1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনাকালে প্রবীণদের পরিষেবায় বিশেষ উদ্যোগ

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৯ ডিসেম্বর ২০২১

একাকী প্রবীণকে সাহচর্য ও সহযোগিতা। কেবল স্বেচ্ছাশ্রমে নয়, এই পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে পেশাদারি উদ্যোগে। এতে উপকৃত হচ্ছে উভয় পক্ষই। করোনাকালে কলকাতায় গড়ে উঠেছে প্রবীণদের পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা।

https://p.dw.com/p/442lZ
করোনা হলে সামাজিকভাবে বয়কটের মুখেও পড়েছিলেন অনেকেছবি: Payel Samanta/DW

প্রবীণদের দেখাশোনার কেউ নেই। থাকলেও কেউ কেউ অবহেলার শিকার। এই শ্রেণির মানুষদের অন্যতম আশ্রয় বৃদ্ধাশ্রম। কিন্তু অনেকে নিজের বাড়িতে থেকে জরুরিকালীন পরিষেবা পেতে চান। জরুরি পরিষেবা দূরের কথা, কোভিডকালে রাঁধুনি বা পরিচারিকা না পাওয়ায় অনেকে অসহায় হয়ে পড়েছিলেন। এমনকি করোনা হলে সামাজিকভাবে বয়কটের মুখেও পড়েছিলেন অনেকে। তখন থেকেই প্রবীণদের কাজে আসছে বার্ধক্যকালীন পরিষেবা প্রদানকারী পেশাদারি সংস্থাগুলি।

এ ধরনের পরিষেবা অবশ্য কলকাতায় একেবারে নতুন নয়। কোভিড পরিস্থিতিতে এদের উপযোগিতা আরো বেড়েছে। বেড়েছে গ্রাহক সংখ্যা। ১৩ বছর আগে তৈরি হয়েছিল স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘বাঁচবো হিলিং টাচ'। প্রবীণদের জরুরি পরিষেবা দেওয়ার লক্ষ্যে এই সংস্থা তৈরি হয়েছিল। কোভিড পরিস্থিতিতে যখন হাসপাতালে শয্যা বা অক্সিজেনের অভাবে মানুষ দিশাহারা, তখন প্রবীণ নাগরিকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে চিকিৎসা পরিষেবা দিয়েছে বাঁচবো।

‘আমাদের লক্ষ্য বাড়ি গিয়ে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া’

সদস্যদের জন্য গোল্ডেন, ডায়মন্ড আর সিলভার প্যাকেজের ব্যবস্থা রয়েছে। এখন এই সংগঠনের সদস্য ৫০০-র বেশি প্রবীণ। এই সংগঠন কলকাতা পুলিশের প্রবীণদের জন্য প্রকল্প ‘প্রণাম'-এর সঙ্গেও জড়িত। সংগঠনের সম্পাদক তপন সেন বলেন, "আমাদের লক্ষ্য বাড়ি গিয়ে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া। ডাক্তার, নার্স, অক্সিজেন-সহ অন্য চিকিৎসার সরঞ্জাম নিয়ে বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছি। সেকেন্ড ওয়েভে ছ'জন করোনা রোগীকে আমরা পরিষেবা দিয়েছি। এখন ডেঙ্গু আক্রান্তদের সহায়তা করেছি।”

অতিমারি পাল্টে দিয়েছে পৃথিবীকে। স্বাভাবিক ভাবেই প্রবীণদের ক্ষেত্রে এই চ্যালেঞ্জ অনেকটাই বেশি। এঁদের কথা ভেবে অনেক তরুণ এগিয়ে এসেছেন, এই পরিষেবাকে দিয়েছেন সংগঠিত পেশাদারি চেহারা। ‘ডিপেনডেবলজ' গড়ে উঠেছে অতিমারির সময়। কর্পোরেট সংস্থার কর্মী তুর্নী ধর গড়ে তোলেন এটি। বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের খাবারের ব্যবস্থা করা থেকে চিকিৎসক দেখানো ও ওষুধ কিনে দেওয়ার ভার সংস্থার কর্মীদের। ব্যাংক, ডাকঘরের আর্থিক লেনদেন থেকে বৃদ্ধদের উৎসবে শামিল করা, এ সবেরই আয়োজন করেন তারা। সংস্থার তরফে বিপ্লবী বারিক ডয়চে ভেলেকে বলেন, "সেকেন্ড ওয়েভে বহু হাসপাতালে প্রবীণদের নিয়ে ঘুরেছি, বহু ক্ষেত্রে বেড না পেয়ে বাড়িতে ব্যবস্থা করেছি। অনেকে ফোন করে বাড়িতে ডেকেছেন। আমরা গল্প করেছি, তাস বা দাবা খেলেছি। অনেকের সঙ্গে রোজ ফোনে কথা বলেছি ঘন্টার পর ঘন্টা।”

