1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিশ্বভারতীতে আধাসেনা মোতায়েনের উদ্যোগ

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৪ ডিসেম্বর ২০১৯

রবীন্দ্রনাথের ভাবধারায় গড়ে ওঠা বিশ্বভারতীতে আধাসেনা মোতায়েনের উদ্যোগ ঘিরে চলছে বিতর্ক৷ কর্তৃপক্ষের অনুরোধ কেন্দ্রের মাধ্যমে ইতিমধ্যে আধাসেনার কাছে পৌঁছেছে বলে সংবাদে প্রকাশ৷ এর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছেন ছাত্ররা৷

https://p.dw.com/p/3UCaF
ছবি: DW/P. Samanta

ভারত ও বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত যাঁর রচনা, সেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাতে গড়ে ওঠা শান্তিনিকেতন দুই দেশের মানুষের কাছেই সংস্কৃতির তীর্থ৷ প্রকৃতির কোলে আশ্রমের পাঠশালা থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষার জন্য দেশে-বিদেশে সমাদৃত এই প্রতিষ্ঠান৷ চাপমুক্ত, আনন্দময় পরিবেশে জ্ঞানলাভ ও আত্মশক্তির বিকাশের মন্ত্র নিয়ে চলেছে বিশ্বভারতী৷ একটি সর্বভারতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে বিতর্কের কেন্দ্রে চলে এসেছে এই প্রতিষ্ঠান৷ এই সংবাদ অনু্যায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রককে চিঠি লিখে নিরাপত্তার স্বার্থে ক্যাম্পাসে স্থায়ীভাবে আধাসেনা মোতায়েনের আবেদন জানিয়েছেন৷ কেন্দ্রের মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের অধীনে রয়েছে এই কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়৷ উপাচার্যের চিঠি পেয়ে মন্ত্রক থেকে সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্স (সিআইএসএফ)-কে বাহিনীর ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে৷

রবীন্দ্রনাথ যে আশ্রম-শিক্ষার কথা বলেছিলেন, বন্দুক ও উর্দিধারী জওয়ান তার সঙ্গে খাপ খায় না: জয়দীপ সাহা

কোন পরিস্থিতিতে আধাসেনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলেন কর্তৃপক্ষ? গত মাসে ক্যাম্পাসে ছাত্র আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে অস্বস্তিতে পড়েছিল কর্তৃপক্ষ৷ ফি বৃদ্ধির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছিলেন পড়ুয়ারা৷ তাঁদের অবরোধে ক্যাম্পাসে আটকা পড়েন শিক্ষক, আধিকারিকেরা৷ এতে ক্ষুব্ধ হন উপাচার্য৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তায় যে বেসরকারি কর্মীরা নিযুক্ত, তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ৷ বলা হয়, রাজনৈতিক দলের নির্দেশে বেসরকারি নিরাপত্তা কর্মীরা কাজ করেন৷ তাই তাঁরা আন্দোলন ঠেকাতে নিজেদের ভূমিকা পালন করছেন না৷ সে কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বজায় রাখতে, পঠনপাঠনে অচলাবস্থা রুখতে আধাসেনা মোতায়েনের আবেদন করা হয়েছে৷ উপাচার্য তাঁর চিঠিতে অভিযোগ করেছেন, নিরাপত্তা কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মানছেন না৷ এ জন্য তাঁদের কোনো শাস্তির ভয়ও নেই, যেহেতু শাসকদলের কর্মীরা অভয় দিচ্ছেন৷ আবেদন পত্রের দাম বাড়ানোর বিরুদ্ধে পড়ুয়াদের অবস্থান বিক্ষোভের সময় নিরাপত্তা কর্মীরা হাত গুটিয়ে ছিলেন বলে কর্তৃপক্ষের অভিযোগ৷ উপাচার্য মনে করেন, সিআইএসএফ জওয়ানদের মোতায়েন করলে ক্যাম্পাসে শান্তি থাকবে৷

কোনো কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আধাসেনা মোতায়েন নেই৷ যদিও অতীতে একাধিক প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে কেন্দ্রীয় সরকারকে এ ধরনের অনুরোধ করা হয়েছে৷ বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়, হায়দ্রাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে আধাসেনা মোতায়েন করতে বলা হয়েছিল৷

এতে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হবে: সুপ্রিয় ঠাকুর

উপাচার্যের চিঠির কথা প্রকাশ্যে আসতেই আন্দোলনে নেমেছেন বিশ্বভারতীর পড়ুয়ারা৷ এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষাভবনের ছাত্র ও এসএফআই ইউনিট সেক্রেটারি জয়দীপ সাহা বলেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথ যে আশ্রম-শিক্ষার কথা বলেছিলেন, বন্দুক ও উর্দিধারী জওয়ান তার সঙ্গে খাপ খায় না৷ ছোট ছেলেমেয়েরা আশ্রমে পড়তে এসে দেখবে বন্দুক হাতে পুলিশ পাহারা দিচ্ছে, এটা কাম্য নয়৷’’ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আঙুল তুলে জয়দীপের বক্তব্য, ‘‘ছাত্র ও কর্মীরা তাদের দাবিদাওয়া ও অভিযোগ নিয়ে আন্দোলন করবেই৷ সেজন্য ক্যাম্পাসে আধাসেনা ডাকা যায় না৷ এটা গণতান্ত্রিক অধিকারে হস্তক্ষেপ৷’’ আধাসেনা মোতায়েনের পক্ষে নন বিশ্বভারতীর পাঠভবনের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সুপ্রিয় ঠাকুর৷ তাঁর মন্তব্য, ‘‘ক্যাম্পাসে মোতায়েন করার কোনো দরকার নেই৷ এতে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হবে৷ এখন যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে, তাকে আরো জোরদার করলেই হবে৷’’

বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে সামগ্রিক ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া দেওয়া হচ্ছে না৷ সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি ব্যাপক আলোচিত হলেও তাঁরা নীরব৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের প্রধান, সহকারী রেজিস্ট্রার অনির্বাণ সরকার ডয়চে ভেলের ফোন ধরেননি৷ আন্দোলনকারী ছাত্ররা এ নিয়ে উপাচার্যকে ডেপুটেশন দিয়েছেন৷ তার জবাব মেলেনি বলে দাবি এসএফআই-এর৷ স্পর্শকাতর বিষয় বলে মুখ খুলছেন না শিক্ষকরা৷ বিশ্বভারতীর বাংলা বিভাগের অধ্যাপক বিশ্বজিৎ রায় ডয়চে ভেলের প্রশ্ন শুনে বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে আমার কোনো বক্তব্য নেই৷’’