করোনাভাইরাস: চীনে কেমন আছেন বাংলাদেশিরা?
২৬ জানুয়ারি ২০২০সম্প্রতি চীনের উহান থেকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়৷ প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে শহরটিকে কার্যত বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে এখন কর্তৃপক্ষ৷
জানা গেছে, সেখানকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তিনশোর মতো বাংলাদেশি ছাত্র-ছাত্রী রয়েছেন৷ তাদেরই একজন হাবিবুর রাহমান হাবিব৷ উহান শহরের উবে ইউনির্ভাসিটি অব টেকনোলজিতে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তিনি৷
ডয়চে ভেলেকে হাবিব জানান, ‘‘ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে দুইশ' বাংলাদেশি শিক্ষার্থী রয়েছেন৷ তাদের মধ্যে ৮০ জনের মত শীতের ছুটিতে বাংলাদেশে গেছেন৷ বাকি ১২০ জন চরম আতঙ্কে আছেন৷''
এই শিক্ষার্থীদের সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকেন৷ হাবিব জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাকে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে৷
‘‘আমরা সবাই যে যার রুমে অবস্থান করছি৷ রাস্তাঘাটতো দূরের কথা রুমের বাইরেও আমাদের বের হওয়া নিষেধ৷ এখানকার রাস্তাঘটে এখন আর লোকজন দেখা যায় না৷ দোকানপাট বন্ধ৷ আমার কাছে যে খাবার আছে তা প্রতিদিন একবেলা খেয়ে চালিয়ে যাচ্ছি৷ তবে তিন-চার দিনের বেশি এই খাবারে চলবে না৷ আমাদের সঙ্গে বাংলাদেশি দূতাবাসের যোগাযোগ হয়েছে৷ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও যোগাযোগ হয়েছে৷ তারা সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে৷ এখন কতটুকু হয় জানি না৷’’
হাবিব বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের কার কী খাবার দরকার তা লিখিতভাবে জানাতে বলেছে৷ ওই তালিকা অনুযায়ী সোমবার থেকে তাদের খাবার সরবরাহের কথা জানানো হয়েছে৷
উহান শহরে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের বিষয়ে বেইজিংয়ের বাংলাদেশ দূতাবাসের ডেপুটি মিশন চিফ মাসুদুর রহমান বলেন, ‘‘চীনা পরারাষ্ট্র দপ্তর এবং উবে প্রদেশের পররাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেছি৷ তাদের মাধ্যমে সেখানকার বাংলাদেশিদের সহায়তা দেয়ার চেষ্টা করছি৷ সরাসরি আমাদের কিছু করার সুযোগ নেই৷ সংক্রমণ ঠেকাতে উহান শহরকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে৷’’
বর্তমানে উহানের বিমানবন্দর থেকে শুরু করে শহরের সব ধরনের যান চলাচলও বন্ধ রয়েছে৷ পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত কেউ চাইলেও সেখান থেকে বাইরে যেতে পারবে না৷ ফলে বাংলাদেশি যারা আছেন তাদের সবাইকে যার যার অবস্থানেই থাকতে হবে৷ তাদের আপাতত দেশে ফেরার সুযোগ নেই বলে উল্লেখ করেন মাসুদুর রহমান৷
তিনি আরো জানান, ‘‘উহান সিটির ডেজিগনেটেড শপিংমলগুলো খোলা আছে, ওয়ালমার্ট খোলা আছে৷ সেখানে থেকে উহানের সরকারি কর্তৃপক্ষ খাবারের ব্যবস্থা করছে৷ কিন্তু যোগাযোগ ও ভাষার সমস্যার কারণে হয়তো কিছু জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে৷’’
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেক বাংলাদেশিই ব্যবসা ও শিক্ষার জন্য চীনে যাতায়াত করছেন৷ দেশটিতে ঠিক কতো বাংলাদেশি আছে সে বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়৷
বেইজিংয়ের বাংলাদেশ দূতাবাসের তথ্য অনুযায়ী, চীনে অবস্থানরত মোট বাংলাদেশির সংখ্যা তিন হাজার৷ এরা প্রায় সবাই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেন৷ আর বেসরকারি সূত্র বলছে, এ সংখ্যা দশ হাজার৷
তবে এখন পর্যন্ত দেশটিতে অবস্থানরত কোন বাংলাদেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এমন তথ্য পাওয়া যায়নি৷
মাসুদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শুধু বাংলাদেশি নয়, কোনো বিদেশি নাগরিকই এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি৷’’
চীনের বাংলাদেশ দূতাবাস এ বিষয়ে যোগাযোগ রক্ষার জন্য একটি হটলাইন চালু করেছে৷
মাসুদুর রহমান বলেন, ‘‘আমাদের চলাচলও এখানে সীমিত৷ আমদের যা করার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও উহানের প্রাদেশিক সরকারের মাধ্যমে করতে হবে৷ আমরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি৷’’
এদিকে চীনে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের স্বজনরা উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন৷
উহানে অবস্থানরত হাবিবের ভাই ইলিয়াস মন্ডল জানান, ‘‘আমরা অসহায় অবস্থার মধ্যে আছি৷ প্রতিদিনই ভাই ফোন করে খারাপ পরিস্থিতির কথা জানাচ্ছে৷ কিন্তু আমরা কী করব বুঝতে পারছি না৷’’