‘বৃদ্ধরা যে কতটা অসহায়, সেটা কোভিডের সময় বোঝা গিয়েছে’

স্বেচ্ছাশ্রম শুধু নয়, এই পরিষেবাকে পুরোদস্তুর পেশাদার চেহারা দেওয়া হয়েছে। এ জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা খরচের প্যাকেজ। যে প্যাকেজ আপনি নেবেন, তার উপর নির্ভর করবে আপনার প্রাপ্য পরিষেবা। বিপ্লবী বলেন, "বৃদ্ধরা যে কতটা অসহায়, সেটা কোভিডের সময় বোঝা গিয়েছে। সেকেন্ড ওয়েভে আমরা রোজ ৪০০-৪৫০ ফোন কল পেয়েছি। এটা আমাদের কল্পনার বাইরে। আসলে অনেকেই এজন্য খরচ করতে তৈরি। শুধু তাঁরা প্রয়োজনে পাশে কাউকে যেন পান।”

তবে অতিমারিতে নিজের বাড়িতে থাকা একাকী প্রবীণদের তুলনায় ভালো ছিলেন বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিকরা। এমনটাই দাবি বৃদ্ধাশ্রমের পরিচালকদের। দমদমের স্বপ্ননীড় বৃদ্ধাশ্রমের পরিচালক সঞ্জয় সুর বলেন, "আমরা আবাসিকদের ঘিরে সুরক্ষা বলয় তৈরি করেছিলাম। বাইরের সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল। তাই কোভিডের আঁচ লাগেনি। সব কর্মীদের বাড়ি যাওয়ার ছুটি বাতিল করে দিয়েছি। সবাই এখানেই থেকে পরিষেবা দিতে পেরেছেন। রোগব্যাধি হলে ডাক্তার এনেছি, অক্সিজেন দিয়েছি। হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়নি।"

পানিহাটির রামকৃষ্ণ বৃদ্ধাশ্রমের ১০ বছরের আবাসিক সদস্য রাধা পাল কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন। কেমন অভিজ্ঞতা তাঁর? ৭০ বছরের রাধা বলেন, "আইসোলেশনে থেকেছিলাম। এখান থেকে দূরে চলে গিয়েছিলাম যাতে আর কারও করোনা না হয়। এছাড়া কোনো সমস্যা হয়নি। কোনো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগিনি বা আতঙ্ক হয়নি।”

যাঁদের আর্থিক সঙ্গতি নেই, পরিষেবা তাঁদের জন্য নয়, এই ভাবনাকে বাতিল করে দিয়েছে কেষ্টপুর জাগরণী ফাউন্ডেশনের 'নতুন ঘর' বৃদ্ধাশ্রম। ভবঘুরে, পথবাসী মহিলারাই এখানকার আবাসিক। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে স্থাপিত এই বৃদ্ধাশ্রমে করোনার সময় আবাসিক সংখ্যা ছিলেন ১০ জন। এখানকার সম্পাদক অসীম রায়চৌধুরী বলেন, "করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় চেনাশোনা ডাক্তারদের ভিডিও কল বা হোয়াটসঅ্যাপ করে পরামর্শ নিয়েছি। কারও করোনা হয়নি এখানে। এমনিতে ভবঘুরেরা বন্দি হয়ে থাকতে চান না। বেরোতে চান। লকডাউনে সেটা পুরো বন্ধ ছিল। তখন গান শোনানো, টিভি দেখানোর বন্দোবস্ত করা হয়েছিল।”

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য