1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সিন্ধিয়ার বিদ্রোহ, মধ্য প্রদেশ সরকার সংকটে

১০ মার্চ ২০২০

মধ্য প্রদেশে আবার সংকটে কমল নাথের নেতৃত্বে কংগ্রেসের রাজ্য সরকার। এ বার সংকটের কারণ অবশ্য রাহুল গান্ধীর ঘনিষ্ঠ কংগ্রেস নেতা জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার বিদ্রোহ।

https://p.dw.com/p/3Z7iQ
ছবি: Imago/Hindustan Times/M. Faruqui

কংগ্রেস ছাড়লেন রাহুল ও প্রিয়ঙ্কা গান্ধীর অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহযোগী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। তিনি তাঁর সহযোগী বিধায়ক, মন্ত্রীদের নিয়ে বিজেপিতে যোগ দিতে চলেছেন। ফলে মধ্যপ্রদেশে কমলনাথ সরকার পতনের মুখে দাঁড়িয়ে।

তাঁর বাবা মাধবরাও সিন্ধিয়া ছিলেন রাজীব গান্ধীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও পরামর্শদাতা। রাহুল গান্ধী যখন কংগ্রেস সভাপতি, তখন তাঁর প্রিয় বন্ধু জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া ছিলেন রাহুলের সব চেয়ে বড় পরামর্শদাতা। সেই জ্যোতিরাদিত্য কংগ্রেস ছাড়লেন এবং তিনি বিজেপিতে যোগ দিতে চলেছেন। কংগ্রেস ছাড়ার আগে তিনি দু'টো কাজ করেছেন। মধ্যপ্রদেশে নিজের অনুগামী ১৬ জন বিধায়ককে পাঠিয়ে দিয়েছেন কর্ণাটকে বিজেপির নিরাপদ আশ্রয়ে। এর মধ্যে ছয় জন মন্ত্রীও আছেন। আরও চারজন ভোপালে আছেন। দুই, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করে দীর্ঘ বৈঠক সেরে ফেলেছেন। তিনি এ বার বিজেপিতে যোগ দেবেন। তাঁকে রাজ্যসভায় নিয়ে আসা হবে এবং সম্ভবত কেন্দ্রে মন্ত্রীও করা হবে। 

এর ফলে ঘোরতর সংকটে পড়েছে মধ্যপ্রদেশে কমলনাথের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকার। দিন সাতেক আগে প্রথম সংকট কাটিয়ে উঠেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী কমলনাথ। সে বার কংগ্রেস ও তার সহযোগী দলের ১০ জন বিধায়ককে দিল্লি ও কর্ণাটকে নিয়ে এসেছিল বিজেপি। পাল্টা অভিযান চালিয়ে আটজনকে নিজের দিকে নিয়ে আসতে পেরেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু এ বার সংকট অনেক বেশি তীব্র। এ বার বিদ্রোহ করেছেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। বিজেপি সহায়কের ভূমিকায়। কমলনাথ যদি সিন্ধিয়ার শিবির বা বিজেপির বিধায়কদের ভাঙাতে পারেন, তা হলে সরকার বাঁচাতে পারবেন। না হলে তাঁর সরকারের পতন সময়ের অপেক্ষা। কর্ণাটকের মতো বিজেপি মধ্যপ্রদেশেও সিন্ধিয়া অনুগামী বিধায়কদের পদত্যাগ করাতে পারে। তারপর তাঁদের ভোটে জিতিয়ে আনা হবে।   

কংগ্রেস নেতাদের অভিযোগ, সিন্ধিয়ার পিছনে বিজোপি আছে। একে তো মন্ত্রী ও বিধায়কদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে বিজেপি শাসিত কর্ণাটকে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর ইতিমধ্যে অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করে বৈঠক করেছেন। বিজেপি সূত্র জানাচ্ছে, কমলনাথ সরকার পড়ে গেলে শিবরাজ সিং আবার মুখ্যমন্ত্রী হবেন। আর শিবরাজ বলেছেন, এটা পুরোপুরি কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ ঝামেলা। বিজেপির কোনও যোগ নেই। অতীতে দেখা গিয়েছে, অন্য রাজ্যে বিজেপির উদ্যোগে কংগ্রেস বা অন্য দল ভাঙানোর সময় ঠিক এই কথাই তাঁরা বলে থাকেন। বিজেপি নেতারা জানাচ্ছেন, সিন্ধিয়ার সঙ্গে শিবরাজের দিল্লিতে লাগাতার কয়েকদিন ধরে বৈঠক হয়েছে।

শেষ চেষ্টা হিসাবে কংগ্রেস সিন্ধিয়াকে মধ্যপ্রদেশের দলীয় সভাপতির পদ ও রাজ্যসভার সদস্যপদ দিতে চেয়েছিল। লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা অধীর চৌধুরী বলেছেন, নরেন্দ্র মোদী তাঁকে কেন্দ্রে মন্ত্রী করবেন, তাই তিনি চলে গিয়েছেন। দলের দুঃসময়ে এভাবে যাওয়া মানে বিশ্বাসঘাতকতা করা।

তবে সিন্ধিয়া পরিবারের সঙ্গে বিজেপির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। জ্যোতিরাদিত্যের ঠাকুমা বিজয়রাজে বিজেপিতে ছিলেন। দুই পিসি বসুন্ধরারাজে ও যশোধরারাজে বিজেপিতে আছেন। জ্যোতিরাদিত্য কংগ্রেস ছেড়ে দেওয়ায় গান্ধী পরিবারের সঙ্গে সিন্ধিয়া পরিবারের যোগ আপাতত শেষ হয়ে গেল।

মধ্যপ্রদেশের এই সংকট কংগ্রেসের বেহাল দশা আবার সামনে নিয়ে এসেছে। যদি গান্ধী পরিবার, বিশেষ করে রাহুল ও প্রিয়ঙ্কার অন্যতম ঘনিষ্ঠ ও ভরসার নেতা জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া এ ভাবে বিদ্রোহ করে দলশাসিত সরকারকে বিপাকে ফেলে দেন,  তা হলে কোন নেতার ওপর ভরসা করবেন কংগ্রেসিরা। মুখ্যমন্ত্রী কমলনাথ ও দিগ্বিজয় সিং দু'জনে এককাট্টা হয়ে আছেন। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে সিন্ধিয়ার বিরুদ্ধাচরণ করছেন। তাঁরা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদ সিন্ধিয়াকে দেননি। এখন সরকার পড়ে যাওয়ার অবস্থা হওয়ায় তাঁরা সমঝোতায় রাজি হয়েছেন। প্রাক্তন আপ নেতা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আশুতোষ মনে করেন, কংগ্রেস নেতাদের রাজনৈতিক উচ্চাশার জন্য এই সংকট দেখা দিয়েছে। প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা দীর্ঘদিন ভোপালে কাজ করেছেন। ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, "কংগ্রেসের সত্তরোর্ধ্ব নেতারা যদি তরুণদের প্রতি পদে আটকানোর চেষ্টা করেন তা হলে এটাই হবে। বিজেপি এমনিতেই যে কোনওভাবে সরকার বানাতে চায়। এই সুযোগ তারা ছাড়বে কেন? তাই হোলির দিন মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেসকে রঙহীন করার দায়িত্ব নিতে হবে দলীয় নেতৃত্বকেই।" 

জিএইচ/এসজি(এএনআই,পিটিআই)