1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারে প্রযুক্তি

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
১৬ অক্টোবর ২০২০

বাঙালির বৃহত্তম উৎসব দুর্গাপুজো এখন ইন্টারনেটবাহিত হয়ে লোকের ঘরে ঘরে৷ এই করোনা আবহে তা আরো বেশি৷ এই উদ্যোগের পথিকৃত শ্রীমন্ত চৌধুরি জানালেন, কীভাবে ঐতিহ্যকেও ফেরাচ্ছেন তাঁরা৷

https://p.dw.com/p/3k1YS
Indien Pujo
ছবি: Sirsho Bandopadhyay/DW

বাংলা ও বাঙালির সেরা উৎসব দুর্গাপুজো এই বছর অনেক বেশি ডিজিটাল৷ তার কারণ অবশ্যই করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা৷ পুজো উপলক্ষে সারা কলকাতা শহর জুড়ে সাজ সাজ রব উঠলেও অনেকেই রীতিমতো আশঙ্কিত, যে জনসমাগম মানেই কোভিড জীবাণু ছড়াবে ব্যাপক হারে৷ যে জন্য অনেকেই এ বছর উৎসবে শামিল হতে বাড়ির বাইরে বেরোবেন না৷ যাঁরা নেহাতই বিভিন্ন মণ্ডপে ঘুরে প্রতিমা, সাজসজ্জা, আলোর বাহার দেখেন, তাঁদের এবার ভরসা টিভি এবং ইন্টারনেট৷ এই মাল্টিমিডিয়ার যুগে বেশ কিছু ওয়েবসাইট গত কয়েক বছর ধরেই শহর-গ্রামের দুর্গাপুজোর ছবি, ভিডিও, খবর সংগ্রহ করে সাজিয়ে দিচ্ছিল৷ এবার অনেকেরই নজর থাকবে তাদের ওপর৷

আজ থেকে ২০ বছরেরও বেশি আগে বাংলা বিনোদনে দুর্গাপুজোকেন্দ্রিক ওয়েব পরিষেবার বাড়তি মাত্রাটি যোগ করেছিলেন শ্রীমন্ত চৌধুরি৷ এখন একটি বাংলা দৈনিকের ওয়েব বিভাগের দায়িত্বে থাকা শ্রীমন্ত ১৯৯৯ সালে শুরু করেছিলেন ‘‌এন্টার পুজো ডট কম'‌ নামে একটি ওয়েব সাইট, যাতে তিনি কলকাতার ৬০টি বিখ্যাত বারোয়ারি পুজোর ছবি আপলোড করেছিলেন৷ মূলত প্রবাসী বাঙালিদের কথা ভেবেই এই উদ্যোগ হলেও শহরের বাসিন্দাদের মধ্যেও বেশ সাড়া ফেলেছিল এই নেটের পুজো৷ বিশেষত তাঁদের কাছে, যাঁরা অসুস্থতা, বা বার্ধক্যের কারণে চট করে বাড়ির বাইরে বেরোতে পারেন না৷ যদিও তখন ইন্টারনেট সংযোগ এখনকার মতো এত সুলভ, বা সহজ এবং দ্রুত গতির ছিল না৷

শ্রীমন্ত চৌধুরি

সেই শুরু৷ শ্রীমন্ত জানাচ্ছেন, প্রতি বছরই একেকটি নতুন অবতারে আত্মপ্রকাশ করেছে তাঁর ওয়েবসাইট এবং জনপ্রিয়তা বেড়েছে৷ ক্রমশ বড় বাণিজ্যিক গোষ্ঠীগুলি উৎসাহিত হয়ে আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতায় এগিয়ে এসেছে৷ বড় পুজোকমিটিগুলো উৎসাহিত হয়েছে গাঁটছড়া বাঁধতে৷ এরপর প্রযুক্তি যত এগিয়েছে, লাইভ ভিডিও, অর্থাৎ সরাসরি ভিডিও স্ট্রিমিং থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের ইন্টারঅ্যাক্টিভ অ্যাপের ব্যবহার করে আরো বেশি করে লোককে জড়িয়ে নেওয়ার কলাকৌশলও বেড়েছে৷ আর এই করতে করতেই দুর্গাপুজোর হারানো লোকসংস্কৃতির পুনরুদ্ধারেও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়েছেন শ্রীমন্ত৷ এমন একটা অস্বাভাবিকতা, যা ইদানিং অনেকের নজরে পড়লেও কেউ কোনো সুরাহা খুঁজে পাননি৷ শ্রীমন্ত পেয়েছেন৷

তাঁর নিজের কথায়, ‘‌‘‌দীর্ঘদিন ধরে প্যান্ডেল হপিং করে একটা জিনিস খেয়াল করেছিলাম, মানুষ প্যান্ডেলে ঢুকে প্রণামটা করে না৷ তারা মোবাইল ক্যামেরা অন করে প্যান্ডেলে ঢোকে৷ নিজেরাও বোধহয় প্যান্ডেলটা দেখে না৷ অত্যন্ত খারাপভাবে একটা ভিডিও, কি ছবি তোলার চেষ্টা করে৷ ফাইনালি গিয়ে ঠাকুরের দিকে পিছন করে সেলফি তোলে, ঠাকুরকে ব্যাকগ্রাউন্ডে রেখে৷ তো কমবয়সিদের মধ্যে পুজোর এই যে প্রণাম, শ্রদ্ধা, সম্মান— এই ব্যাপারগুলোকে ফেরানোর জন্য আমরা ‘‌মা ক্লিক্‌স'‌বলে একটা ক্যাম্পেন করেছিলাম হাতিবাগান সার্বজনীনে৷ আমরা আর্টিফিশিয়াল ইন্টালিজেন্স আছে, এমন ক্যামেরা ব্যবহার করেছিলাম, যাতে প্রতিমার সামনে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় কেউ দাঁড়িয়ে হাত জোড় করে প্রণাম করলেই তার ছবি উঠে যাবে এবং একটা এলসিডি স্ক্রিনে সেই ছবিটা দেখা যাবে৷ তার সঙ্গে একটা কিউআর কোড থাকবে, যেটা স্ক্যান করলেই মোবাইলে ছবিটা চলে আসবে৷'‌'‌ শ্রীমন্ত জানাচ্ছেন, তিনি জোর দিয়ে বলতে পারেন যে, সেইবার ওই পুজোমণ্ডপে ঢুকে কেউ অন্তত সেলফি তোলার চেষ্টা করেনি!

২০১৯ সালের ছবিঘর দেখুন...