1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ঐতিহাসিক জেলের জায়গায় হবে আবাসন!

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

কলকাতার ঐতিহাসিক আলিপুর সেন্ট্রাল জেল এবং লাগোয়া আরও দুটি জেল তুলে দিয়ে সে জায়গায় তৈরি হবে আবাসন৷ কারণ, কলকাতায় নাকি ভালো মানের আবাসন নেই!

https://p.dw.com/p/3E2Fa
Brasilien Gefängnis Überfüllung Archiv 2006
ছবি: picture-alliance/dpa

আলিপুর সেন্ট্রাল জেল, এখন যার নাম ‘‌আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার', তার বিখ্যাত আবাসিকদের তালিকাটা বেশ লম্বা এবং সম্ভ্রম জাগানো৷ আলিপুর ষড়যন্ত্র মামলার‌ অন্যতম আসামি অরবিন্দ ঘোষ, পরবর্তীতে আধ্যাত্মিক গুরু শ্রী অরবিন্দ, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস, পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী ডঃ বিধানচন্দ্র রায়, নকশাল নেতা চারু মজুমদার এই কারাগারে বন্দি ছিলেন৷

আলিপুরে ব্রিটিশ সেনা ব্যারাকের সম্প্রসারিত অংশ হিসেবে ১৯ শতকের শুরুতে গড়ে তোলা এই কেন্দ্রীয় কারাগারের বর্ণময় ইতিহাস আরও পুরনো৷ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর হাতে পরাভূত বিদেশি সৈন্য এবং সেনানায়কদের বন্দি রাখার জন্য তৈরি হয়েছিল এই জেল৷ ফ্রান্স, ডেনমার্ক এবং তুরস্কের যুদ্ধবন্দিদের রাখা হতো এখানে৷ আর সেই শতকের মাঝামাঝি সময়ে যখন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন তুঙ্গে, জাতীয় স্তরের বহু বিখ্যাত রাজনৈতিক নেতাকে এই জেলে বন্দি রাখা হয়েছে৷ সেই ঐতিহাসিক বিচারে আন্দামানের কুখ্যাত সেলুলার জেলের থেকে আলিপুর জেলের গুরুত্ব কোনও অংশে কম নয়৷

আবাসন হবে

সেই আলিপুর জেল, তার লাগোয়া প্রেসিডেন্সি জেল এবং আলিপুর মহিলা জেল - এই তিনটি জেলখানা যে বিরাট এলাকা জুড়ে দাঁড়িয়ে, আদিগঙ্গার তীরে সেই প্রায় ১০০ একর এলাকা ফাঁকা করে দিয়ে সেখানে অভিজাত আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে৷

ঐতিহ্যকে অবশ্য একেবারে জলাঞ্জলি দেওয়া হচ্ছে না৷ আলিপুর জেলের যে সেলে অরবিন্দ বন্দি ছিলেন, বা যে ফাঁসির মঞ্চে বিপ্লবীদের ফাঁসি দেওয়া হতো, সেইরকম কিছু ঐতিহাসিক জায়গা সংরক্ষণ করা হবে৷ কিন্তু বাদবাকি জায়গা, যার মধ্যে বিরাট খোলা জায়গা এবং জলজঙ্গলও আছে, আছে প্রচুর ফল-ফুলের গাছ, সেসব এখন সরিয়ে মানুষের থাকার বন্দোবস্ত হবে৷ কারণ হিসেবে কলকাতায় উচ্চমানের আবাসন না থাকার কথা নাকি বলেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী৷

তাঁর সরকারের কারা দপ্তরের ওই প্রস্তাব নিয়ে রাজ্যের বিরোধীদেরও কেউই বিশেষ উচ্চবাচ্য করছেন না৷

তবে বিষয়টি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সংগঠন, এপিডিআর জনস্বার্থ মামলাও করেছে কলকাতা হাইকোর্টে৷ কিন্তু সেই মামলার শুনানি হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন এপিডিআর-এর মুখ্য সংগঠকদের অন্যতম, বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী রঞ্জিৎ শূর৷

