1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কম বয়সে নিয়মিত গাঁজা সেবনের পরিণতি ভালো নয়

৭ মার্চ ২০২৩

গাঁজার নেশা তেমন ক্ষতিকারক নয় বলে যারা মনে করেন, বিশেষজ্ঞরা তাদের সাবধান করে দিচ্ছেন৷ বিশেষ করে কম বয়সে নিয়মিত বেশি করে গাঁজা সেবন করলে শরীর ও মনের উপর তার কুপ্রভাব তুলে ধরা হচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/4OKgE
DW Global 3000 | Hanf
ছবি: IMAGO

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর গাঁজা সেবনকারীদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে৷ বিশেষ করে কিশোর ও তরুণদের মধ্যে জয়েন্টের প্রতি আসক্তি বাড়ছে৷

প্রফেসর মাক্সিমিলিয়ান গার সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, যত কম বয়সে এমন আসক্তি হয়, ক্ষতির ঝুঁকির মাত্রাও তত বেশি হয়৷ এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘‘আমরা দেখেছি, যেসব মানুষ জীবনের প্রথম পর্যায়ে, অর্থাৎ ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সে নিয়মিত ও বেশি পরিমাণ গাঁজা সেবন করেছেন, তাঁদের শরীরে ক্রনিক ও স্থায়ী পরিবর্তন এসেছে৷ এমনকি মস্তিষ্কেও পরিবর্তন ঘটেছে৷ বিশেষ করে মস্তিষ্কের সামনের অংশে, যেখানে সমস্যার সমাধান, নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণের মতো কাজ হয়, সেখানে এমন প্রভাব দেখা যায়৷ এ ক্ষেত্রে কম বয়সে নিয়মিত গাঁজা সেবন শুরু করা মানুষের মস্তিষ্কের সংকোচন লক্ষ্য করা গেছে৷''

জয়েন্ট সেবন শুরু করার সময়ে লিনুস নয়মায়ারের কখনো কোনো মানসিক সমস্যা ছিল না৷ কিন্তু কয়েক মাস ধরে গাঁজা সেবনের পর তাঁর ‘প্যানিক অ্যাটাক' শুরু হলো৷ লিনুস বলেন, ‘‘ঘাম, টাকিকার্ডিয়া বা বুক ধড়ফড়ানি, গা গুলানো, মাথা ঘোরা শুরু হলো৷ মাথায় নানা চিন্তা ঘুরে চলতো, কিন্তু সেগুলির নাগাল পাওয়ার কোনো উপায় ছিল না৷ কখনোই সম্পূর্ণ চিত্র পেতাম না৷ মনে ভয় জন্মাতো৷ এমন অবস্থার ঠিকমতো বর্ণনা দেওয়া কঠিন৷ মনে হতো, যে কোনো মুহূর্তে মরে যেতে পারি, হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে যাবে, আমি নিঃশ্বাস নিতে পারবো না৷ যে কোনো চেষ্টা শুরু করি না কেন, খেই হারিয়ে যেত৷''

বর্তমানে এমন অবস্থার জিনগত উৎস নিয়ে গবেষণা চলছে, যা অন্যান্য রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে৷ মাদকের গঠনও এ ক্ষেত্রে প্রভাব রাখতে পারে৷ প্রফেসর মাক্সিমিলিয়ান গার বলেন, ‘‘গত কয়েক বছরে ‘ক্যানাবিস স্যাটাইভা' জাতের গাছ পালনের চেষ্টা করা হয়েছে, যার টিএইচসি মাত্রা বেশি৷ কারণ সে ক্ষেত্রে সিউডোফিন বা মানসিক প্রভাব আরও শক্তিশালী হয়, সেটা একটা বড় ভূমিকা পালন করে৷ এক গবেষণার আওতায় আমরা ২০০০ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এমন রোগী সম্পর্কে তথ্য বিশ্লেষণ করেছিলাম৷ আমরা লক্ষ্য করলাম, এই সময়কালে জার্মানির হাসপাতালগুলিতে গাঁজা সেবনের কারণে মানসিক ব্যাধি নিয়ে অনেক বেশি রোগী ভর্তি হয়েছিলেন৷''

এমন রোগীর সংখ্যা সব মিলিয়ে পাঁচ গুণ বেড়ে গিয়েছিল৷ সেইসঙ্গে লিনুস নয়মায়ারের মতো রোগী ভর্তি না হয়েও চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে এসেছেন৷ তাঁর আরও ঘনঘন ‘প্যানিক অ্যাটাক' হচ্ছিল এবং তিনি নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছিলেন৷ এক মনোরোগ বিশেষজ্ঞ গাঁজার কারণে সাইকোসিস শনাক্ত করে ভীতি কাটাতে তাঁর জন্য  অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধের প্রেসক্রিপশন লিখে দিয়েছিলেন৷ হাই স্কুলের গণ্ডি শেষ করার সেই বয়সে তিনি আচমকা এমন অ্যাটাক সামলাতে শিখেছিলেন৷ লিনুস বলেন, ‘‘আমি নিজে যেটা লক্ষ্য করেছিলাম, সেটা হলো অ্যাটাক হতে দিলে তার সংখ্যা কমে যায়৷ এমনই কিছু ঘটে৷ যখন মনে হয় উদ্বেগ বা ভয় দেখা দিচ্ছে, তখন ভাবতাম যা হবার হবে৷ আমি অজ্ঞান হয়ে যাবো বা হয়তো মরেই যাবো৷ সেটা হতে দেবার চিন্তা বা ‘নিজেকে উন্মুক্ত' করার সেই ভাবনা থেকেই আমার অবস্থার উন্নতি হলো৷''

নানা প্রচলিত গুজব ভুল প্রমাণ করে গাঁজা যে সত্যি আসক্ত করে তোলে, তার যথেষ্ট প্রমাণ আছে৷ এমন ভুল ধারণার নেতিবাচক প্রভাব দেখা যায়৷ প্রো. মাক্সিমিলিয়ান গার মনে করেন, ‘‘সত্যিকারের আসক্তি থাকলে খুব কম রোগীই প্রথম চেষ্টায় মাদক সেবন বন্ধ করতে পারে এবং সেই সিদ্ধান্ত ধরে রাখতে পারে৷ অর্থাৎ, গাঁজা সেবন চালিয়ে যাবার হার অত্যন্ত বেশি৷ রোগী এর পরেও গাঁজা সেবন করতে থাকলে এবং তারপর থামিয়ে দিলে আরও খারাপ প্রভাব দেখা যায়৷ তার পরেও কিছু উপসর্গ থেকে যেতে পারে৷''

লিনুস সেটা পেরেছেন৷ ছয় বছর ধরে সাইকোথেরাপির পর তাঁর আজ কোনো উপসর্গ নেই৷ ধাপে ধাপে ওষুধ খাওয়াও বন্ধ করতে চান তিনি৷ উচ্চশিক্ষা শেষ করে তিনি ইতোমধ্যে নির্মাণক্ষেত্রে ম্যানেজার হিসেবে কাজ শুরু করেছেন৷ লিনুস আর কখনোই জয়েন্ট না ধরানোর ব্রত নিয়েছেন৷

লারা সেল/এসবি