1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কবিতা ও গানের কারণে ধরা পড়ল খুনি

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুনদিল্লি
৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

খুনির বয়স ১৯ বছর৷ সাজা হয়েছে যাবজ্জীবন৷ হত্যা করেছে তার প্রেমিকা, ১৭ বছরের এক স্কুল ছাত্রীকে৷ হত্যাকাণ্ডের অকাট্য প্রমাণ একটি কবিতা ও ইউটিউবের একটি গান৷

https://p.dw.com/p/34Tc6
প্রতীকী ছবিছবি: Getty Images

এক যুবক তার গার্লফ্রেন্ডকে হত্যা করেছে, তাই নিয়েই সেই গান বাঁধা৷ অল্পবয়সি ছেলেরা এইসব নৃশংসতায় জড়িয়ে পড়ার কারণ চারপাশে নিত্যদিন যেসব খুনখারাপির ঘটনা ঘটছে, তার অভিঘাত তাদের মনে ছাপ রাখে, মনে করেন মনস্তাত্ত্বিক ডাঃ সাগ্নিক মুখোপাধ্যায়৷

এক কিশোর৷সে হত্যা করেছে এক কিশোরীকে, একেবারে পরিকল্পিতভাবে৷ দ্বাদশ শ্রেণির ওই কিশোরী ছাত্রী শ্রেয়া শর্মাকে যে কোনো মূল্যে পেতে চেয়েছিল ওই কিশোর৷ কিন্তু কিশোরী ধরা দেয়নি৷ প্রেমে ব্যর্থ হয়েই সে এই অপরাধ করেছে৷ প্রেমিকাকে হত্যার সময় সে ভিডিওতে খুনের গান শুনেছিল এবং দেখেছিল৷ তারপর পুরো হত্যাকাণ্ডটাই ছিল একেবারে ঠান্ডা মাথায় ছক বেঁধে৷ সার্থক কাপুর নামে হত্যাকারী ছেলেটিকে আসামির কাঠগড়ায় তোলে দিল্লি পুলিশ৷ ওই ভিডিও ফুটেজটি অপরাধের সবথেকে বড় প্রমাণ বলে মনে করেন আদালতের বিচারক৷ ভিডিওতে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, আসামি কি করতে চলেছে এবং সেটাই সে শেষ পর্যন্ত করে৷ ছেলেটি কিশোরীর গলা দেওয়ালের সঙ্গে চেপে ধরে কনুই দিয়ে, যেভাবে গানের ভিডিওতে দেখানো হয়েছিল৷ শ্বাসরোধ করে হত্যা করে কিশোরীকে৷ পুলিশও সিসিটিভি ফুটেজ দেখে বলেছে, হত্যার দিনও ওরা দুজনে একসঙ্গে ছিল৷

আদালতের বিচারক মনে করেন, ফুটেজে কোনোরকম কারসাজি করা হয়নি৷ হত্যার দিন বিকেল পাঁচটার সময় দুজনকে একসঙ্গে দেখা গিয়েছিল৷ ফুটেজে একটি কালো ব্যাগও দেখা যায়, যেটি শ্রেয়ার সঙ্গে থাকতো৷ কবিতাটিও পেশ করা হয় আদালতে৷ কবিতাটি যে ঐ কিশোরীর লেখা সেটা ফরেনসিক টেস্ট করে জানা যায়৷ রায়ে বলা হয়, ছেলেটি হত্যার অনেক আগে থেকেই মেয়েটির পেছনে লেগেছিল৷ হয়রানি করেছিল৷ নিগ্রহ করেছিল৷ এমন কি সে তাকে যে খুন করতে পারে, তার ইঙ্গিতও দিয়েছিল ইনস্টাগ্রামে৷ কাজেই এটা ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পিত খুন ছাড়া আর কিছু নয়৷

