1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কচ্ছপ বাঁচানোর অভিনব উদ্যোগ

২৬ আগস্ট ২০২০

পরিবেশ সংরক্ষণের যে কোনো উদ্যোগের ক্ষেত্রে স্থানীয় মানুষের সচেতনতা ও সহায়তা অত্যন্ত জরুরি৷ ভারতের ওডিশা রাজ্যে লুপ্তপ্রায় প্রজাতির কচ্ছপ সংরক্ষণের লক্ষ্যে একটি এনজিও এভাবে সাফল্য পাচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/3hVjK
ছবি: DW

অলিভ রিডলি প্রজাতির কচ্ছপরাতেই ডিম পাড়তে ভালোবাসে৷ ভারতের পূর্ব উপকূলে ওডিশা রাজ্যে এই প্রজাতির অসংখ্য কচ্ছপের দেখা পাওয়া যায়৷ প্রতি বছর কচ্ছপের ডিম পাড়ার মরসুমে গুন্ডলাভা গ্রামের মানুষ সেই ডিম সংগ্রহ করেন৷ কচ্ছপের সুরক্ষার জন্যই তাঁরা এই কাজ করেন৷ অলিভ রিডলি কচ্ছপ লুপ্তপ্রায় প্রজাতির তালিকায় রয়েছে৷

কচ্ছপের বাসা বাঁধার মরসুমের সময়ে জেলেরা দিনরাত পরিশ্রম করেন৷ বিচিত্রনন্দ বিসওয়াল তাঁদেরই একজন৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রতি রাতে আমরা সৈকতে টহল দিয়ে অসুস্থ বা আহত কচ্ছপ ও সেগুলির ডিম উদ্ধার করি৷ আমরা কৃত্রিম হ্যাচারির গর্তের মধ্যে সেই ডিম রেখে দেই৷ ৪০ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে সেই ডিম ফেটে শাবক বের হয়৷ আমরা সেগুলিকে সমুদ্রে ফিরিয়ে দেই৷’’

মানুষকে সচেতন করে কচ্ছপ বাঁচানোর প্রকল্প

করোনা সংকটের পরোক্ষ সুফল

প্রতি বছর হাজার হাজার কচ্ছপ ভারতের উপকূলে ডিম পাড়তে আসে৷ সেই দৃশ্য দেখতে অসংখ্য পর্যটক সৈকতে আসেন৷ তবে ২০২০ সালে করোনা সংকটের কারণে সৈকতের পরিবেশ বেশ শান্ত ছিল৷ ফলে অনেক কম ডিম নষ্ট হয়েছে এবং প্রাণীগুলি শান্তিতে বাসা বাঁধতে পেরেছে৷

এক দশকেরও বেশি সময় ধরে গ্রামের মানুষ এক প্রাণী সংরক্ষণ সংগঠনের উদ্যোগে অংশ নিচ্ছেন৷ ১৯৯৯ সালে মারাত্মক ঘূর্নিঝড়ের ফলে ওডিশা উপকূলে ধ্বংসলীলার পর এই এনজিও গঠন করা হয়৷ এই সংগঠন স্থানীয় মানুষের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণের চেষ্টা করে৷

বসন্ত সোয়েনের মতো জেলেরা মূলত কচ্ছপের ডিমের দেখাশোনা করেন৷ তাঁরা সেগুলি সংরক্ষিত বাসার এলাকায় রেখে দেন, যাতে ডিম ফুটে নিরাপদে শাবক জন্ম নিতে পারে৷ বসন্ত বলেন, ‘‘আজ আমরা চারটি কচ্ছপকে ডিম পাড়তে দেখেছি৷ আমরা বাসা বাঁধার জায়গা থেকে ৪৮০টি ডিম উদ্ধার করেছি৷ সেগুলির মধ্যে ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ থেকে বাচ্চা জন্ম নেবে বলে আমাদের বিশ্বাস৷’’

