এক পরীক্ষার্থী৷
হলের দায়িত্বে চিকিৎসক
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় কেন্দ্রের হলগুলোর দায়িত্বে চিকিৎসকদেরও দেখা গেল৷ এর মধ্যে অনেক চিকিৎসকই আছেন, যারা হাসপাতালগুলোতে কোভিড ওয়ার্ডের দায়িত্ব পালন করছেন৷
পরীক্ষার্থীর চেয়ে অভিভাবক বেশি
ঢাকার নবাবগঞ্জ থেকে দুই মেয়েকে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রে সস্ত্রীক এসেছেন মানোয়ার পাঠান এবং মোতালেব মোল্লা৷ করোনার সময়ে এতজন কেন এসেছেন জানতে চাওয়ায় যেন বিব্রত হলেন তারা৷
অভিভাবকদের ক্ষোভ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের প্রবেশপথে দাঁড়িয়ে থাকা একাধিক অভিভাবক ক্ষোভের সাথে জানালেন, করোনার এই ঊর্ধ্বমুখী পরিস্থিতিতে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আরো দায়িত্বশীল আচরণ করতে পারতো৷ করোনার প্রকোপ কম থাকার সময় পরীক্ষা নেওয়া যেতো বলে মনে করেন তারা৷
স্বাস্থ্যবিধি কোথায়?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনে পরীক্ষার্থীদের সিট সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন হাজার৷ কেন্দ্রে প্রবেশের সময় পরীক্ষার্থীদের যে লম্বা সারি দেখা গেল, সেখানে সামাজিক দূরত্বের কোনো বালাই ছিল না৷ হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও অভিভাবকে পূর্ণ ছিল কলাভবনের প্রাঙ্গণ৷
ভিড় সামলাতে হিমশিম
পরীক্ষা কেন্দ্রের সীমানা প্রাচীরের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি থাকলেও সেখানে ছিল অভিভাবকদের উপচে পড়া ভিড়৷ কেন্দ্রের আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকা এক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে তাই বারবার সবাইকে কেন্দ্রের বাইরে যেতে অনুরোধ করতে দেখা যায়৷
জীবাণুনাশকের সীমিত ব্যবহার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের ভবনে গিয়ে জীবাণুনাশক ছিটাতে দেখা যায়নি৷ কারণ জানতে চাইলে কর্তব্যরত একজন আনসার সদস্য বলেন ‘‘কতজনকে ছিটানো সম্ভব, ভাই? আমাদের স্প্রে শেষ৷’’ কলাভবনে শুরুর দিকে স্প্রে দেওয়া হলেও পরে তাদের মজুদও শেষ হয়ে যায়৷
কঠোর নিরাপত্তা
কেন্দ্রে প্রবেশের মুখে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে পরীক্ষা করা হয়৷ শুধু প্রবেশপত্র এবং কলম ছাড়া পরীক্ষার্থীদের সাথে কিছুই নিতে দেওয়া হয়নি৷
বাধ্য হয়ে কোলের শিশুকেও ঝুঁকিতে ফেলা
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সামরিক বাহিনীতে কর্মরত একজন পরীক্ষাকেন্দ্রে এসেছেন স্ত্রীসহ দেড় বছরের মেয়েকে নিয়ে৷ করোনাকালে এত ছোট বাচ্চাকে সঙ্গে আনার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘করোনার কারণে পরিবার ঢাকার বাইরে থাকছে৷ বাচ্চাকে বাসায় দেখার কেউ নেই, তাই সংক্রমণের ঝুঁকি আছে জেনেও বাধ্য হয়ে বাচ্চাকে সাথে এনেছি৷’’
পরীক্ষার চেয়ে জীবনের মূল্য বেশি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা কেন্দ্রে মেয়েকে নিয়ে এসেছেন ব্যাংকার মইনউদ্দিন আহমেদ৷ তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘‘সরকার সব পরীক্ষা স্থগিত করলেও এটি করলো না৷ হাজার হাজার মানুষের ভিড় এখানে, এরা আক্রান্ত হলে দায় কে নেবে? জীবনের চেয়ে পরীক্ষা অবশ্যই বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটা বুঝতে হবে৷’’