1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনা টিকা উৎসবের ‘অনন্য' নজীর!

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১

বাংলাদেশে পুরোদমে করোনা টিকা দেয়া শুরু হয়েছে রবিবাবর থেকে। প্রথম দিনেই একে ‘উৎসবে' পরিণত করা হয়েছে।

https://p.dw.com/p/3p44Y
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের টিকা নেয়ার ছবিও ভাইরাল হয়েছে। শত জন মিলে তাকে টিকা দিয়েছেন। আর কয়েকশ' মানুষ ও গণমাধ্যমকর্মী  সেখানে ছবি তুলতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের টিকা নেয়ার ছবিও ভাইরাল হয়েছে। শত জন মিলে তাকে টিকা দিয়েছেন। আর কয়েকশ' মানুষ ও গণমাধ্যমকর্মী  সেখানে ছবি তুলতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন। ছবি: bdnews24.com

শুধু তাই নয়, টিকা না নিয়ে টিকার ফটোসেশন করেও একজন নারী এমপি এরই মধ্যে ভাইরাল হয়েছেন। সব মিলিয়ে টিকা নিয়ে এক ‘অনন্য' নজির স্থাপন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু এই নজির আমাদের কতটা ইতিবাচক বার্তা দেয়?

জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্য এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম ওরফে শিউলি আজাদ এখন ভাইরাল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার করোনার টিকা নেয়ার ফটোসেশনের ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু তিনি রবিবার বাস্তবে টিকা নেননি। এমনকি টিকা নেয়ার জন্য তিনি রেজিষ্ট্রেশনও করেননি। তাহলে টিকা নেয়ার ছবিতে পোজ দিয়েছেন কেন? তার জবাব, এলাকার নারীদের সাহস দেয়ার জন্য। তার আরো কথা হলো, এটা সরকারের একটা বড় সাফল্য। তাই সবাইকে সাহস দিতে এই কাজ তিনি করেছেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের টিকা নেয়ার ছবিও ভাইরাল হয়েছে। শত জন মিলে তাকে টিকা দিয়েছেন। আর কয়েকশ' মানুষ ও গণমাধ্যমকর্মী  সেখানে ছবি তুলতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন। রীতিমতো একটা ‘হাঙ্গামা পরিস্থিতি'।

আর সোমবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার তো টিকা নেয়ার পর বলেই দিয়েছেন," ভোট উৎসবের মতোই টিকাদান উৎসব চলছে। আসলেই এটা একটা উৎসব।”

কিন্তু প্রশ্ন হলো এই উৎসবে যারা শামিল হচ্ছেন তারা কি টিকার বিষয়টি বিষাদে পরিণত করতে চান? বিশেষ করে যারা মন্ত্রী-এমপি জনপ্রতিনিধি তারা কি টিকা নিতে গিয়ে নিয়ম-নীতি মানছেন? স্বাস্থ্যমন্ত্রীই যেখানে সামাজিক দূরত্ব মানা তো দূরের কথা, রীতিমতো হল্লা করে  টিকা নিচ্ছেন তাতে সাধারণ মানুষের কথা আর কী বলবো। আর টিকা না নিয়ে  এমপির ফটোসেশনের মানে কী? ভবিষ্যতে মানুষকে টিকা নিতে সাহস দিতে এই ফটোশেসন কি আরো বাড়াতে হবে?

কেউ কেউ এই ফটোশেসনকে ‘প্রতারণা' বলে অভিহিত করেছেন। তারা বলছেন সাহস দিতে হবে টিকা নিয়ে , ভান করে নয়।  মানুষ তার এই আচরণে এখন আরো বিভ্রান্ত হবে। প্রশ্ন তুলছে," এমপি আপা আসলেই তাহলে টিকা নিলেন না কেন?”

