ঐতিহ্যবাহী পোশাক পর্নো নয়- ইন্দোনেশিয়ার আদালত
২৬ মার্চ ২০১০কঠোর আইন
বিগত ২০০৮ সালে ইন্দোনেশিয়ার সরকার এই পর্নোগ্রাফি বিরোধী আইনটি প্রণয়ন করে৷ এতে বলা হয়, অশ্লীল কিংবা যৌন উত্তেজনা পূর্ণ কোন চিত্র, ছবি, স্কেচ, লেখা, কণ্ঠ, আওয়াজ, এ্যানিমেশন, কার্টুন, আকার ইঙ্গিত যা সমাজের নৈতিক মূল্যবোধের বিরোধী তা পর্নোগ্রাফি হিসেবে গণ্য হবে৷ এই আইনে শাস্তিও রাখা হয়েছে অত্যন্ত কঠোর৷ এই আইনের অধীনে একজন অপরাধী সর্বোচ্চ ১৫ বছরের কারাদণ্ডও পেতে পারে৷ এছাড়া পর্নো সিডি সরবরাহ কিংবা ইন্টারনেট থেকে তা ডাউনলোড করা হলে দুই বিলিয়ন ইন্দোনেশিয়ান রুপিয়া পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে৷ ইন্দোনেশিয়ার এই আইন প্রণয়নের পর অনেক জায়গায় এর প্রয়োগও করা হয়৷ যেমন, পশ্চিম জাভার একটি ড্যান্স ক্লাবের চারজন নর্তকী ও ম্যানেজারকে নববর্ষের রাতে অশ্লীল নাচ এর দায়ে আড়াই মাস করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়৷
আইনের অস্পষ্টতা
তবে সরকারের এই আইনের বিরোধিতা করে আসছে কিছু ধর্মনিরপেক্ষ ও সংখ্যালঘু সংগঠন৷ তারা বলছে, এই আইনে পর্নোগ্রাফিকে ঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা হয়নি৷ ফলে অহেতুক ভোগান্তির সম্ভাবনা রয়েছে৷ বিশেষ করে নারী এবং শিশুরা এই আইনের শিকার হতে পারে বলে অভিযোগ করছে তারা৷ এছাড়া চিত্র শিল্পীরাও এই কঠোর আইন মানতে নারাজ৷ বালি এলাকার গভর্নর এই আইনের প্রয়োগ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন, কারণ এই এলাকায় সংখ্যালঘু হিন্দুদের বসবাস বেশি৷ এছাড়া এই আইন সেখানকার চিত্র ও পর্যটন শিল্পের জন্যও ক্ষতিকারক হবে৷ সরকারের এই ধরণের আইন ইন্দোনেশিয়ার উদার ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ণ করবে বলে মানবাধিকার সংগঠনগুলো মনে করছে৷ উল্লেখ্য, কাগজে কলমে ইন্দোনেশিয়া একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র৷
আদালতের রায়
সরকারের এই আইনের বিরুদ্ধে ২৮টি ধর্মনিরপেক্ষ দল এবং শিল্পী সংগঠন সর্বোচ্চ আদালতে আপিল দায়ের করে৷ তবে ইন্দোনেশিয়ার আদালত এই আইনকে বহাল রাখার পক্ষে রায় দিয়েছে৷ বৃহস্পতিবার ৮-১ ভোটে এই আপিলটি খারিজ হয়ে যায়৷ তবে আদালত এই আইনের পক্ষে রায় দিলেও সংখ্যালঘুদের ঐতিহ্য রক্ষার পক্ষে মত দিয়েছে৷ বিচারক হামদান জুলফা বলেন, ঐতিহ্যবাহী নাচ এবং পোশাক পর্নোগ্রাফির মধ্যে পড়বে না, কারণ তা ইন্দোনেশিয়ার সংস্কৃতির অংশ৷ তবে অনেকের আশংকা এরপরও এই আইনের খড়গের তলে পড়তে যাচ্ছে ইন্দোনেশিয়ার আধুনিক জীবন যাত্রা৷
প্রতিবেদক: রিয়াজুল ইসলাম, সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন