1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কপিরাইট বিভ্রান্তি

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
২১ আগস্ট ২০১৭

সত্যজিৎ রায়ের বিখ্যাত গোয়েন্দা চরিত্র ফেলুদার চিত্রসত্ত্ব নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল বাংলাদেশের এক প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে৷ সমস্যা আপাতত মিটলেও ভবিষ্যতের বিরোধের সম্ভাবনা থেকেই গেল৷

https://p.dw.com/p/2iXhT
Indien A tribute to Satyajit Ray
ছবি: DW/P. Samanta

সত্যজিৎ রায় মারা গেছেন ২৫ বছর হয়ে গেল৷ এই দীর্ঘ সময়ে সত্যজিৎ রায়ের সৃষ্ট কোনো চরিত্র, বিশেষ করে ফেলুদাকে নিয়ে রায় পরিবারের বাইরে কেউ ছবি তৈরি করেননি৷ বস্তুত সত্যজিতের কোনো গল্পেরই ফিল্ম অথবা টিভির সত্ত্ব বাইরের কারও হাতে যায়নি৷ যে কারণে সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ফেলুদার এক আধুনিক অবতারের ‘‌টিজার'‌ দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন অনেকেই৷ আড্ডাটাইমস ডট কম নামে এক সাইটের থেকে পোস্ট করা ওই ভিডিও টিজারে জানানো হয়েছিল, ওয়েব সিরিজে ওই নতুন ফেলুদার আগমনবার্তা৷ বাংলা ছবির জনপ্রিয় অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের এই ফেলুদা দৃশ্যতই অনেক আধুনিক৷ নিয়মিত যোগাসন নয়, চলতি ধারা মেনে শরীরচর্চার জন্য এই ফেলুদা রোজ জিমে যায়৷ এই ফেলুদা কম্পিউটারে সিদ্ধহস্ত এবং প্রায় জেমস বন্ডের কায়দায় এই ফেলুদা চলন্ত ট্যাক্সির জানলা থেকে রিভলভার বের করে গুলি চালায়৷

স্পষ্টতই দু'‌রকম প্রতিক্রিয়া হয়েছে এই টিজারের৷ যাঁরা পুরনো ফেলুদা-ভক্ত, তাঁরা আপশোস করেছেন যে হায়, এমন দিনও দেখতে হলো, যেখানে ফেলুদা জেমস বন্ডের বাঙালি অবতার হয়ে উঠছে!‌ কিন্তু যারা আজকালকার ছেলে-মেয়ে, তারা উচ্ছ্বসিত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে এই নতুন ফেলুদাকে দেখে৷ তাদের মনে হয়েছে, ফেলুদার এখন এরকমই আধুনিক, যুগোপযোগী হওয়া উচিত৷ এছাড়া এদের এক বড় অংশ এ-ও মনে করেছে যে, অবশেষে সত্যজিৎ রায়ের পরিবারের বাইরে বেরোতে পেরে ফেলুদাও সম্ভবত হাঁফ ছেড়ে বাঁচবেন৷ কারণ সত্যজিৎ নির্দেশিত ‘‌সোনার কেল্লা' বা ‘‌জয় বাবা ফেলুনাথ'‌ ছবিতে পরিচালনার যে মুন্সিয়ানা, যে বুদ্ধি, বিচক্ষণতা এবং রসবোধের ঝলক থাকত গোটা ছবিজুড়ে, সন্দীপ রায় নির্দেশিত ফেলুদায় তা শোচনীয়ভাবে অনুপস্থিত৷

এছাড়া তৃতীয় একটি প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেল খোদ সন্দীপ রায়ের থেকে, যিনি জানালেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত এই টিজার দেখে তিনি বিস্মিত৷ কারণ বাংলাদেশের ক্যান্ডি প্রোডাকশন্স লিমিটেডের কাছে ফেলুদার ৩০টি গল্পের টিভি সিরিজ এবং ওয়েব সিরিজের সত্ত্ব তিনি বিক্রি করেছেন এই শর্তেই যে ছবিগুলি ভারতে দেখানো যাবে না৷ অর্থাৎ ভারতীয় বাঙালি দর্শকদের কাছে ফেলুদার এক্সক্লুসিভিটি সন্দীপ রায়ই ধরে রাখতে চেয়েছিলেন৷ কিন্তু তিনি সম্ভবত যেটা বোঝেননি, ওয়েব, অর্থাৎ ইন্টারনেটের কোনো ভৌগোলিক সীমানা হয় না৷ প্রযুক্তিগতভাবে যদিও এমন ব্যবস্থা করা যায় যে নির্দিষ্ট এক বা একাধিক দেশে কোনো ওয়েব সিরিজ দেখা যাবে না৷ কিন্তু বাংলাদেশের ক্যান্ডি প্রোডাকসন্সের সঙ্গে চুক্তিতে সম্ভবত সেই ব্যবস্থার নির্দিষ্ট উল্লেখ ছিল না৷ ফলে ক্যান্ডির সঙ্গে ভারতের ওয়েবসাইট আড্ডাটাইমসেরও চুক্তি করার কোনো আইনি বাধা ছিল না৷

যদিও শেষ পর্যন্ত পারস্পরিক সমঝোতায় বিষয়টি মিটেছে৷ সন্দীপ রায় এবং ক্যান্ডি প্রোডাকশন্সের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়র শাকিলের সই করা এক যৌথ ঘোষণাপত্রে জানানো হয়েছে, সত্যজিৎ রায়ের যে ফেলুদার গল্প নিয়ে সন্দীপ রায় এর মধ্যেই ছবি বানিয়ে ফেলেছেন, সেগুলিরই আপাতত টিভি এবং ওয়েব সিরিজ বানাবে ক্যান্ডি৷ যদিও সেই তালিকায় ‘‌গ্যাংটকে গন্ডোগোল'‌-এর নামও ঢুকে গেছে, ফেলুদার যে গল্পটি নিয়ে সন্দীপ রায় ছবি তৈরির কথা ভেবেছেন মাত্র, এখনও শুটিংই শুরু হয়নি!‌ আরও একটি সমস্যা হতে পারে ভবিষ্যতে৷ সন্দীপ রায় ফেলুদার গল্প নিয়ে ছবি বানান দু'‌বছরে একটি, বা বছরে একটি৷ সেখানে তিনি না বানানো পর্যন্ত বাংলাদেশে টিভি সিরিজ, বা ওয়েব সিরিজ বানানো যাবে না, চুক্তির বাইরের এই সমঝোতা টিকিয়ে রাখার ধৈর্য কতদিন থাকে, সংশয় আছে সে নিয়ে৷

এই বিষয়ে কথা বলার জন্য ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে বহুবার সন্দীপ রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা হয়েছিল৷ কিন্তু তাঁর বাড়ির ল্যান্ডলাইন ফোনটি বেজেই গেছে, কেউ তোলেনি৷ সন্দীপ রায় এখনও, আজকের দিনেও মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন না৷ হয়ত এই আধুনিক প্রযুক্তি তাঁকে যথেষ্ট স্বস্তি দেয় না৷