1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ওয়াসায় দুর্নীতি: প্রতিকার কী?

সমীর কুমার দে ঢাকা
১৯ জুলাই ২০১৯

ঢাকা ওয়াসায় যে ১১টি খাতে দুর্নীতি হয় বলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রতিবেদন দিয়েছে, সেসবের প্রতিকার করার আশ্বাস দিচ্ছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ও প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক৷

https://p.dw.com/p/3MKmi
ছবি: bdnews24.com

তবে, কী পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে, তা এখনো স্পষ্ট নয়৷

এদিকে, মাঠ পর্যায়ে এভাবে ব্যাপক আকারে দুর্নীতি ছড়ানোর দায় মন্ত্রণালয় ও ওয়াসার উর্ধ্বতনদের উপর বর্তায় বলে মনে করছেন ওয়াসার সাবেক একজন কর্মকর্তা৷ অধিকতর তদন্ত করলে আরো বড় দুর্নীতি বেরিয়ে আসবে বলে মন্তব্য তাঁর৷   

ওয়াসার সাবেক উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার ওয়ালিউল্লাহ সিকদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আপনি যখন বাড়ির কর্তা ব্যক্তি, তখন বাড়িতে কি হয় বা বাড়ির কোথায় কি হচ্ছে আপনি জানবেন না? অবশ্যই জানবেন৷ এখানেও তাই৷ ভেতরে এতকিছু হচ্ছে আর উর্ধ্বতনরা কিছুই জানবেন না, তাই কি হয়? দুদক তো ১১ ধরনের দুর্নীতির খোঁজ পেয়েছে৷ আরো কত ধরনের দুর্নীতি এখানে হয় সেগুলো তো দুদক বের করতে পারেনি৷ আপনারা খোঁজ নিলেও অনেক কিছু জানতে পারবেন৷’’

দুদকের প্রতিবেদনের ওয়াসার দুর্নীতির ফিরিস্তিতে দেখা যায়, ওয়াসার প্রকল্পগুলো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ না করে বিভিন্ন অজুহাতে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা ও প্রকল্প ব্যয় বাড়ানো হয়৷ এছাড়া ঠিকাদার নির্বাচনের ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট পদ্ধতি ও রাজনৈতিক পরিচয় এবং কাজ পাওয়ার বিনিময়ে ঘুস লেনদেন প্রচলিত প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ এ ক্ষেত্রে প্রকল্প পরিচালকসহ প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী এবং ওয়াসার ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ যুক্ত থাকেন৷

আরো কত ধরনের দুর্নীতি হয় সেগুলো তো দুদক বের করতে পারেনি: ওয়ালিউল্লাহ সিকদার

ওয়াসাকে কীভাবে দুর্নীতির বেড়াজাল থেকে বের করা যায়? জানতে চাইলে প্রকৌশলী সিকদার বলেন, ‘‘এতদিন ধরে ওয়াসাতে এসব হচ্ছে, তাদের উর্ধ্বতনরা কি কিছুই দেখেনি৷ তাদের জবাবদিহিতার জন্য তো মন্ত্রণালয় আছে৷ তারা তো এগুলো দেখতে পারত? এখন তো দুদক চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, দেখা যাক মন্ত্রণালয় কি করে? আমাদের আসলে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করতে হবে৷’’

স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর কাছে ওয়াসার দুর্নীতি সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন দুদক কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান৷ প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর সাংবাদিকদের তিনি জানান, ওয়াসার ১১টি পয়েন্টে দুর্নীতি হয় বা হতে পারে বলে তারা চিহ্নিত করতে পেরেছেন৷ এটা সরকারের অর্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির ১৪তম প্রতিবেদন৷ মোট ২৫টি প্রতিষ্ঠানের ওপর প্রতিবেদন তৈরি করবেন তারা৷

কী ধরনের দুর্নীতি হয় তার উদাহরণ দিয়ে দুদক কমিশনার বলেন, ‘‘মিরপুরে ৫২১ কোটি টাকার একটি প্রকল্পে ৫২ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো হয়েছে৷ কাজের মান ও পরিমাপের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসূত্র করে এই অনিয়ম হয়েছে৷ পাশাপাশি ঢাকা মহানগর পানি সংগ্রহ প্রকল্পে ৫৫২ কোটি টাকা বেশি ব্যয় দেখানো হয়েছে৷ দুদক যে তদন্ত করেছে, সেখানে দেখা গেছে, এই কাজগুলো ওয়াসার কর্মকর্তাদের পছন্দের ঠিকাদারকে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে৷ এছাড়া ওয়াসার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ওভারটাইম না করেই বিল নেয়৷ এমন বিষয়ও এসেছে৷’’

কলিফর্ম তো সব জায়গায় পাওয়া যায় না: তাকসিম এ খান

যা বললেন এমডি

দুদক এতগুলো খাতে দুর্নীতির কথা বলল, আপনারা কি এগুলো জানেন না? দুদক কি আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করেছে? জানতে চাইলে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দুদক কি বলেছে আমরা জানি না৷ আমরা তাদের প্রতিবেদন দেখি নাই৷ শুনেছি মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে৷ এখন মন্ত্রণালয় আমাদের কাছে পাঠাক? তারপর আমরা সেগুলো দেখে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব৷ আমাদের তো আগে জানতে হবে, প্রতিবেদনে কি আছে? তদন্ত করে নিশ্চিত হতে হবে৷ তারপরই তো ব্যবস্থা নেওয়ার প্রসঙ্গ৷ আমরা রিপোর্ট পাওয়ার পর অবশ্যই ব্যবস্থা নেব৷’’

ওয়াসার পানিতে কলিফর্মসহ নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্ব মিলছে৷ উচ্চ আদালতের নির্দেশে গঠন করা কমিটি আদালতে এমন রিপোর্ট দিয়েছে৷ এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে এক প্রসঙ্গে তাকসিম এ খান বলেন, ‘‘কলিফর্ম তো সব জায়গায় পাওয়া যায় না৷ যেখানে লাইনে লিকেজ থাকে, সেখানেই এই ধরনের ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে৷ আমরা যখনই জানতে পারি কোথাও লিকেজ হয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে সেটা বন্ধ করতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়৷ এটা তো প্রতিনিয়ত হচ্ছে৷’’

ওয়াসায় দুর্নীতির এই প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর মন্ত্রী তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘দুর্নীতি বরদাস্ত করা হবে না৷ দুদকের এই প্রতিবেদন আমরা আমলে নিয়েছি৷ সরকারের কোনও কর্মকর্তা-কর্মচারী এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকলে বিচার করা হবে৷ কেউ দুর্নীতি করে রেহাই পাবে না৷’’