করোনার গণটিকা কর্মসূচির দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হচ্ছে
করোনার গণটিকা কর্মসূচির আওতায় গত ৭ থেকে ১২ আগস্ট সারাদেশে ৩০ লাখ টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছিল৷ তার ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে দ্বিতীয় ডোজ প্রদানের কর্মসূচি৷ চলবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত৷
কেন্দ্রে স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই
ঢাকার নগর মাতৃসদন, রাজধানী উচ্চ বিদ্যালয়সহ একাধিক গণটিকাদান কেন্দ্র ঘুরে গেল সেখানে লাইনে দাঁড়ানো কারো মাঝে সামাজিক দূরত্বের কোনো বালাই নেই৷ অনেকের মুখে নেই মাস্ক, কারও মাস্ক ঝুলছে থুতনিতে৷ মাস্ক কেন পরেননি জানতে চাইলে বংশালের বাসিন্দা আবু তৈয়ব জানান, ‘‘করোনা সংক্রমণ আর মৃত্যু তো নিম্নমুখী৷ তাই মাস্ক পরার দরকার এখন আছে বলে মনে হয় না৷ শুধু আমি কেন, আরও অনেকেই তো মাস্ক পরে নাই৷’’
প্রয়োজন অধিক প্রচারণার
ঢাকার মানিক মিয়া এভিনিউয়ের রাজধানী উচ্চ বিদ্যালয়ে টিকাদানের প্রথমদিনে গিয়ে দেখা গেল নির্ধারিত সময়ের আগেই টিকাকেন্দ্রের আয়োজন গুছিয়ে ফেলা হয়েছে৷ টিকা গ্রহীতার ভিড় কম কেন জানতে চাইলে ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের স্বেচ্ছাসেবক নুরুন্নাহার বেগম বলেন, ‘‘আসলে মানুষজন দ্বিতীয় ডোজের ক্যাম্পেইনের কথা খুব একটা জানে না৷ আজকে প্রথমদিন হিসেবে আমরা ৪৫০ ডোজ টিকা দিতে পেরেছি৷ আশা করছি কালকে আরও বেশি মানুষ টিকা নিতে আসবেন৷’’
সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে কার্যক্রম
গত মাসে ছয়দিনব্যাপী প্রথম ডোজের টিকাদান কর্মসূচি চললেও দ্বিতীয় ডোজের ক্ষেত্রে তিনদিনেই সবাইকে টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ সে হিসেবে গতবার কেন্দ্রপ্রতি ৩৫০ ডোজ টিকা দেওয়া হলেও এবার ৭০০ ডোজ টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে৷
আগ্রহ বাড়ছে
গণটিকা কার্যক্রমের আওতাধীন ঢাকার বিভিন্ন টিকাকেন্দ্রে প্রথম ও দ্বিতীয় দিন ঘুরে দেখা যায়, প্রথমদিনের তুলনায় দ্বিতীয় দিনে টিকা নিতে আসা মানুষের ভিড় বেশি৷ ঢাকার বংশালের নগর মাতৃসদনে টিকা নিতে আসা মফিজুল হক জানান, ‘‘আগে মানুষ টিকা নিতে ভয় পেলেও এখন আগ্রহ অনেক বেশি৷ তাছাড়া টিকা নেওয়াটা জরুরি৷ শুনেছি টিকা করোনায় সৃষ্ট বিভিন্ন জটিলতা কমায়৷ তাই আমি বলবো সুযোগ পেলেই যেন সবাই টিকা নিয়ে নেয়৷’’
বৃদ্ধ ও অসুস্থদের অগ্রাধিকার
ঢাকার একাধিক গণটিকাদান কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, কেন্দ্রভেদে ভিড়ের কমবেশি থাকলেও সবক্ষেত্রে বয়ষ্ক, প্রতিবন্ধী, গর্ভবতী এবং অসুস্থ ব্যক্তিদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে৷ টিকা নিতে আসা লাইনে দাঁড়ানো সাধারণ মানুষও এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছে৷
দেওয়া হচ্ছে মডার্নার টিকা
রাজধানী উচ্চ বিদ্যালয়, বংশালের পাকিস্তান মাঠসংলগ্ন নগর মাতৃসদনসহ একাধিক কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায় সেখানে মডার্নার টিকা দেওয়া হচ্ছে৷ এ ব্যাপারে টিকাদান কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত মরিয়ম নেছা জানান, ‘‘সরকার টিকাপ্রাপ্তির সাপেক্ষে গণটিকাদান ক্যাম্পেইন শুরু করেছে৷ তাছাড়াও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ টিকা সংরক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক৷ তাই সবদিক বিবেচনা করে ঢাকায় মডার্নাই দেওয়া হচ্ছে আমি যতদূর জানি৷’’
আগের কেন্দ্রেই টিকা
দ্বিতীয় ডোজের ক্যাম্পেইনের আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর ডাঃ শামসুল হক বলেন, ‘‘প্রথম ডোজের টিকা যে যেই কেন্দ্র থেকে নিয়েছেন, দ্বিতীয় ডোজের টিকাও একই কেন্দ্র থেকে নিতে হবে৷ সেক্ষেত্রে টিকা কার্ড বা সেটার ফটোকপি সাথে নিয়ে আসতে হবে৷ যারা ৭ ও ৮ আগস্ট টিকা নিয়েছেন তারা ৭ সেপ্টেম্বর, ৯ ও ১০ তারিখের ৮ সেপ্টেম্বর এবং যারা ১১ ও ১২ তারিখে প্রথম ডোজ নিয়েছেন, তারা ৯ সেপ্টেম্বর টিকা নিতে পারবেন৷’’
গণটিকা কার্যক্রম আর নয়
সরকার গত ৭ থেকে ১২ আগস্ট গণটিকা কার্যক্রমের আওতায় প্রায় ৩০ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘‘গণটিকা কার্যক্রম আর নয়৷ টিকাপ্রাপ্তির সাপেক্ষে এরপর নিবন্ধনের মাধ্যমে নিয়ম মেনেই টিকা প্রদান করা হবে৷’’
টিকা কার্ড
গণটিকাদান ক্যাম্পেইনে পূর্ব নিবন্ধন ছাড়াই টিকা গ্রহণের সুবিধা থাকলেও যারা প্রথম ডোজ নিয়েছেন, তাদের হাতে একটি টিকা কার্ড দেওয়া হয়েছে যা দ্বিতীয় ডোজের সময় সাথে আনতে হচ্ছে৷ এছাড়া প্রতিবন্ধীদের জন্য ‘সুবর্ণ কার্ড’ ব্যবহার করে টিকাগ্রহণের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে, যা বাস্তবায়ন করছে সমাজকল্যাণ অধিদপ্তর৷
নেই বিশৃঙ্খলা, হুড়োহুড়ি
গণটিকাদানের দ্বিতীয় ডোজের ক্যাম্পেইনে বেশ কয়েকটি টিকাকেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, সেখানে প্রথবারের মতো বিশৃঙ্খলা বা হুড়োহুড়ি নেই৷ এর কারণ জানতে চাইলে নাম না প্রকাশের শর্তে একজন টিকাকর্মী জানান, প্রথম ডোজের সময় টিকা স্বল্পতার কারণে অনেকেই টিকা নিতে না পেরে ফিরে গেছেন৷ সেক্ষেত্রে গতমাসে যারা শুধু প্রথম ডোজ নিতে পেরেছেন, সেই সীমিত সংখ্যক টিকাগ্রহীতারাই এবার এসেছেন কেন্দ্রে৷