1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনা ‌নিয়ে গুজব রটনাকারীদের শাস্তির দাবি

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৩ মার্চ ২০২০

ওয়াজের নামে করোনা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে বাংলাদেশে৷ আরেকটি শ্রেণি বিদেশ থেকে আসার পরও ‘সেল্ফ কোয়ারেন্টাইনে' যাচ্ছে না৷ এই দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই আইনি ব্যবস্থা নেয়ার দাবি উঠেছে৷

https://p.dw.com/p/3ZO19
Bangladesch Coronavirus Sicherheitsvorkehrungen in Dhaka
ছবি: DW/S. Hossain

এক মাওলানা ওয়াজের সময় করোনাকে বলেছেন ‘আল্লাহর সোলজার (সৈনিক)'৷ আর তিনি হলেন সুপরিচিত ওয়াজেরিন মাওলানা কাজী ইব্রাহীম৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ওই ওয়াজে তিনি করোনা নিয়ে এক যুবকের স্বপ্নের কথা বলছেন৷ আর তাতে করোনা নাকি ওই যুবককে স্বপ্নে তিনটি নির্দেশনা দিয়েছে৷ সেই কথিত নির্দেশগুলো হলো: বাংলাদেশের মুসলমানরা যেন ভারতীয় টিভি-সিনেমা না দেখে৷ মসজিদকে যেন করা হয় পার্লামেন্ট৷ আর মসজিদ কমিটির সভাপতি হতে হবে মসজিদের ইমামকে, অথবা যার দাড়ি এক মুঠের চেয়ে লম্বা, তাকে৷ এই তিনটি শর্ত পূরণ হলে নাকি করোনা বাংলাদেশে আক্রমন করবে না৷

তিনি আরো বলেন, ‘‘করোনা হলো আল্লাহর সোলজার৷ তারা আসার পর দলে দলে মানুষ ইসলামমুখী হচ্ছে৷ তারা আসলে বাংলাদেশে তেমন আক্রমন করবে না বলে জানিয়েছে৷ কারণ, বাংলাদেশে ইসলাম নিয়ে সবচেয়ে বেশি কথা হয়৷''
আরো দুইজন ইসলামী বক্তা করোনা নিয়ে বয়ান দিয়েছেন৷ তারা হলেন মাওলানা সিফাত হাসান ও ইয়াহিয়া তাকি৷ তারা দু'জনই করোনাকে চীনাদের জন্য আল্লাহর পাঠানো ‘গজব' হিসেবে অভিহিত করেছেন৷

উইগুর মুসলানদের ওপর নির্যাতন ও কোরানের অবমাননা করায় চীনে ‘করোনা গজব' পাঠানো হয়েছে বলেও তারা বয়ান করেন৷ মাওলানা তাকি বলেন, ‘‘চীন পারে নাই৷ বাংলাদেশ সরকার কোনোভাবেই কোনো প্রস্তুতি নিয়ে করোনা ভাইরাস প্রতিহত করতে পারবে না৷ একমাত্র পথ তওবা করা৷'' আর মাওলানা সিফাত হাসান বলেন, ‘‘বাংলাদেশের সরকার যতই প্রস্তুতি নিক, ডাক্তার আর সচেতনতা দিয়ে এই আজাব, গজব থেকে বাঁচা যাবে না৷ আমাদের বলেল্লাপনা বন্ধ করতে হবে৷''

 অবশ্য কথা বলার জন্য এই মাওলানাদের কাউকেই ফোনে পাওয়া যায়নি৷
এদিকে করোনা থেকে বাঁচতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন দোয়াও প্রচার করা হচ্ছে৷ এমনকি ধর্মমন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনও একটি দোয়া তার ফেসবুকে দিয়ে আবার ইনবক্সও করছেন৷ একটি জীবন বাঁচাতে সবাইকে তা শেয়ার করার অনুরোধ করছেন৷
মেডিসিনের অধ্যাপক এবং প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘‘দোয়া পড়েন তাতে অসুবিধা নেই৷ তবে করোনা প্রতিরোধে চিকিৎসকদের দেয়া পরামর্শ এবং সতর্কতা মেনে চলুন৷ আর যারা গজব বা স্বপ্নের কথা বলছেন, তারা তাদের মনগড়া কথা বলছেন৷ তাহলে তো সৌদি আরব, ইরানের লোক আক্রান্ত হতো না৷ মুসলমানদের করোনা  ভাইরাস আক্রমন করতো  না৷ এইসব গাঁজাখুরি বক্তব্যের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবন্থা নেয়া দরকার৷'' 

