ঐতিহাসিক সূর্যের চাকতির রহস্য উদ্ধারের প্রচেষ্টা
১১ অক্টোবর ২০১৬ডাকাতরা এক জঙ্গল এলাকায় রহস্যজনক ‘সান ডিস্ক' পেয়েছিল বলে দাবি করে৷ কিন্তু তারা কি সত্যি কথা বলেছে? মাটির নমুনা থেকে অবশ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে, যে সেখানে ব্রোঞ্জের তৈরি কোনো বস্তু ছিল৷ ডাকাতরা তাদের আবর্জনাও একই জায়গায় পুঁতেছিল৷ হালে মিউজিয়ামের কিউরেটর ড. হারাল্ড মেলার বলেন, ‘‘যে কোনো বড় নিদর্শনের মতো এ ক্ষেত্রেও শুরুতে সংশয় ছিল৷ ‘সান ডিস্ক' যে খাঁটি, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে তা প্রমাণিত হয়েছে৷ প্রথমত তার যে অবক্ষয় হয়েছে, তা নকল করা সম্ভব নয়৷''
প্রত্নতাত্ত্বিকরা সরকারি অপরাধ দপ্তরের বিশেষজ্ঞদের প্রযুক্তি ও জ্ঞান কাজে লাগানোরও সুযোগ পেয়েছিলেন৷ মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে প্রথম দর্শনে দেখা গেল, যে প্যাটিনা বা প্রাথমিক স্তরের কাঠামো একেবারে খাঁটি৷
সংশয় পুরোপুরি দূর করতে একটি বিশেষ অংশের নমুনা সংগ্রহ করে গুঁড়া করা হলো৷ বিশেষ ধরনের এক্স-রে যন্ত্রের সাহায্যে সেই পদার্থের ক্রিস্টালাইন কাঠামো পরীক্ষা করা হলো৷ পরীক্ষায় প্রমাণ হলো প্যাটিনা সত্যি খাঁটি৷ সবুজ প্যাটিনা অত্যন্ত ধীরে বেড়ে ওঠে৷ সেটি কোনো নিদর্শনের বয়সের প্রমাণ দেয়৷ এর নকল করা অসম্ভব৷
বার্লিন শহরে ‘বেসি' নামের বিশাল গবেষণাকেন্দ্রে স্কাই ডিস্ক-এর নতুন পরীক্ষা হয়েছে৷ বস্তুর কোনো ক্ষতি না করেই পার্টিকেল অ্যাক্সিলারেটর উপকরণের নিখুঁত বিশ্লেষণ করে৷ এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত শক্তিশালী বিকিরণের মাধ্যমে গোল্ড প্লেটিং পরীক্ষা করা হচ্ছে৷ এই পরীক্ষাও প্রমাণ করলো বস্তুটি সত্যি কতটা প্রাচীন৷
জার্মানির মানহাইম শহরে ‘সেন্টার ফর আর্কিওমেট্রি' ধাতুর বিশ্লেষণ ও বয়স নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বিশ্বের সেরা বলে পরিচিত৷ প্রতিষ্ঠানের প্রধান অ্যার্নস্ট প্যারনিৎসকা এককালে কিংবদন্তির ট্রয় নগরী নিয়ে গবেষণা করেছিলেন৷ স্পেকট্রোমিটারে রসায়নবিদ ধাতুর নমুনার উপকরণগুলি বিশ্লেষণ করছেন৷ এই পরীক্ষায়ও ডিস্কের বয়স জানা গেল৷ ধাতুর বিশ্লেষণ করে ডিস্কের তামার উৎসও জানা গেল৷ আলপ্স পর্বতের পূর্বাঞ্চলে এক পর্বতশ্রেণির কয়েক হাজার বছর প্রাচীন এক আকরিক খনি থেকে সেই তামা তোলা হয়েছে৷
ডিস্ক যে খাঁটি, সে বিষয়ে যাবতীয় সংশয় দূর করার পর ডিজাইনের উপর নজর পড়লো৷ ৩২টি নক্ষত্র, কাস্তের মতো চাঁদ ও সোনালী বলয়৷একটি গোষ্ঠী নিশ্চয় প্লেইডিস বা সাত বোনের প্রতীক৷
জ্যোতির্বিজ্ঞানী মাটিউ অসেনড্রাইভার এক চমকপ্রদ আবিষ্কার করলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘চাঁদ ও প্লেইডিস-এর এই বিন্যাস ‘মাল-আপিন' নামের এক ব্যাবিলনীয় টেক্সটের কথা মনে করিয়ে দেয়৷ বছরে বাড়তি এক মাস যোগ করার প্রেক্ষাপটে সেখানেও চাঁদ ও প্লেইডিস-এর উল্লেখ আছে৷''
মেসোপটেমিয়া-ও পুরোহিত-জ্যোতির্বিদরা তাঁদের মন্দির থেকে আকাশ পর্যবেক্ষণ করতেন৷ তাঁরা মহাজাগতিক ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে তাঁদের পূ্র্ববাণী পলিমাটির ট্যাবলেটে লিখে রাখতেন৷ প্রো. অসেনড্রাইভার বলেন, ‘‘তাঁরা বছরের শুরুতে প্রথম অর্ধচন্দ্রের অবস্থান লক্ষ্য করতেন৷ সেই নিখুঁত অবস্থানের উপর নির্ভর করে প্লেইডিস-এর পরিপ্রেক্ষিতে তাঁরা সিদ্ধান্ত নিতেন, কোনো বছরে একটা বাড়তি মাস – অর্থাৎ ত্রয়োদশ মাসের প্রয়োজন পড়বে কিনা৷''
জার্মানিতে কয়েক হাজার বছর আগের মতো ইসলামি জগতের হিজরি ক্যালেন্ডারও চাঁদ পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে৷ সাওয়ালের চাঁদ রোজার মাসের সমাপ্তি ইঙ্গিত করে৷