ওয়াসায় দুর্নীতি: প্রতিকার কী?
১৯ জুলাই ২০১৯তবে, কী পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে, তা এখনো স্পষ্ট নয়৷
এদিকে, মাঠ পর্যায়ে এভাবে ব্যাপক আকারে দুর্নীতি ছড়ানোর দায় মন্ত্রণালয় ও ওয়াসার উর্ধ্বতনদের উপর বর্তায় বলে মনে করছেন ওয়াসার সাবেক একজন কর্মকর্তা৷ অধিকতর তদন্ত করলে আরো বড় দুর্নীতি বেরিয়ে আসবে বলে মন্তব্য তাঁর৷
ওয়াসার সাবেক উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার ওয়ালিউল্লাহ সিকদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আপনি যখন বাড়ির কর্তা ব্যক্তি, তখন বাড়িতে কি হয় বা বাড়ির কোথায় কি হচ্ছে আপনি জানবেন না? অবশ্যই জানবেন৷ এখানেও তাই৷ ভেতরে এতকিছু হচ্ছে আর উর্ধ্বতনরা কিছুই জানবেন না, তাই কি হয়? দুদক তো ১১ ধরনের দুর্নীতির খোঁজ পেয়েছে৷ আরো কত ধরনের দুর্নীতি এখানে হয় সেগুলো তো দুদক বের করতে পারেনি৷ আপনারা খোঁজ নিলেও অনেক কিছু জানতে পারবেন৷’’
দুদকের প্রতিবেদনের ওয়াসার দুর্নীতির ফিরিস্তিতে দেখা যায়, ওয়াসার প্রকল্পগুলো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ না করে বিভিন্ন অজুহাতে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা ও প্রকল্প ব্যয় বাড়ানো হয়৷ এছাড়া ঠিকাদার নির্বাচনের ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট পদ্ধতি ও রাজনৈতিক পরিচয় এবং কাজ পাওয়ার বিনিময়ে ঘুস লেনদেন প্রচলিত প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ এ ক্ষেত্রে প্রকল্প পরিচালকসহ প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী এবং ওয়াসার ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ যুক্ত থাকেন৷
ওয়াসাকে কীভাবে দুর্নীতির বেড়াজাল থেকে বের করা যায়? জানতে চাইলে প্রকৌশলী সিকদার বলেন, ‘‘এতদিন ধরে ওয়াসাতে এসব হচ্ছে, তাদের উর্ধ্বতনরা কি কিছুই দেখেনি৷ তাদের জবাবদিহিতার জন্য তো মন্ত্রণালয় আছে৷ তারা তো এগুলো দেখতে পারত? এখন তো দুদক চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, দেখা যাক মন্ত্রণালয় কি করে? আমাদের আসলে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করতে হবে৷’’
স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর কাছে ওয়াসার দুর্নীতি সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন দুদক কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান৷ প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর সাংবাদিকদের তিনি জানান, ওয়াসার ১১টি পয়েন্টে দুর্নীতি হয় বা হতে পারে বলে তারা চিহ্নিত করতে পেরেছেন৷ এটা সরকারের অর্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির ১৪তম প্রতিবেদন৷ মোট ২৫টি প্রতিষ্ঠানের ওপর প্রতিবেদন তৈরি করবেন তারা৷
কী ধরনের দুর্নীতি হয় তার উদাহরণ দিয়ে দুদক কমিশনার বলেন, ‘‘মিরপুরে ৫২১ কোটি টাকার একটি প্রকল্পে ৫২ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো হয়েছে৷ কাজের মান ও পরিমাপের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসূত্র করে এই অনিয়ম হয়েছে৷ পাশাপাশি ঢাকা মহানগর পানি সংগ্রহ প্রকল্পে ৫৫২ কোটি টাকা বেশি ব্যয় দেখানো হয়েছে৷ দুদক যে তদন্ত করেছে, সেখানে দেখা গেছে, এই কাজগুলো ওয়াসার কর্মকর্তাদের পছন্দের ঠিকাদারকে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে৷ এছাড়া ওয়াসার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ওভারটাইম না করেই বিল নেয়৷ এমন বিষয়ও এসেছে৷’’
যা বললেন এমডি
দুদক এতগুলো খাতে দুর্নীতির কথা বলল, আপনারা কি এগুলো জানেন না? দুদক কি আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করেছে? জানতে চাইলে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দুদক কি বলেছে আমরা জানি না৷ আমরা তাদের প্রতিবেদন দেখি নাই৷ শুনেছি মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে৷ এখন মন্ত্রণালয় আমাদের কাছে পাঠাক? তারপর আমরা সেগুলো দেখে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব৷ আমাদের তো আগে জানতে হবে, প্রতিবেদনে কি আছে? তদন্ত করে নিশ্চিত হতে হবে৷ তারপরই তো ব্যবস্থা নেওয়ার প্রসঙ্গ৷ আমরা রিপোর্ট পাওয়ার পর অবশ্যই ব্যবস্থা নেব৷’’
ওয়াসার পানিতে কলিফর্মসহ নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্ব মিলছে৷ উচ্চ আদালতের নির্দেশে গঠন করা কমিটি আদালতে এমন রিপোর্ট দিয়েছে৷ এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে এক প্রসঙ্গে তাকসিম এ খান বলেন, ‘‘কলিফর্ম তো সব জায়গায় পাওয়া যায় না৷ যেখানে লাইনে লিকেজ থাকে, সেখানেই এই ধরনের ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে৷ আমরা যখনই জানতে পারি কোথাও লিকেজ হয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে সেটা বন্ধ করতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়৷ এটা তো প্রতিনিয়ত হচ্ছে৷’’
ওয়াসায় দুর্নীতির এই প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর মন্ত্রী তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘দুর্নীতি বরদাস্ত করা হবে না৷ দুদকের এই প্রতিবেদন আমরা আমলে নিয়েছি৷ সরকারের কোনও কর্মকর্তা-কর্মচারী এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকলে বিচার করা হবে৷ কেউ দুর্নীতি করে রেহাই পাবে না৷’’