1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনার গ্রাসে এ বার দক্ষিণ অ্যামেরিকা

২১ মে ২০২০

অ্যামেরিকার পরে এ বার দক্ষিণ অ্যামেরিকায় ক্রমশ ভয়াবহ চেহারা নিচ্ছে করোনা। ব্রাজিল, পেরুর অবস্থা ভয়াবহ।

https://p.dw.com/p/3cZFh
ছবি: Reuters/A. Perobelli

শুরু হয়েছিল এশিয়ার চীনে। সেখান থেকে ইউরোপ ছুঁয়ে অ্যামেরিকা। গত কয়েক মাসে বার বার বদলেছে করোনা ভাইরাসের এপিসেন্টার বা ভরকেন্দ্র। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ বার এই মারণ ভাইরাস গ্রাস করছে দক্ষিণ অ্যামেরিকাকে। গত ২৪ ঘণ্টায় গোটা বিশ্বে এক লাখ ছয় হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। যার অধিকাংশই দক্ষিণ অ্যামেরিকায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বক্তব্য, এখনও পর্যন্ত এক দিনে এটাই সব চেয়ে বেশি করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। এ দিকে এরই মধ্যে গোটা বিশ্বে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ লাখ ছাড়িয়ে গিয়েছে। মৃত্যু হয়েছে তিন লাখ ২৯ হাজার জনের। ২০ লাখ ২১ হাজার মানুষ সুস্থ হয়ে উঠেছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ছয় শর্ত

ব্রাজিলের অবস্থা ভয়াবহ। স্পেনকে টপকে ব্রাজিলই এখন করোনা আক্রান্তের নিরিখে তৃতীয় স্থানে। অ্যামেরিকা এবং রাশিয়ার পরে। সেখানে পরিস্থিতি যে ভাবে খারাপ হচ্ছে তাতে দু'এক দিনের মধ্যেই ব্রাজিল রাশিয়াকে অতিক্রম করবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ব্রাজিলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দুই লাখ ৯৩ হাজার। মৃত্যু হয়েছে ১৮ হাজার ৮৯৪ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রাজিলে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ২০ হাজার মানুষ। মৃত্যু হয়েছে ৮৮৮ জনের। এখনও পর্যন্ত এটাই সে দেশের রেকর্ড আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। দেশের এই পরিস্থিতির জন্য অনেকেই আঙুল তুলছেন প্রেসিডেন্ট জাইয়া বলসোনারোর দিকে। অভিযোগ, করোনা সংক্রমণের গোড়ার দিকে প্রেসিডেন্ট বিষয়টিকে পাত্তাই দিতে চাননি। শুধু তাই নয়, এখনও তিনি করোনা নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন নন। ফলে হু হু করে সংক্রমণ বাড়ছে। এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার মতো পরিকাঠামোও ব্রাজিলে নেই বলে কোনও কোনও বিশেষজ্ঞ মনে করছেন। আরও চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে অ্যামাজনের জনজাতিগুলি। তাদের মধ্যেও করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। অনেককেই বিমানে করে শহরে এনে চিকিৎসা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনও কোনও জনজাতি লুপ্তপ্রায়। তাঁরাও করোনায় আক্রান্ত হলে বেশ কয়েকটি জনজাতি শেষ হয়ে যাবে।

দক্ষিণ অ্যামেরিকায় ব্রাজিলের পরেই পেরু। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত সেখানে এক লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে তিন হাজারেরও বেশি লোকের। ব্রাজিলের মতোই পেরুতেও লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা। সেখানেও এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার মতো পরিকাঠামো আছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

মেক্সিকো এবং চিলির পরিস্থিতিও সংকটজনক। মেক্সিকোয় মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত সেখানে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৪ হাজার মানুষ। মৃত্যু হয়েছে পাঁচ হাজার ৬৬৬ জনের। চিলিতে এখনও পর্যন্ত আক্রান্ত ৫৩ হাজার ৬১৭ জন। মৃত্যু হয়েছে ৫৪৪ জনের। মেক্সিকোয় অন্তত ৫০০ জন কিউবার চিকিৎসক পৌঁছেছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই কিউবার ডাক্তাররা তাঁদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। আপাতত তাঁরা মেক্সিকোয় কাজ করছেন।

এ দিকে করোনা পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক সংকট ক্রমেই বাড়ছে। জাপানে ভয়াবহ মন্দা শুরু হয়েছে। আমদানি ক্ষেত্রে ২২ শতাংশ পতন হয়েছে বলে জাপানের প্রশাসন জানিয়েছে। রপ্তানি ক্ষেত্রেও ৭ শতাংশ পতন হয়েছে। ২০০৮ সালের মন্দার সময়েও আমদানি এবং রপ্তানি ক্ষেত্রে এত পতন হয়নি জাপানে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী দিনে অর্থনৈতিক মন্দা আরও ভয়াবহ চেহারা নিতে পারে।

জার্মানিতেও অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশকে সাহায্য করা থেকে পিছিয়ে আসবে না জার্মানি। আগের মতোই সকলের পাশে থাকবেন তিনি। বস্তুত, বুধবারই আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ যৌথ ভাবে অভিযোগ করেছিল, করোনা কালে বিশ্বের ধনী দেশগুলি তাদের সাহায্য করছে না। ম্যার্কেলের ঘোষণা তাদের আশ্বস্ত করবে।

নিউ জিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বুধবার এক ফেসবুক বার্তায় জানিয়েছেন, দেশে সপ্তাহে চার দিন কাজের ব্যবস্থা করা যায় কি না, তা নিয়ে তিনি ভাবনা চিন্তা করছেন। তাঁর বক্তব্য, করোনার কারণে দেশের পর্যটন শিল্প সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সেই শিল্পকে চাঙ্গা করতেই কাজ কমিয়ে মানুষকে বেড়ানোয় উৎসাহিত করতে চাইছেন তিনি।

অন্য দিকে রাশিয়া জানিয়েছে, করোনা রোগীদের জন্য সাইবেরিয়ায় বিশাল আকারের আইসোলেশন সেন্টার তৈরি করা হচ্ছে।

ভারতেও গত ২৪ ঘণ্টায় পাঁচ হাজার ৬০৯ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সবমিলিয়ে এক লাখ ১২ হাজার ৩৫৮ জন করোনায় আক্রান্ত হলেন। তবে দেশের ভিতরে বিমান চলাচল আগামী ২৫ মে থেকে শুরু হয়ে যাচ্ছে। আগামী ১ জুন থেকে ট্রেন চলাচলও শুরু হবে।

এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, এপি, এএফপি)