ডিমের সুরক্ষা গুরুত্বপূর্ণ

গড়ে এক হাজারের মধ্যে মাত্র একটি শাবক বাঁচতে পারে৷ মাছ ধরার জালে অনেক শাবকের মৃত্যু হয়৷ জলবায়ু পরিবর্তনও এই প্রজাতির জন্য বাড়তি হুমকি হয়ে উঠেছে৷ বিচিত্রনন্দ বিসওয়াল বলেন, ‘‘নানা ভাবে সমুদ্রের কচ্ছপ জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হচ্ছে৷ এখন ফেব্রুয়ারি মাসের বদলে মে মাসে কচ্ছপ বাসা বাঁধছে৷ গত বছর ঘূর্ণিঝড় আমাদের ক্ষতি করেছে৷ বন্যা, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ও উচ্চ তাপমাত্রা বাসা বাঁধার পথে বাধা সৃষ্টি করছে৷ আরও উষ্ণ তাপমাত্রার কারণে পুরুষ বা নর কচ্ছপের সংখ্যা বাড়ছে৷’’

বাংলাদেশে বিলুপ্তপ্রায় কচ্ছপ রক্ষার আশা

তাই ডিমের সুরক্ষা আরও জরুরি হয়ে উঠেছে৷ গ্রামের মানুষ এক সময়ে কচ্ছপের মাংস খেত৷ কিন্তু সামুদ্রিক পরিবেশে কচ্ছপের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা জানার পর তারা সেটা বন্ধ করে দেয়৷ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এনজিওর বিজয় কবি বলেন, ‘‘কচ্ছপ জেলেদের বন্ধু হিসেবেও পরিচিত৷ কারণ সেগুলি আবর্জনা ও প্রাণীর মৃতদেহ খেয়ে নেয়৷ ছোট মাছের শিকারি বলে পরিচিত জেলিফিশও কচ্ছপের পেটে যায়৷ তাই কচ্ছপের সংখ্যা কমে গেলে মাছের সংখ্যাও কমে যাবে৷ জেলিফিশ সেই মাছ খেয়ে নিলে জেলেদের জীবিকার ক্ষতি হবে৷’’

বহুমুখী সামাজিক উদ্যোগ

অনেক স্থানীয় নারী সৈকত থেকে প্লাস্টিক সংগ্রহ করে পরিবেশ সংরক্ষণে অবদান রাখেন৷ দূষিত সৈকতে কচ্ছপের প্রজননের সম্ভাবনা অনেক কমে যায়৷ নারীরা কচ্ছপের ডিম দেখাশোনা সম্পর্কেও শিক্ষা নিচ্ছেন৷ বিজয় কবি বালুর মধ্যে কচ্ছপের ডিম তা দেবার কৃত্রিম ব্যবস্থা করার কায়দাও তাদের শেখাচ্ছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘অলিভ রিডলি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সফল সমাজভিত্তিক মডেল সম্পর্কে আমরা সচেতনতা ছড়িয়ে দেবার চেষ্টা করছি৷ আমরা মানুষকে টহল দেবার প্রশিক্ষণ দিচ্ছি, যাতে তারা ঝুঁকিপূর্ণ ডিম উদ্ধার করে কৃত্রিম হ্যাচারিতে নিয়ে যেতে পারেন৷ গর্ভধারণের সময়ের পর শাবক ও উদভ্রান্ত কচ্ছপগুলিকে সমুদ্রে ছেড়ে দেওয়া হয়৷’’

কবি জানালেন, যে গত দশ বছরে তাঁর সংগঠন প্রায় দুই লাখ ষাট হাার কচ্ছপ শাবক সমুদ্রে ছেড়ে দিয়েছে৷ এখনো পর্যন্ত সেগুলির উপর নজরদারি চালানো সম্ভব হয় নি৷ তাই ঠিক কত সংখ্যক শাবক বেঁচে গেছে এবং আবার ফিরে এসেছে, তা স্পষ্ট নয়৷ তবে ভবিষ্যৎ বছরগুলিতেও একই সংখ্যক ডিম দেখা যাবে বলে তাঁদের মনে আশা রয়েছে৷

মিলকে/সেহগল/এসবি

২০১৬ সালের ছবিঘরটি দেখুন...