এরজন্য প্রয়োজনীয় আইন আছে: মনজিল মোরসেদ

এ প্রসঙ্গে সুপ্রিমকোকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, এই ধরনের ধর্মীয় এবং অন্যান্য অপপ্রচার ও গুজব সরকারের কঠোর নজরদারিতে নেয়া উচিত৷ বিভ্রান্তকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন৷ এরজন্য প্রয়োজনীয় আইন আছে৷''

কোয়ারেন্টাইন এড়ালে শাস্তি
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে সর্বোচ্চ সতর্কতার অংশ হিসেবে বাংলাদেশে বিদেশ থেকে আসা সব যাত্রীর কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক করেছে৷ সবাইকে সেল্ফ কেয়ারেন্টাইনে থাকতে বলেছে৷ এটা অমান্য করলে সংক্রামক ব্যাধি আইনে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে৷ এই আইনে দুই মাসের কারাদণ্ড এবং ২৫ হাজার টাকা জরিমানা, অথবা উভয় দণ্ডের বিধান আছে৷

এইসব গাঁজাখুরি বক্তব্যের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া দরকার: ডা. আব্দুল্লাহ

কিন্তু এখন পর্যন্ত দেশের ২২ জেলায় এক হাজারের কিছু বেশি বিদেশ ফেরতকে সেল্ফ কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে, যা বিদেশফেরত যাত্রীদের তুলনায় খুবই কম৷ অনেকেই সেল্ফ কোয়ারেন্টাইন এড়িয়ে চলছেন বা তথ্য গোপন করে প্রকাশ্যে চলাফেরা করছেন৷ ডা. এম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘‘এটা ভয়াবহ পারিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে৷ করোনার বিস্তৃতি ঠেকাতে শতভাগ কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে হবে৷ কারণ, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ প্রকাশ পেতে সর্বোচ্চ ১৪ দিন লাগে৷ বাইরের দেশ থেকে এলে এই ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতেই হবে৷ এর মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ না পেলে ভালো৷ আর প্রকাশ পেলে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান ( আইইডিসিআর)-এ যোগাযোগ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে৷''

তিনি বলেন, ‘‘যারা এটা চাপিয়ে রেখেছে, গোপন করেছে তারাই বিপদে পড়েছে৷ এটা শুধু নিজের জন্য নয়, তার পরিবার ও দেশের মানুষকে নিরাপদ রাখার জন্য জরুরি৷''

আর এটা কার্যকর করার জন্য ঢাকাসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রশাসনের মাধ্যমে কঠোর মনিটরিং করা দরকার বলে মনে করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ৷ তিনি বলেন, ‘‘শতভাগ কোয়রেন্টাইন নিশ্চিত করতে শুধু প্রচলিত আইন নয়, প্রয়োজন হলে রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশও জারি করতে পারেন৷'' তার মতে , ‘‘আমাদের শিথিলতা দেখানোর কোনো সুযোগ নাই৷''

সর্বশেষ পরিস্থিতি
এদিকে শুক্রবার আইইডিসিআর-এর ব্রিফিংয়ে জানানো হয়েছে করোনা আক্রান্ত তিন জনের একজন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন৷ একজন সুস্থ হলেও এখনো হাসপাতালে আছেন৷ তৃতীয়জন এখনো করোনামুক্ত নয়৷ এর বাইরে চারজন নিবিড় কোয়ারেন্টাইনে আছেন৷ গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার ২৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে৷ এখন পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে মোট ১৮৭ জনের৷ নতুন করে কারো শরীরে কারোনার উপস্থিতি পাওয়া যায়নি৷ নতুন করে কোনো রোগীও নেই৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য