1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনা ভাইরাস: সতর্ক করে বিপদে  চিকিৎসক

৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০

জানুয়ারির শুরুতেই উহানে নতুন একটি ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার খবর দিয়েছিলেন এক চিকিৎসক৷ কিন্তু চীনা কর্তৃপক্ষ পাত্তা না দিয়ে উল্টো সেই চিকিৎসকের মুখ বন্ধ করার উদ্যোগ নেয়৷

https://p.dw.com/p/3XFur
Coronavirus
ছবি: imago/Science Photo Library

এভাবে নভেল করোনা ভাইরাস নিয়ে হেলাফেলা করার মাসখানেকের মধ্যে উহান ও এর আশেপাশের এলাকায় প্রাণঘাতী এই ভাইরাসটি মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়ে৷  ভাইরাসটি এখন চীনের গন্ডি পেরিয়ে অন্যান্য দেশেও ছড়াতে শুরু করেছে৷ এরই মধ্যে করোনা ভাইরাস সংক্রমণে চীনের বাইরে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে৷ চীনে মৃতের সংখ্যা প্রায় সাড়ে চারশ৷

করোনা ভাইরাস সংক্রমিতের সংখ্যা যেমন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, তেমনি নতুন নতুন দেশে সংক্রমণ শনাক্ত হচ্ছে৷

তারমধ্যেই চীনের ওই চক্ষু বিশেষজ্ঞের খবর জানাজানি হলো৷  উহান কেন্দ্রীয় হাসপাতালের চক্ষু বিশেষজ্ঞ লি ওয়েনল্যাং যখন ভাইরাসটি নিয়ে সহকর্মীদের সতর্ক করার চেষ্টা করেছিলেন, খবর পেয়ে পুলিশ এসে তাকে চুপ করিয়ে দেয়।

একমাস পর হাসপাতালের বিছানা থেকে ঘটনাটি চীনের সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ওয়াইবোতে পোস্ট করেন তিনি।

বিবিসি জানায়, গত ডিসেম্বরে সংক্রমণের সাতটি ঘটনা পান এই চিকিৎসক। তার কাছে এই ভাইরাসটিকে দেখতে সার্সের (২০০৩ সালে বিশ্বজুড়ে মহামারীর রূপ নিয়েছিল) মতোই মনে হয়েছিল৷

উহানের হুনান সিফুড মার্কেট থেকে সংক্রমিত ধরে নিয়ে ওই রোগীদের হাসপাতালে অন্যদের থেকে আলাদা করে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়৷

ডা. লি গত ৩০ ডিসেম্বর গ্রুপ চ্যাটে সহকর্মী চিকিৎসকদের ভাইরাসটি নিয়ে সতর্ক করে সংক্রমণ এড়াতে ‘প্রতিরক্ষামূলক পোশাক' পরার পরামর্শ দিয়ে একটি সতর্ক বার্তা দিয়েছিলেন৷ তবে তখন তিনি জানতেন না - যে রোগটি ধরা পড়েছে সেটি সম্পূর্ণ নতুন একটি করোনা ভাইরাস।

সতর্ক বার্তা লেখার চারদিন পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা তার সঙ্গে দেখা করেন এবং একটি মুচলেকায় তার স্বাক্ষর নেন৷  যেখানে তার বিরুদ্ধে ‘সামাজিক শৃঙ্খলায় মারাত্মক বিঘ্ন সৃষ্টিকারী মিথ্যা মন্তব্য' করার অভিযোগ আনা হয়।

মুচলেকায় লেখাছিল, "আমরা আপনাকে কঠোরভাবে সতর্ক করে দিচ্ছি: আপনি যদি অধৈর্য হয়ে জেদ ধরে এমন অবৈধ কার্যকলাপ চালিয়ে যান, তাহলে আপনাকে বিচারের আওতায় আনা হবে- বুঝেছেন?”

তার নিচে ডা. লির হাতে লেখা: "হ্যাঁ, আমি বুঝেছি।”

শুধু তিনিই নন, ‘গুজব ছড়ানোর' অভিযোগে আরও সাত জনের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হচ্ছে বলে তখন পুলিশ জানিয়েছিল৷

জানুয়ারির শেষের দিকে ওয়াইবোতে মুচলেকা পত্রের ছবি প্রকাশ করে ঘটনাটি ব্যাখ্যা করেন ডা. লি। এরইমধ্যে তার কাছে ক্ষমা চেয়েছে স্থানীয় প্রশাসন, কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গেছে।

শুরুতে উহানের কর্মকর্তারা বলেছিলেন, কেবল সংক্রমিত প্রাণীর সংস্পর্শে এলেই মানুষ ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হবে। চিকিৎসকদের সুরক্ষার জন্য তখনও কোনো নির্দেশনা জারি করা হয়নি।

কিন্তু পুলিশ তার কাছে আসার এক সপ্তাহ পরে ডা. লি গ্লুকোমা আক্রান্ত এক নারীর চিকিৎসা করেন। তিনি তখন জানতেন না ওই নারী নতুন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন।

ওয়াইবো পোস্টে লি লিখেছেন, ১০ জানুয়ারি তিনি কাশতে শুরু করেন, পরের দিন তার জ্বর হয়; দুদিন পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তার বাবা-মা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদেরও হাসপাতালে নেওয়া হয়।

তার ১০ দিন পর করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে জরুরি পরিস্থিতি ঘোষণা করে চীন।

ডা. লি বলেন, করোনা ভাইরাসের জন্য তাকে বেশ কয়েকবার পরীক্ষা করা হয়েছিল, প্রতিবারই ফল নেতিবাচক এসেছিল অর্থাৎ ভাইরাস পাওয়া যায়নি।

পরে ৩০ জানুয়ারি তিনি আরেকটি পোস্টে লেখেন, "আজ নিউক্লিক অ্যাসিড টেস্ট ইতিবাচক ফল নিয়ে এসেছে; ধোঁয়াশা কেটে গেছে; শেষ পর্যন্ত রোগ নির্ণয় হয়েছে।”

চোখ উল্টে যাওয়া ও জিহ্বা বের করা একটি কুকুরের ইমোজি দিয়ে তিনি পোস্টটি শেষ করেন। অবাক হওয়ার কারণ নেই যে, এই পোস্টে হাজার হাজার মন্তব্য ও লাইক পড়ে।

দেশকে নিয়ে মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া কী হবে তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এক চীনা মন্তব্য করেন, "সংক্রামক রোগের লক্ষণ নিয়ে প্রাথমিকভাবে সতর্ক করতে ভবিষ্যতে চিকিৎসকরা আরও ভয় পাবেন।

"ডা. লি ওয়েনল্যাং একজন বীর। নিরাপদ জনস্বাস্থ্য পরিবেশের জন্য এরকম কয়েক লাখ লি ওয়েনল্যাং দরকার,” লিখেছেন আরেকজন৷

এসএনএল/কেএম (বিবিসি)