আমাদের সমস্যা হচ্ছে পরিমিতি বোধ নিয়ে। যখন  যেটা নিয়ে মেতে উঠি কোনো নিয়ম-নীতি মানি না। আমাদের ইচ্ছে মতো আমরা যা খুশি তাই করি। টিকা নিয়ে  করোনা প্রতিরোধ করতে গিয়ে ‘উৎসব' করে আমরা করোনা পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ করে তোলার পথ প্রশস্ত করছি। যেমন, আল-জাজিরার খবরের প্রতিবাদ করতে গিয়ে এখন দেশের উপজেলাগুলোতেও প্রতিবাদ মিছিল হচ্ছে। কুশপতুল পোড়ানো হচ্ছে।

হারুন উর রশীদ স্বপন. ডয়চে ভেলে
হারুন উর রশীদ স্বপন. ডয়চে ভেলেছবি: Harun Ur Rashid/DW

করোনার টিকা নিয়ে মানুষের ভয় কাটছে সত্য। মানুষ আগ্রহীও হচ্ছে। কিন্তু নিবন্ধনের জন্য যে অ্যাপসটি বানানো হয়েছে তা এখনো চালু হয়নি। বিকল্প হিসেবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘সুরক্ষা' ওয়েবসাইট দিয়ে নিবন্ধন করতে বলা হচ্ছে। এটা নিয়ে তেমন প্রচার না থাকায় এই নিবন্ধন প্রক্রিয়াটিই জটিল হয়ে যাচ্ছে, যা মানুষকে হতাশ করছে। করছে নিরুৎসাহিত। এই অ্যাপস নিয়ে আগেই সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। আর সাধারণ গ্রাম বা বস্তিতে বসবাসকারী মানুষ এই জটিল প্রক্রিয়ায় শেষ পর্যন্ত  নিজেদের নিবন্ধিত করতে পারবেন কিনা সেটাই প্রশ্ন।

নিবন্ধনের ধীর গতিই বলে দিচ্ছে মানুষ পারছে না। এই প্রক্রিয়ায় তারা পারছে না। এখন টিকা দেয়া হচ্ছে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে। নিবন্ধন ঠিকমতো না হওয়ায় প্রথম ধাপের এই তালিকাও চূড়ান্ত হয়নি এখনো। সারাদেশে এখন পর্যন্ত নিন্ধন করতে পেরেছেন চার লাখের কিছু বেশি মানুষ। তাই যত আওয়াজ আর ‘উৎসব' তার মূল কাজটি কিন্তু দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে না

রবিবার প্রথম দিনে টিকা নিয়েছেন ৩১ হাজার ১৬০ জন। ঢাকা মহানগরে টিকা নিয়েছেন পাঁচ হাজার ৭১ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ তিন হাজার ৭৭২ জন আর নারী এক হাজার ২৯৯ জন।

ঢাকা মহানগরীসহ ঢাকা বিভাগে টিকা নিয়েছেন ৯ হাজার ৩১৪ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে এক হাজার ৬৯৩ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ছয় হাজার ৪৪৩ জন, রাজশাহী বিভাগে তিন হাজার ৭৫৭ জন, রংপুর বিভাগে দুই হাজার ৯১২ জন, খুলনা বিভাগে তিন হাজার ২৩৩ জন, বরিশাল বিভাগে এক হাজার ৪১২ জন আর সিলেট বিভাগে দুই হাজার ৩৯৬ জন। এই সংখ্যা আশাব্যঞ্জক নয়।

আর এর সাথে যুক্ত হওয়া ‘উৎসবের' নানা নিজস্ব পদ্ধতি আসলেই জটিলতা সৃষ্টি করছে।

তাই মনের উৎসবকে শারীরিক উৎসবে পরিণত না করতে সতর্ক করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আর করোনার  টিকা না দিয়ে ফটোশেসনকে তারা কোনোভাবেই গ্রহণ করতে পারছে না। কিন্তু তাদের কথা কে শোনে। অ্যাপস-এর বিষয়টিও তাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। আর অ্যাপস নিয়ে তারা হতাশ হলেও তা প্রকাশ করতে পারছে না। কারণ, সেখানে তাদের নিয়ন্ত্রণ নেই।

 তারা এখন মনে করে, অনেক দিন ধরে টিকা দেয়া হবে। তাই যখন অ্যাপস আসবে তখন গতি বেড়ে যাবে। তাহলে শুধুমাত্র একটি অ্যাপস-এর কাছেই আমরা ধরা খেয়ে গেলাম?