1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সোয়ানকর্মীদের কান্না

আশীষ চক্রবর্ত্তী২৪ জুলাই ২০১৫

হাসিমুখে বাড়ি ফিরতেই রাজপথে নেমেছেন৷ সবাই মিলে ঈদ করবেন – সে আশা পূরণ হয়নি৷ ১৩'শ সংসারে এখনো অভাব, অনিশ্চয়তা, আতঙ্ক৷ এরই মাঝে কেউ গেছেন হাসপাতালে, কারো স্বামী বলেছে, ‘ট্যাকা না পাইলে তালাক৷' কে কবে শুনবে তাঁদের কান্না?

https://p.dw.com/p/1G4K0
Frauen Textilarbeiterinnen Näherinnen Bangaldesch Gewandnäherinnen
(ফাইল ফটো)ছবি: Harun Ur Rashid Swapan

ঈদ মানেই আনন্দ, তবে সে আনন্দ যেন সবার জন্য নয়৷ বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্প শ্রমিকদের বড় একটা অংশের জন্য প্রতি বছরই ঈদ আসে প্রতারিত হবার শঙ্কা নিয়ে৷ পাওনা বেতন-বোনাস যথানিয়মে তাঁদের হাতে আসে না৷ আন্দোলনে নামতে হয়৷ দাবি আদায়ে যত দেরি ক্ষোভ তত বাড়ে৷ রাস্তায় মিছিল এবং এক পর্যায়ে ক্ষোভে ভাঙচুরে নেমে পুলিশের লাঠিচার্জ, গ্রেপ্তার, নির্যাতনই জোটে তাঁদের৷

গেল ঈদ-উল-ফিতরে সার্বিক পরিস্থিতি আগের কয়েক বছরের তুলনায় ভালোই ছিল৷ বিজিএমইএ জানিয়েছে, একটি ছাড়া সব পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বেতন-বোনাস ঈদের আগেই পরিশোধ করা হয়েছে৷ এই ‘সব' কি সত্যিকারের ‘সব'? কাজির অনেক গরুই কিন্তু কিতাবে থাকে, গোয়ালে নয়! কিছু কারখানায় ঈদের আগে বেতন-বোনাস একেবারেই দেয়নি, কোনো কোনোটিতে আংশিক পাওনা পরিশোধ করা হয়েছে – এমন খবরও কিন্তু সংবাদমাধ্যমে এসেছে৷

Deutsche Welle DW Arun Chowdhury
আশীষ চক্রবর্ত্তী, ডয়চে ভেলেছবি: DW/P. Henriksen

তবে ঈদের আগে প্রায় সব কারখানায় বেতন-বোনাস হওয়াটাও খুব ভালো খবর৷ প্রতি বছর তো এইটুকুও সহজে হয় না৷ স্বস্তি পাওয়া যেত, সোয়ান গার্মেন্টসের সমস্যার একটা সমাধান হলে৷ কিন্তু এ ব্যাপারে বিজেএমইএ ‘শ্রম মন্ত্রনালয় দায়িত্ব নিয়েছে' জানিয়েই খালাস৷ শ্রম মন্ত্রণালয় সমাধানের উপায় বের করতে কমিটি গঠন করেছে৷ মন্ত্রণালয় ওই কমিটি গঠনের বাইরে খুব তাড়াতাড়ি শ্রমিকদের কষ্ট লাঘব করার জন্য আর কিছু করেছেন বলে জানা যায়নি৷

ফলে এতগুলো মানুষের ঈদ কেটেছে রাস্তায়৷ এখনো তাঁদের দিন কাটে রাজপথে আর রাত প্রেস ক্লাবের অদূরের মুক্তিভবনে

আন্দোলনরত কর্মীদের ঈদে বাড়ি যাওয়া হয়নি৷ লাগাতার আন্দোলনের ধকল সইতে না পেরে অসুস্থ হয়ে কেউ কেউ গিয়েছেন হাসপাতালে৷ কারো কারো জন্য ঘরে ফেরার পথও প্রায় বন্ধ৷ মনি বেগমকে তাঁর স্বামী ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘ট্যাকা পাস না, ঘরে উঠিস না, তোরে তালাক দিমু৷''

এ সব খবর পত্রিকা খুললেই পড়া যাচ্ছে, টেলিভিশনে দেখা যাচ্ছে৷ অনলাইনে বিদেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের প্রতিক্রিয়াও উঠে এসেছে গত কয়েকদিনে৷

সোয়ান গার্মেন্টসের মালিক মারা গেছেন৷ সে কারণে তো নেহায়েত মগের মুল্লুক না হলে কারখানা হুট করে চারমাস কেউ নাকে তেল দিয়ে ঘুমাতে পারে না৷ ‘মালিকবিহীন' সোয়ান গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ তা-ই করছে৷ অথচ সব জরুরি অবস্থায় সমাধানেরও জরুরি উপায় থাকে, উপায় বের করতে হয়৷ গত এপ্রিল থেকে কারো তরফেই এমন কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি৷ শ্রম মন্ত্রণালয় দেখিয়ে বিজেএমই-র দায়িত্ব শেষ৷ শ্রম মন্ত্রণালয় একটা কমিটি গঠনের বাইরে কিছু করে থাকলেও তা দৃশ্যমান নয়, বোধগম্য নয়৷

এদিকে আমরা দেখছি, সোয়ান গার্মেন্টসের কর্মীদের কথা দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বহুদূর চলে এসেছে৷ ‘ক্লিন ক্লথ ক্যাম্পেইন' জার্মানির সর্বস্তরের পোশাক ক্রেতাকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সোয়ান গার্মেন্টসের কর্মীদের দুর্ভোগের কথা জানিয়েছে৷ সোয়ানের অন্যতম ক্রেতা, জার্মানির চেইন স্টোর আল্ডির সামনে সমাবেশ করে মনি বেগম, মিনতিদের ন্যয্য দাবির প্রতি সমর্থন জানানো হচ্ছে৷ ওয়ার্ল্ড ট্রেড ইউনিয়ন সেন্টারও তাঁদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছে৷

কিন্তু শ্রমমন্ত্রী বা সরকারের অন্য কোনো দায়িত্বশীল একবারের জন্যও যাননি প্রেস ক্লাব বা মুক্তি ভবনে৷ তাঁরা কি স্লোগান, মিছিল, কান্না কিছুই শুনতে পান না? কান পাতলেই তো শোনা যায়, চোখ মেললেই দেখা যায়!

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান