1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ওয়েব কি একটি ‘নিয়ন্ত্রণহীন দানব'?

৯ মার্চ ২০১৯

৩০ বছর আগের মার্চ মাসে একজন ব্রিটিশ সফটওয়্যার প্রকৌশলী বিজ্ঞানীদের জন্য তথ্য আদানপ্রদানের এক পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছিলেন, যা পরবর্তীতে গোটা মানবসমাজের ইতিহাসই পালটে দেয়৷ এটি এখন পরিচিত ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব' নামে৷

https://p.dw.com/p/3Efha
ছবি: picture-alliance/dpa/FotoFinder Systems GmbH

তিনযুগ পর এসে এর উদ্ভাবক টিম বার্নার্স-লি বলছেন, তাঁর সৃষ্টি ধোঁকাবাজরা ছিনতাই করেছে, যা গোটা ব্যবস্থাটিকেই এখন ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে৷

সুইজারল্যান্ডের জেনেভার কাছে অবস্থিত সার্ন ল্যাবরেটরিতে কাজ করার সময় ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব উদ্ভাবন করেছিলেন বার্নার্স-লি৷ তবে সেখানে যে ইতিহাস তৈরি হয়েছিল তা ধরে রাখার জন্য উল্লেখযোগ্য কোনো ব্যবস্থা নেই৷ আছে শুধু ছোট্ট একটি স্মারক ফলক, আর দরজায় সাঁটানো আছে সার্ন-এর পুরনো ডিরেক্টরির একটি পাতা৷

বার্নার্স লি ১৯৯৪ সালে সার্ন ছেড়ে ‘ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউ অব টেকনোলজি'তে যোগ দেন৷ এরপর সার্ন-এর ল্যাবের দায়িত্ব পান ফ্রঁসোয়া ফ্লুকিগার৷ বার্নার্স লি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘টিম ভীষণ পরিশ্রম করতেন৷ তার ঘরে সবসময়ই আলো জ্বলতো৷''

বার্নার্স লির লক্ষ্য ছিল এমন এক ব্যবস্থা চালু করা, যার সাহায্যে ল্যাবের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েক হাজার বিজ্ঞানী তাঁদের কাজ আদানপ্রদান করতে পারবেন৷ সেখান থেকেই ওয়েব ব্যবস্থার জন্ম৷ কম্পিউটারের মধ্যে নেটওয়ার্ক যোগাযোগের পদ্ধতি চালু থাকলেও ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবই ব্রাউজার দিয়ে ওয়েবপেজগুলোতে ঢোকার ব্যবস্থা করেছিল৷

‘‘আমরা ইতিহাস নির্মাণ করতে যাচ্ছি, শুরু থেকেই আমাদের মধ্যে এমন একটি ধারণা ছিল'', বলেন ফ্লুকিগার৷ ১৯৯০ সালে বেলজিয়ান বিজ্ঞানী রব্যায়ার কাইয়ু এই উদ্ভাবনকে আরো এগিয়ে নেন৷ তিনি ওয়েবপেজ তৈরির মানদণ্ড ‘হাইপারটেক্সট মার্কআপ ল্যাংগুয়েজ' বা এইচটিএমএল উদ্ভাবন করেন৷

এছাড়া তাঁরা ‘হাইপারটেক্সট ট্রান্সফার প্রটোকল' বা এইচটিটিপি এবং ‘ইউনিফর্ম রিসোর্স লোকেটর' বা ইউআরএল'ও উদ্ভাবন করেছিলেন৷

বার্নার্স লি ১৯৯০ সালে সার্ন-এর প্রথম ওয়েব নেভিগেটর সার্ভারটি চালু করেন, যা সার্ন-এর বাইরে ১৯৯১ সালে অবমুক্ত করা হয়৷ প্রথমে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান, পরে সাধারণ মানুষের কাছে তা পৌঁছে গিয়েছিল৷

ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের উদ্ভাবনকে ২০ শতকের তিনটি প্রধান আবিষ্কারের একটি বলে মনে করেন ফ্লুকিগার৷ কিন্তু অনলাইনে হয়রানি, ভুয়া খবর, ‘ম্যাস হিস্টেরিয়া' আর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা হুমকির মখে পড়ায় তিনি হতাশ৷ তাঁর মতে, এখনই কোনো উদ্যোগ না নেয়া হলে শেষ পর্যন্ত এটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া এক দানবে পরিণত হবে৷

একই মত বার্নার্স লিরও৷ ‘ওয়েব বাঁচাও' শিরোনামে তিনি নিজস্ব সচেতনতামূলক কর্মসূচিও হাতে নিয়েছেন৷ গত নভেম্বরে লিসবনের ওয়েব সম্মেলনে ওয়েবের জন্য নতুন চুক্তির আহ্বান জানান তিনি, যার মাধ্যমে সবার জন্য ওয়েব ব্যবহার নিশ্চিত করা, ব্যক্তিগত গোপনীয়তার মৌলিক অধিকারের মতো বিষয়গুলো নিশ্চিত করা যাবে৷

 ‘‘ওয়েব ধোঁকাবাজ আর দানবদের হাতে চলে গেছে৷ সারা বিশ্বজুড়ে মানুষকে প্রতারিত করতে এটি ব্যবহার করছে,'' ডিসেম্বরে নিউইয়র্ক টাইমসে লেখা এক প্রবন্ধে এমন মত প্রকাশ করেছেন বার্নার্স-লি৷

এখানেই ক্ষান্ত থাকেননি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের জনক হিসেবে পরিচিত বার্নার্স-লি৷ দাভোসে ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম'এর সম্মেলনে অনলাইন নিয়ে বিতর্কেও অংশ নেন তিনি৷ তিনি এমন একটি আলোচনার প্লাটফর্ম চালুর পরামর্শ দিয়েছেন, যেটি বিভিন্ন মতের মানুষদের যুক্ত করবে৷

এফএস/জেডএইচ (এএফপি)