আজকাল এইসব অল্প বয়সি ছেলেদের মধ্যে জিঘাংসার মনোবৃত্তি এত বেশি কেন? ডয়চে ভেলে এই প্রশ্নটা রেখেছিল মনস্তত্ত্ববিদ ডাঃ সাগ্নিক মুখোপাধ্যায়ের কাছে৷ উত্তরে তিনি বললেন, ‘‘অল্পবয়সি ছেলেরা নিত্যদিন নানা জায়গায়, নানা ধরনের জিনিস দেখছে বলেই শিখছে৷ সেটা ভিডিও গেম হোক বা টিভ৷ যে-কোনো ক্রাইমের একটা মেথডলজি থাকে৷ মানে, আমরা দেখছি আর শিখছি৷ এখানে একটি মেয়ে ছেলেটির প্রেম প্রত্যাখ্যান করেছে৷ সেটা সে করতেই পারে৷ তাই বলে হত্যা কেন ? মূলত এটা হচ্ছে, এক ধরনের অ্যাগ্রেশন বা আগ্রাসন৷ অ্যাগ্রেশনের কারণ সহ্যশক্তির অভাব৷ আমরা যখন যা চাই, তখনই তা পেতে চাই৷ পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেবার ক্ষমতা হারাচ্ছি৷ দ্বিতীয়ত, আমরা ইমোশন বা আবেগ ম্যানেজ করতে পারছি না৷''

‘পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেবার ক্ষমতা হারাচ্ছি’

এর পেছনে কি ধর্ষকাম কাজ করে? উত্তরে ডা. মুখোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘স্যাডিজম হলো, কাউকে নির্যাতন করে আনন্দ বা সুখ উপভোগ করা৷সেটা যে হত্যায় পরিণত হয় না, এমন নয়৷ এখানে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, সেটা এক ধরনের ইমপালসিভ বা আবেগের তাড়না৷ স্যাডিজম কিন্তু মৌলিক অর্থে কাউকে মেরে ফেলা নয়৷ তাঁকে দৈহিক ও মানসিকভাবে আঘাত করা, অত্যাচার করা৷ সেই থেকে সে মানসিক তৃপ্তি পায়৷ এই ক্ষেত্রে প্রেমে ব্যর্থ হওয়াকে ছেলেটি মেনে নিতে পারেনি৷ তাঁর ইগোতে লেগেছে৷ আরো একটা কথা, এই ধরনের অপরাধের শাস্তি চট করে হয় না৷ হলেও অনেক দেরিতে৷ হয়ত দশ বছর পরে৷ পাবলিকের স্মৃতিশক্তি কম৷ আজ দেখলাম একজন খুন করেছে, চার-পাঁচদিনের মাথায় ভুলে গেলাম৷ এই থেকে অপরাধের প্রবণতা বেড়ে যায়৷ বিচার এবং শাস্তি দুটোই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হওয়া দরকার৷

মেয়েটি দিল্লির রোহিনী এলাকার সেক্টর সতেরোর একটি স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী৷ তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়৷ গত ১৬ই অগাস্ট থেকে সে নিখোঁজ ছিল৷ কোচিং ক্লাসে গিয়ে আর বাড়ি ফেরেনি৷ অনেক খোঁজাখুজিতেও মেয়েটিকে পাওয়া যায়নি৷ সব চেষ্টা ব্যর্থ হলে পুলিশে খবর দেওয়া হয়৷ তদন্তে নেমে পুলিশ ছেলেটিকে গ্রেপ্তার করে৷ পুলিশের জেরায় ছেলেটি সব স্বীকার করে৷ কিশোরীর লাশ যেখানে ফেলেছিল, সেই জায়গাটা দেখিয়ে দেয়৷ কিশোরীর মা-বাবা মেয়ের লাশ শনাক্ত করে৷ তদন্তে উঠে আসে আসামি অনেকদিন ধরেই কিশোরীকে জ্বালাতন করছিল৷ কিছুদিন আগে কোচিং সেন্টারের কেমিস্ট্রি টিচার শ্রেয়ার মা-বাবাকে জানান যে, কোচিং সেন্টারের বাইরে একটি ছেলে তাঁদের মেয়েকে দৈহিক নির্যাতন করেছে৷ শুনানিকালে কিশোরীর এক বান্ধবী জানায়, শারীরিক নিপীড়নে শ্রেয়া মানসিক চাপে ভুগতে থাকে৷ ডুবে যায় অবসাদে৷

আসামি পক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য, যেসব প্রমাণ পেশ করা হয়েছে, তার সবই সাজানো৷ ছেলেটির বাড়ি থেকে কিছুই পাওয়া যায়নি৷ পুলিশ জানতো, কিশোরীর লাশ কোথায় পড়ে আছে৷ তাঁর মক্কেলের বিরুদ্ধে সব অভিযোগই পুলিশের মনগড়া৷ আদালতে এই বক্তব্য খারিজ হয়ে যায়৷ ছেলেটিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন বিচারক, যাতে আসামি  জীবনভর তার কৃতকর্মের কথা মনে রাখে৷ মনে রাখে কী নৃশংস অপরাধ সে করেছে৷ সেইসঙ্গে দুই লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য