জেল তোলার আগে বন্দিদের সুষ্ঠু পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে, এত তাড়াহুড়ো কেন: রঞ্জিৎ শূর

তিনি জানাচ্ছেন, জেল খালি করে বন্দিদের অন্যত্র সরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে৷ মূলত নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বারুইপুর শহরতলীতে নির্মীয়মাণ রাজ্য সরকারের নতুন সংশোধনাগারটিতে৷ যদিও সেখানেও বাড়তি বন্দিদের জায়গা দেয়ার উপযুক্ত পরিকাঠামো এখনও নেই৷ বন্দিদের চিকিৎসার যথেষ্ট ব্যবস্থা নেই৷ তা সত্ত্বেও একরকম তাড়াহুড়ো করেই তিনটি জেল খালি করার কাজ চালু হয়েছে৷ এর মধ্যে আলিপুর জেল ফাঁকা করে দেয়ার কাজ সদ্য শেষও হয়েছে৷ এখানকার প্রায় ২,০০০ বন্দির অর্ধেক গেছেন বারুইপুরে, বাকিরা রাজ্যের অন্যান্য জেলে৷ এবার প্রেসিডেন্সি এবং মহিলা জেল খালি করার প্রক্রিয়া শুরু হবে৷ আর শুধু ওই তিনটি জেলই নয়, লাগোয়া জমিতে যেসব সরকারি দপ্তর আছে, যেমন জেলাশাসকের দপ্তর, ঐতিহাসিক বেঙ্গল গভর্নমেন্ট প্রেস, বা ‘‌বি জি প্রেস'‌, সবই সরিয়ে দেওয়া হবে৷ এবং ওই ১০০ একর জায়গা চার ভাগ করে বেসরকারি প্রোমোটারদের হাতে তুলে দেওয়া হবে, যেখানে আবাসন হবে৷

প্রতিক্রিয়া

জেলখানার জমি, যা বস্তুত জনগণের সম্পত্তি, তা কেন বেসরকারি প্রোমোটারদের হাতে যাবে?‌ আর সেই জমিতে বিত্তবানদের জন্য আবাসন গড়ে তোলার কী প্রয়োজন ছিল?‌ তথ্যের অধিকার আইনে দায়ের করা একাধিক মামলায় এই প্রশ্ন তুলেছে এপিডিআর৷ রঞ্জিৎ শূর ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‌‘‌জেল তুলে দিক, আমাদের কোনও আপত্তি নেই৷ কিন্তু জেল তুলতে হলে তার আগে তো (‌বন্দিদের)‌ সুষ্ঠু পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে৷ এত তাড়াহুড়ো কেন!‌‌ আর এই যে জেলের জমি, ১০০ একরের ওপর জমি, আমাদের যেটা বক্তব্য, আদিগঙ্গার পাড়ে এরকম জমি, যেটা বাগান ঘেরা, এত গাছপালা ঘেরা, পাখি রয়েছে ভেতরে, সেখানে আবাসন করবে কেন!'‌'‌

এপিডিআর বলছে, কলকাতায় এমনিতেই জায়গার অভাব,  দমবন্ধ হয়ে যাচ্ছে, দিল্লির থেকেও কলকাতায় এখন দূষণ বেশি৷ সেখানে এরকম একটা জায়গায় একটা চমৎকার গণ উদ্যান তৈরি হতে পারত৷ তাছাড়া সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, দেশের প্রতি রাজ্যে দুটো করে ‘‌ওপেন জেল'‌, অর্থাৎ মুক্ত কারাগার, বা সংশোধনালয় তৈরি করতে৷ তার খরচা অনেক কম৷ বন্দিপিছু খরচাও অনেক কম৷ কাজেই কারা ব্যবস্থার সংস্কারের একটা সুযোগও ছিল, যেটা কাজে লাগানো হচ্ছে না৷ এবং জেলের জায়গায় যদি গণ উদ্যান হতো, সেই সুবাদে আদি গঙ্গারও সংস্কার হতো, কলকাতার ছবিটাই পালটে যেত! 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য