1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কংগ্রেসের পালে কি হাওয়া তুলবেন প্রিয়াঙ্কা?

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২৬ জানুয়ারি ২০১৯

নিবার্চনের মরশুমে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর জাতীয় কংগ্রেসে যোগদান নিঃসন্দেহে বড় চমক৷ ইন্দিরা গান্ধীর নাতনি তথা নেহেরু পরিবারের এই সদস্যের যোগদানে কংগ্রেস কতটা লাভবান হবে? বড় কোনো কি রাজনৈতিক বদল আসতে চলেছে?

https://p.dw.com/p/3CD51
Indien Priyanka Gandhi
ছবি: Reuters/P. Kumar

উজ্জীবিত কংগ্রেস

প্রতীক্ষা ছিল বহু বছরের৷ কংগ্রেসের কর্মীদেরও বহুদিনের দাবি— প্রিয়াঙ্কা গান্ধী প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে যোগ দিন৷ অবেশেষে সেই পদক্ষেপ নিয়েছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর কন্যা৷ সরকারিভাবে ভারতের জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দিয়ে সাধারণ সম্পাদকের পদ পেয়েছেন তিনি৷ সারা দেশে কংগ্রেস কর্মীরা হাইকমান্ডের এই সিদ্ধান্তে উল্লসিত৷ একই মত বিভিন্ন রাজ্যের নেতৃত্বের৷ পশ্চিমবঙ্গও ব্যতিক্রম নয়৷

ডয়চে ভেলেকে প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি, বর্তমান সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কংগ্রেস কর্মীরা অনেকদিন ধরেই প্রিয়াঙ্কাকে চাইছিলেন৷ তাঁর আসাতে কংগ্রেস কর্মীরা উজ্জীবিত হয়েছেন, অনেক বেশি কাজ করতে পারবেন৷ এতে কংগ্রেসের ভালোই হবে৷''

প্রদীপ ভট্টাচার্য

প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর চেহারার মিল রয়েছে৷ ভোটের আগে তিনি কি সামলাতে পারবেন গুরু দায়িত্ব? এই প্রশ্নে রাজনৈতিক মহলে দোলাচল থাকলেও কংগ্রেস দারুণ আশাবাদী৷ পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণা দেবনাথ বলেন, ‘‘পরিবারের রক্ত ওঁর মধ্যে আছে৷ রয়েছে অভিজ্ঞতাও৷ প্রিয়াঙ্কা ভালো কাজ করবে৷ এজন্য কংগ্রেসের ভোটও বাড়বে৷ কংগ্রেস কর্মীরাও খুব উজ্জীবিত৷'' নারী হিসেবে প্রিয়াঙ্কার রাজনীতিতে আগমন ইতিবাচক বলেই মনে করেন নেত্রী কৃষ্ণা৷ তাঁর মন্তব্য, ‘‘পুরুষশাসিত সমাজে মহিলারা পিছিয়ে৷ আমাদের দলে মহিলারা আছেন৷ তবে উনি এলে দলে অনেক সংখ্যালঘু, দলিত, মহিলারা এগিয়ে আসবে৷''

অন্যরা কী ভাবছেন?

তবে নারী বলে প্রিয়াঙ্কার রাজনীতিতে আগমন যে বাড়তি কিছু, এমনটা মনে করছে না তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব৷ নাট্যব্যক্তিত্ব ও তৃণমূল সাংসদ অর্পিতা ঘোষ বলেন, ‘‘এই আসাটা সহজাত৷ তবে একজন রাজনীতিতে এসেছেন, তিনি ইন্দিরা গান্ধীর নাতনি, এটুকুই! এটা নিয়ে আলোচনারও কিছু নেই৷ আজকাল প্রচুর মহিলা রাজনীতিতে আসেন৷ যেখানে মহিলাদের ৫০ শতাংশ সংরক্ষণের কথা বলা হচ্ছে, সেখানে তিনি এসেছেন৷ এটা ভালই তো!''

কৃষ্ণা দেবনাথ

তৃণমূলের সর্বময় কর্তৃত্ব একজন মহিলার হাতে থাকলেও তৃণমূল বিধায়ক পরশ দত্ত প্রিয়াঙ্কার জন্য কোনো বাড়তি উচ্ছ্বাস দেখাতে রাজি নন৷ এতে কংগ্রেসের রাজনৈতিক লাভ হবে বলেও তিনি মনে করেন না৷ পরশ বলেন, ‘‘কংগ্রেসের নিজেদের সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই৷ তবে কিছু লোক উজ্জীবিত হবে৷ ভোটবাক্সের ফল শুধু রায়বেরেলিতেই পাল্টাবে৷ অন্য কোথাও কিছু হবে না৷''

সিপিএম নেতা ও রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য অবশ্য তরুণ প্রজন্ম হিসেবে প্রিয়াঙ্কার আগমনকে স্বাগতই জানিয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘রাজনীতি করার অধিকার সকলের আছে৷ একজন অল্পবয়স্ক মেয়ে রাজনৈতিক দলে যুক্ত হয়েছে, আমাদের ওয়েলকাম করা উচিত৷ অনেক সময় দেখা যায়, অনেক ছেলেপুলে কিছু রাজনীতি না করে শুধু রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীর অমুক বলে উপরে উঠে যায়৷ হঠাৎ করে এমপি, এমএলএ হয়ে যাওয়ার থেকে অল্পবয়সিদের রাজনীতি করাটা ভালো৷ তবে প্রিয়াঙ্কার আগমনে কংগ্রেসের পালে বাড়তি হাওয়া লাগবে কিনা সেটা পরের কথা৷''

জনতা কী ভাবছে?

