1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনায় ঘরে ফেরা ‘বুমেরাং শিশুদের' কথা

৮ নভেম্বর ২০২১

বুমেরাং যেভাবে আবার যাত্রা শুরুর বিন্দুতে ফেরে, করোনার কারণে তারাও বাধ্য হয়ে ফিরেছে নিজের ঘরে৷ কিন্তু বাবা-মায়ের কাছে ফিরেও তাদের মনে স্বাধীনতা খোয়ানোর হতাশা, আমোদের ভুবন ছেড়ে বিষাদের সাগরে ডুবে থাকার যন্ত্রণা৷

https://p.dw.com/p/42jUd
Generation Nesthocker
ছবি: Jens Kalaene/picture alliance/dpa

জার্মানির হেসে রাজ্যের এক গ্রামের ছেলে ফয়সাল শরিফ ১৮ বছর বয়সে পাড়ি জমিয়েছিলেন লন্ডনে৷ সেখানে নিউরোসায়েন্সে স্নাতক হওয়ার লক্ষ্য পূরণের পথে পাঁচ বছর পর্যন্ত  যাত্রাটা ছিল বাধাহীন৷ তবে ষষ্ঠ বছরে করোনা মহামারি এসে বদলে দিলো সব৷ ইম্পেরিয়াল কলেজ ছেড়ে চলে আসতে হলো গ্রামের বাড়িতে৷

ইউরোপের কোন দেশের কতজন এভাবে ‘বুমেরাং শিশু' হয়ে বাড়ি ফিরেছেন তার প্রকৃত হিসেব এখনো অজানা৷ ইউরোপিয়ান স্টাডিজ ইউনিয়নের মেরাল নূর জানালেন, ক্রোয়েশিয়ার তথ্য তাদের কাছে আছে, যা থেকে পুরো ইউরোপ সম্পর্কেও কিছুটা অন্তত ধারণা করা যায়৷ তিনি জানান, করোনা মহামারি শুরুর আগে ক্রোয়েশিয়ায় শতকরা ৪৪ ভাগ সদ্য তারুণ্যে পা রাখা ছেলে-মেয়ে তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতো, কিন্তু করোনাকালে তাদের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৭৮ ভাগ৷

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, আকস্মিকভাবে ঘরে ফিরতে বাধ্য হওয়া ছেলেমেয়েরা নিজের বাড়িতেও স্বস্তি পায়নি৷ করোনার কারণে একে তো বন্দিজীবন, সপ্তাহান্তে পার্টির আনন্দ, বিভিন্ন সময়ে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা- এসব হঠাৎ করেই উধাও, পকেটটাও একেবারে ফাঁকা৷ ঘরের বাইরে থাকলে লেখাপড়া, ঘরভাড়া ইত্যাদি বাবদ কেউ কেউ বাড়ি থেকে কিছু টাকা পেতো, সেটা একেবারে বন্ধ৷ ব্রাসেলসকেন্দ্রিক সংস্থা ইউরোপিয়ান ইউথ ফোরামের পলিসি অফিসার ম্যানন দেশায়েস মনে করেন, করোনা অনেক তরুণের জীবনে বড় ধরনের বিপর্যয় ডেকে এনেছে৷ অনেকাংশে ‘স্বাধীনতা' হারিয়ে বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন তাদের অনেকেই৷

Neurowissenschaftler | Faissal Sharif
ফয়সাল শরিফ, লন্ডন থেকে ফিরে এখন বার্লিনেছবি: Faissal Sharif

দেশভেদে ভিন্ন চিত্র

ইউরোপে বয়স ১৮ হলে, অর্থাৎ প্রাপ্ত বয়স্ক হলেই সন্তানরা স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করে৷ অনেকেই এ সময় বাবা-মায়ের বাসা ছেড়ে নিজের আয়ে আলাদা থাকার চেষ্টা করে৷ সব দেশের চিত্র অবশ্য এক নয়৷ করোনার সময়ে বাড়িতে ফিরতে বাধ্য হওয়ার অভিজ্ঞতাও তাই সব দেশে একরকম নয়৷

ইটালির গুইলিয়ারও হঠাৎ বাড়িতে ফিরে দিশেহারা লাগছিল৷ তবে খুব তাড়াতাড়ি নিজের করণীয় বুঝতে পেরেছেন৷ ঘরের বাইরে আনন্দ করতে যাওয়ার কথা একেবারেই ভাবেননি, বরং ভেবেছেন করোনার ঝুঁকিতে থাকা মা-কে সুস্থ রাখার দায়িত্বের কথা৷ গুলিয়া জানালেন, এই দায়িত্ববোধ তিনি পেয়েছেন তার বড় ভাইয়ের কাছ থেকে, ‘‘আমার বড় ভাইয়ের বয়স এখন ৩০ বছর৷ এই বয়স পর্যন্ত ও আমাদের পরিবারের সবাইকে আর্থিক সহায়তা করেছে৷''

যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা

শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা জেনিফার ক্যাপুটো যুক্তরাষ্ট্রের ‘বুমেরাং শিশুদের' অবস্থা জানার জন্য একটা সমীক্ষা পরিচালনা করেছেন৷ সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাবা-মায়ের সঙ্গে ছিলেন এমন সন্তানদের চেয়ে ঘরে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন এমন সন্তানদের মাঝে বিষাদগ্রস্ততার উপসর্গ অনেক বেশি৷

শরিফের বোধোদয়

লন্ডন থেকে ফিরে এসে মুষড়ে পড়েছিলেন ফয়সাল শরিফ৷ স্বপ্ন ছিল ৪০ জন সহপাঠীর সঙ্গে ল্যাবরেটরিতে গবেষণা করবেন৷ পরীক্ষায় পাশ করে চাকরি করবেন৷ গবেষণা, পরীক্ষা, চাকরি কিছু্ই অবশ্য শেষ পর্যন্ত আটকে থাকেনি৷ গ্রামের বাড়ির ছোট ঘরে বসেই অনলাইনে পরীক্ষা দিয়েছেন৷ পরীক্ষায় পাশও করেছেন৷ স্নাতক পাশ করা শরিফ বার্লিনে একটা চাকরিও পেয়েছেন৷ করোনার কারণে প্রায় গৃহবন্দি থাকার ওই সময়টার কথা ভাবতে এখন ভালোই লাগে তার, ‘‘লন্ডন থেকে বাড়িতে মা-বাবার কাছে ফেরাটা আমার জন্য ছিল বড় এক আঘাত৷ তবে ওই সময়টা একদিক থেকে ভালোই ছিল৷ তখন আমি বুঝতে পেরেছি আমার ফেরার মতো একটা জায়গা আছে৷''

মার্সেল আবুরাকিয়া/এসিবি