করোনা জালিয়াতির ‘হোতারা’
করোনা সংক্রমণের ভুয়া রিপোর্ট দেয়ায় জড়িত থাকার অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ, জেকেজির সিইও আরিফুল হক চৌধুরী ও চেয়ারম্যান সাবরিনা চৌধুরীকে আটক করা হয়েছে৷ করোনা সংক্রান্ত দুর্নীতি ও হোতাদের নিয়ে ছবিঘর...
প্রথমে স্বামী, পরে স্ত্রী
জেকেজির বিরুদ্ধে এক ভুক্তভোগীর করা মামলার পর গত মাসে প্রতিষ্ঠানটির সিইও আরিফুল হক চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ এরপর গত রবিবার প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা চৌধুরীকেও (আরিফুলের স্ত্রী) আটক করা হয়েছে৷ এদিকে, জেকেজি হেলথ কেয়ারের নমুনা সংগ্রহের যে অনুমোদন ছিল, তা ২৪ জুন বাতিল করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর৷
ভুয়া প্রতিবেদন
পরীক্ষা না করে করোনা সংক্রমণের ভুয়া রিপোর্ট দেয়ার অভিযোগ ওঠা রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদকে বুধবার আটক করা হয়েছে৷ ঢাকার উত্তরা পশ্চিম থানায় ব়্যাবের দায়ের করা মামলায় বলা হয়েছে, ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে প্রায় ছয় হাজার লোকের কাছ থেকে দুই কোটি ১০ লাখ টাকা আদায় করেছে রিজেন্ট হাসপাতাল৷ ওই মামলায় সাহেদসহ ১৭ জনকে আসামি করা হয়েছে৷
মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স
২০১৩ সাল থেকে রিজেন্ট হাসপাতালের কোনো বৈধ লাইসেন্স নেই৷ তারপরও ‘কোভিড ডেডিকেটেড’ হাসপাতাল হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ওই হাসপাতালের সাথে চুক্তি করেছিল৷ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বুধবার জানিয়েছেন, সাবেক স্বাস্থ্যসচিব (ঘটনার সময় যিনি সচিব ছিলেন) আসাদুল ইসলামের মৌখিক নির্দেশে চুক্তিটি হয়েছে৷
জেকেজির বিরুদ্ধে অভিযোগ
জোবেদা খাতুন হেলথ কেয়ার, সংক্ষেপে জেকেজির বিরুদ্ধে অভিযোগ, সরকারের কাছ থেকে বিনামূল্যে নমুনা সংগ্রহের অনুমতি নিয়ে বুকিং বিডি ও হেলথকেয়ার নামে দুটি সাইটের মাধ্যমে টাকা নিচ্ছিল তারা৷ এছাড়া নমুনা পরীক্ষা ছাড়াই ভুয়া সনদ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে জেকেজির বিরুদ্ধে৷ প্রতিষ্ঠানটি সাড়ে ১১ হাজার ভুয়া করোনা টেস্টের হোতা বলে জানা গেছে৷
পিপিই এবং মাস্ক দুর্নীতি
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ৯০০ কোটি টাকার পিপিই ও মাস্ক দুর্নীতির তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন, দুদক৷ করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মধ্যে এন-৯৫ মাস্ক ও পিপিইসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে গত ১৫ জুন দুদক কর্মকর্তা জয়নুল আবেদীন শিবলীকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে৷
স্বাস্থ্যখাতে সিন্ডিকেট
আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক সোমবার ডয়চে ভেলেকে জানান, স্বাস্থ্যখাতে একটি শক্ত সিন্ডিকেট কাজ করছে৷ এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের লোকজনও জড়িত বলে৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তিনি এই সিন্ডিকেটের কথা জানিয়েছিলেন বলেও জানান৷
নথিতে যা আছে
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মে মাসের এক নথিতে দেখা যায়, গত ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠু নামে একজন এই সিন্ডিকেটের (সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী যার কথা বলেছেন) মূল নেতৃত্বে রয়েছেন৷ নথিতে সিন্ডিকেটের অংশ হিসেবে একজন সাবেক মন্ত্রী, একজন বর্তমান মন্ত্রী, তার পিএস ও তার ছেলের নামও রয়েছে৷ বর্তমান মন্ত্রী, তার পিএস এবং ছেলে এই সময়ে নানা অর্ডার ও কেনাকাটায় প্রভাব খাটাচ্ছেন বলে নথিতে বলা হয়৷
কে এই মিঠু?
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নথিতে সিন্ডিকেটের নেতা হিসেবে মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুর নাম উল্লেখ করা হয়েছে৷ নিম্নমানের মাস্ক ও পিপিই দুর্নীতি বিষয়ে দুদক যে তদন্ত শুরু করেছে সেখানেও মিঠুর নাম আছে৷ দুদকের কাছে মিঠুর পরিচয় হচ্ছে, তিনি ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের চেয়ারম্যান ও লেক্সিকোন মার্চেন্ডাইজ ও টেকনোক্র্যাট লিমিটেডের মালিক৷