প্রিয়াঙ্কার আগমনে তাঁর দলের পালে কতটা হাওয়া লাগতে পারে, তা বোঝার জন্য ডয়চে ভেলে কথা বলেছে নতুন ভোটারদের সঙ্গেও৷ তাঁদের একজন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী উষসী পাল ব্যাপারটাকে একেবারেই গুরুত্ব দিতে নারাজ৷ তিনি বলেন, ‘‘কে কোথায় কী হল, তাতে আমাদের কিছু এসে যায় না৷ আমাদের এত ইস্যু রয়েছে, এসব নিয়ে ভাবার সময় নেই৷ আসল হল নীতি, কে নেতা সেটা বড় নয়৷''

অশোক ভট্টাচার্য

একই ধরনের প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন বাংলার শস্যভাণ্ডার বর্ধমানের কৃষিজীবী নকুল মাজি৷ তাঁর বক্তব্য, ‘‘আলুর ফলন ভাল হওয়া সত্ত্বেও এবার আমরা দাম পাচ্ছি না৷ সেটা আমাদের চিন্তা৷ কে নেতা হল তাতে আমাদের কী আসে-যায়?'' ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের একটি বেসরকারি কারখানার শ্রমিক তাপস গুছাইত অবশ্য ইন্দিরা পরম্পরায় গুরুত্ব দিলেন৷ তাঁর মতে, ‘‘ইন্দিরা গান্ধীর মতো জোরালো নেতৃত্ব আমাদের দরকার৷ তবে প্রিয়ঙ্কা সেই জায়গা নিতে পারবেন কি না, এখনই বলা মুশকিল৷''

দুর্নীতির পিছুটান

প্রিয়াঙ্কার রাজনীতিতে অভিষেকের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর স্বামী রবার্ট ভদ্রের জমি দুর্নীতির বিষয়টি উঠে আসছে৷ যদিও কংগ্রেস তো বটেই, বাম বা তৃণমূল নেতৃত্বও বলছেন, দুর্নীতি কোনো ফ্যাক্টর হবে না৷ কিন্তু বিজেপি সেটাকেই হাতিয়ার করবে বলে জানালেন বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসু৷ তিনি বলেন, ‘‘এই ক্রিশ্চিয়ান মাইকেল এসে সোনিয়া ও রাহুলের যে ইমেইল দেখিয়েছেন, তাতে পরিষ্কার করে লেখা আছে, ‘আর মাস্ট বি প্রোটেকটেড', ‘আর মাস্ট বি ইনফর্মড' এটাই কংগ্রেসকে অর্ধেক ডুবিয়ে দেবে৷ বাকিদের জন্য ন্যাশনাল হেরাল্ড, রবার্ট ভদ্র আছে৷ এগুলো ছিলই৷ এবার প্রিয়ঙ্কা আসাতে সংবাদমাধ্যমে এগুলো বেশি বেশি করে থাকবে৷''

অর্পিতা ঘোষ

বিজেপির এই নেতা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বার্তাই তুলে ধরেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর আগমনের গুরুত্ব নেই৷ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কংগ্রেসের পরিবারই দল৷ রাহুল গান্ধী ব্যর্থ৷ এবার প্রিয়াঙ্কাকে নিয়ে আসবে৷ এবার প্রিয়াঙ্কা ব্যর্থ হলে তাঁর মেয়ে আসবে৷ এভাবেই হতে থাকবে৷ উল্টোদিকে আমাদের দলটাই পরিবার৷'' নরেন্দ্র মোদীর এই বক্তব্যে অবশ্য তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন কংগ্রেসিরা৷  কৃষ্ণা দেবনাথ বলেন, ‘‘পরিবার সম্পর্কে বিজেপি কী বলবে! মোদী নিজেই নিজের স্ত্রীকে অস্বীকার করেছেন, ওঁদের পরিবার নেই৷ প্রিয়াঙ্কার ঠাকুমা, বাবা নিজেদের বলিদান দিয়েছে, তার কোনো দাম নেই?''

ভোটবাক্সে প্রভাব

উত্তরপ্রদেশে বেশি আসন জেতার অর্থ দিল্লির ক্ষমতার দিকে এক কদম এগিয়ে যাওয়া৷ সম্প্রতি এই রাজ্যে জোট গড়েছে প্রধান দুই দল সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজ পার্টি৷ প্রিয়াঙ্কা আসায় বিজেপির আশা, জোটের ভোট কেটে তাদের কিছুটা সুবিধাই করে দেবেন রাজীব-তনয়া৷ তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষক উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায় তা মনে করছেন না৷ তাঁর মতে, ‘‘জোটের সমর্থক পশ্চাদপদ শ্রেণি ও মুসলিমরা৷ বরং প্রিয়াঙ্কা আসায় বিজেপির উচ্চবর্ণের একাংশের ভোট কংগ্রেস ফিরে পেতে পারে৷ তাতে জোটের সুবিধা হবে৷ তাই ভোটের মুখে এটা কংগ্রেসের মোক্ষম চাল৷'' প্রিয়াঙ্কার স্বামীর দুর্নীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘শহুরে মধ্যবিত্ত ছাড়া দুর্নীতি নিয়ে ভারতের আমজনতার বিশেষ মাথাব্যথা নেই৷ বিজেপি এটা নিয়ে প্রচার করলেও তাদের বিশেষ লাভ হবে না৷''

প্রিয়াঙ্কা কি পারবে জনমানসে কংগ্রেসকে আবারো ফিরিয়া আনতে? লিখুন নীচের ঘরে৷