1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনা রুখতে গোপনীয়তায় হস্তক্ষেপ, বিতর্ক তুঙ্গে

গৌতম হোড় নতুন দিল্লি
১০ এপ্রিল ২০২০

করোনা রুখতে কি গোপনীয়তার অধিকারে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে? ভারতে যে ভাবে সম্ভাব্য করোনা আক্রান্তের খোঁজ চলছে, তা নিয়ে শুরু হয়েছে এই বিতর্ক।

https://p.dw.com/p/3akDp
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/R. Shukla

করোনা যাতে না ছড়ায়, তার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। লকডাউনঘোষণা, হট স্পট সিল, করোনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানো, দিল্লিতে মাস্ক বাধ্যতামূলক করা তারই অঙ্গ। এর পাশাপাশি আরেকটি চেষ্টা চালাচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তা হলো, করোনায় কেউ আক্রান্ত হলে, তাঁর সংস্পর্শে কারা এসেছিলেন তা খুঁজে বের করা। তাঁদেরও করোনা পরীক্ষা করে দেখা এবং দরকার হলে কোয়ারান্টিনে পাঠানো। আর তা নিয়েই শুরু হয়েছে বিতর্ক।

সরকারি সূত্র জানাচ্ছে, দিল্লিতে করোনায়কেউ আক্রান্ত হলেই তাঁর মোবাইল, ল্যাপ টপ, আই প্যাড নিয়ে এসে তা তুলে দেওয়া হচ্ছে সাইবার ফরেনসিক টিমের হাতে। তাঁরা সেখান থেকে খুঁজে বের করছেন, আক্রান্ত ব্যক্তি কাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং দেখা করেছেন। সাইবার ফরেনসিক টিমের কিছু সদস্যকে রাখা হয়েছে দিল্লির একটি হোটেলে। চিকিৎসকদের মতো তাঁদেরও দেওয়া হয়েছে সুরক্ষা-পোশাক। অতি সাবধানে সংক্রমিতের মোবাইল, ল্যাপটপ ঘেঁটে তাঁরা ওই সব তথ্য খুঁজে বের করছেন। তারপর করোনায় আক্রান্তের সঙ্গে যাঁদের দেখা হয়েছিল, তাঁদের খুঁজে বের করছে পুলিশ। পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যে অবশ্য অনেকগুলি এজেন্সি জড়িয়ে আছে।

প্রশ্ন হলো, এতে কি গোপনীয়তার অধিকার খর্ব হচ্ছে? কারণ, সেল ফোনে কার সঙ্গে কথা হয়েছে বা ই-মেইল বা সামাজিক মাধ্যমে যোগাযোগের বিভিন্ন অ্যাপের মারফত কার সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেছেন, তা জানার চেষ্টা মানে গোপনীয়তার অধিকারে আঘাত। ফোনে আড়িপাতার অভিযোগ নিয়ে এর আগে বহুবার সংসদ উত্তাল হয়েছে। ভারতের সুপ্রিম কোর্টও গোপনীয়তার অধিকারকে মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি দিয়েছে। সেখানে কি এই ভাবে তথ্য জানা যায়?

সরকারি সূত্র জানাচ্ছে, প্রথমত, অনুমতি নিয়েই তথ্য দেখার চেষ্টা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, করোনার মতো সংকট বিশ্বে আগে কখনও আসেনি। ফলে এটা অস্বাভাবিক সময়। সেই সময়ে এই ধরনের কাজ করা অত্যন্ত জরুরি। অধিকতর লোকের হিতেই তা করা হচ্ছে। প্রতিটি দেশের কাছেই অগ্রাধিকার হলো করোনা থামানো। একজন করোনা আক্রান্তের কাছ থেকে বহু লোকের মধ্যে রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। বেপরোয়া ভাব দেখালে কী হয়, তাবলিগই তার উদাহরণ।

প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''উন্নত বিশ্বের সঙ্গে ভারতের এ ক্ষেত্রে বরাবরই একটা ফারাক আছে। এখনে সরকার অপরাধ খুঁজে বের করার নাম করে সামাজিক মাধ্যমগুলির ওপর নজরদারিচালায়। ইউপিএ আমলে মন্ত্রী থাকার সময় প্রণব মুখোপাধ্যায় বলেছিলেন, তাঁর অফিস ঘরে আড়িপাতা হচ্ছে। বিরোধী নেতারা হামেশাই ফোনে আড়িপাতার অভিযোগ করেন।'' শরদের মতে, ''স্বাভাবিক সময়ে এই ধরনের ঘটনা মানে গোপনীয়তার অধিকারে আঘাত। এখন একটা অস্বাভাবিক সময় চলছে। গায়িকা কণিকা কাপুরের উদাহরণ দেখুন। তিনি বিদেশ থেকে ফিরে কোয়ারান্টিনে না থেকে পার্টি করেছেন। পরে দেখা গিয়েছে তিনি করোনায় আক্রান্ত। তাঁর থেকে অনেকের করোনা হতে পারে। মধ্যপ্রদেশে করোনা আক্রান্ত একজন বেপরোয়া মহিলা আইএএস অফিসারের জন্য অন্তত ৬৪ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাই এখন আক্রান্তদের ফোন দেখে অন্যদের পরীক্ষার ব্যবস্থা করাটা ঠিক কাজ।'' 

একসময় বেশ কিছু সাংবাদিকের ফোনে আড়িপাতা নিয়ে প্রচুর হইচই হয়েছিল। বিদেশি একটি সংগঠন সেই তালিকা প্রকাশ করেছিল। সেখানে নাম ছিল অসমীয় প্রতিদিনের প্রবীণ সাংবাদিক আশিস গুপ্তের। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ''কোনও সময়েই গোপনীয়তার অধিকার ভঙ্গ করা উচিত নয়। সরকারের যেটা উচিত, তা হলো, ব্যাপকভাবে করোনা পরীক্ষা করা। কেরালায় যেটা এখন শুরু হয়েছে। ভারতের অন্য রাজ্যেও একই পথ নেওয়া উচিত। তা হলেই করোনা ধরা পড়বে ও তা রোধ করা সম্ভব হবে। তা না করে অন্ধকারে ঢিল ছোঁড়ার মতো সেল ফোন ইত্যাদি থেকে তা বের করার চেষ্টা অর্থহীন।''