1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এসএসসি চেয়ারম্যান বদলেও অনিয়ম? তদন্তে সিবিআই

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২০ ডিসেম্বর ২০২২

শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় সংস্থা৷ এ বার নজরে খোদ চেয়ারম্যানের নিয়োগ পদ্ধতি৷ দুই প্রাক্তন চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই৷ তা হলে কি সর্ষের মধ্যেই ভূত?

https://p.dw.com/p/4LEB4
শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সম্পাদক কিংকর অধিকারী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটা পরিকল্পিত ও সংগঠিত অপরাধ৷ কোনো একজন নেতা, মন্ত্রী, আধিকারিক এ কাজ করতে পারেন না৷ অনেকের গোচরে, সম্মতিতে টাকার লেনদেন করে অযোগ্যদের নিয়োগ করা হয়েছে৷''
শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় সংস্থাছবি: Payel Samanta/DW

স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগে বিপুল দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে৷ একগুচ্ছ মামলা আদালতের বিচারাধীন৷ শিক্ষা দপ্তরের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে এখন কারাবন্দি কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য৷ উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হওয়ার আগে এসএসসি-র চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি৷

সূত্রের খবর, চেয়ারম্যান পদে পরিবর্তনের সময় সঠিক নিয়ম অনুসরণ করা হয়নি বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা৷ আগের দুই কমিশন চেয়ারম্যান চিত্তরঞ্জন মণ্ডল ও প্রদীপকুমার শূরকে সরিয়ে দেওয়ার পর সুবীরেশকে নিয়োগ করা হয়েছিল৷ এই বদলের ক্ষেত্রে অনিয়ম হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে কেন্দ্রীয় সংস্থা৷ 

পরিকল্পনা করে দুর্নীতি করা হয়েছে: রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তী

সুবীরেশ আপাতত সিবিআই হেফাজতে রয়েছেন৷ চেয়ারম্যান পদে বদলের বিষয়টি সম্পর্কে অনুসন্ধানের লক্ষ্যে তার দুই পূর্বসূরিকে সোমবার তলব করে সিবিআই৷ নিজাম প্যালেসে হাজিরা দেন চিত্তরঞ্জন ও প্রদীপ৷ এদের অপসারণের পর সুবীরেশের আমলে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি হয় অনুমান কেন্দ্রীয় সংস্থার৷

আদালতে কেন্দ্রীয় সংস্থার দাবি, শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে যে বিপুল টাকার লেনদেন হয়েছে, তার সঙ্গে শীর্ষ মহলের যোগ রয়েছে৷ এক্ষেত্রে সুবীরেশের ভূমিকা আতসকাচের নিচে৷ তাই জেলবন্দি প্রাক্তন চেয়ারম্যানকে গত সপ্তাহে নিজেদের হেফাজতে চায় সিবিআই৷ এই আবেদন মঞ্জুর করে সিবিআই আদালত৷

শিক্ষক নিয়োগ কেলেঙ্কারির তদন্তে মুখ খুলছেন না সুবীরেশ, এমনটাই খবর সিবিআই সূত্রের৷ তার সঙ্গে দুর্নীতির যোগ কতটা, এর তল পেতে প্রাক্তন দুই চেয়ারম্যানকে তলব বলে মনে করা হচ্ছে৷ একইসঙ্গে তলব করা হয়েছে কমিশনের চার কর্মীকেও৷ এই কর্মীরা সুবীরেশের অধীনে কাজ করেছেন৷

সূত্রের খবর, সোমবার চিত্তরঞ্জন ও প্রদীপের সঙ্গে সুবীরেশকে মুখোমুখি বসিয়ে প্রশ্ন করেন তদন্তকারীরা৷ চিত্তরঞ্জন ২০১১ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান পদে ছিলেন৷ এরপর এক বছর, ২০১৪ সাল পর্যন্ত ওই দায়িত্ব সামলান প্রদীপ৷ তাদের অপসারণের ক্ষেত্রে ঠিকঠাক পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছিল কি না, তা জানতে চেয়েছে সিবিআই৷ সুবীরেশ দায়িত্ব নেওয়ার পর গ্রুপ ‘সি' ও ‘ডি'-তে অনেক বেআইনি নিয়োগ হয়েছে বলে অভিযোগ৷

চিত্তরঞ্জন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে দাবি করেন, তাকে চাকরি দেওয়ার জন্য চাপের মুখে পড়তে হয়েছে৷ নেতামন্ত্রীদের পাশাপাশি তাদের ঘনিষ্ঠরাও চাকরি চেয়ে প্রস্তাব দিতেন৷ যদিও চিত্তরঞ্জনের কার্যকালের সময় পার্থ চট্টোপাধ্যায় শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন না৷ 

এটা পরিকল্পিত ও সংগঠিত অপরাধ: কিংকর অধিকারী

টাকা নিয়ে অযোগ্য প্রার্থীদের নম্বর বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে৷ তাদের ওএমআর শিট বদলে দেওয়া হয়েছে৷ চার কর্মীকে জেরা করে এই রহস্যের সমাধান খুঁজছে সিবিআই৷ আদালতে তারা জানিয়েছে, শ'খানেক অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীর খোঁজ পাওয়া গিয়েছে যারা নিয়োগের জন্য টাকা দেন৷ এদের দ্রুত জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে৷ তদন্তকারীরা জানতে চাইছেন, কার মাধ্যমে কীভাবে তারা টাকা দিয়েছেন চাকরি পাওয়ার জন্য৷

শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সম্পাদক কিংকর অধিকারী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটা পরিকল্পিত ও সংগঠিত অপরাধ৷ কোনো একজন নেতা, মন্ত্রী, আধিকারিক এ কাজ করতে পারেন না৷ অনেকের গোচরে, সম্মতিতে টাকার লেনদেন করে অযোগ্যদের নিয়োগ করা হয়েছে৷''

নিয়োগ দুর্নীতির জেরে স্কুলে শিক্ষকের শূন্যস্থান পূরণ হচ্ছে না৷ এ নিয়ে শিক্ষা মহল উদ্বিগ্ন৷ প্রাক্তন উপাচার্য রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘স্কুলে শিক্ষক না থাকায় ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে, এই বিষয়টা অগোচরে থেকে যাচ্ছে৷ পরিকল্পনা করে দুর্নীতি করা হয়েছে এটা বোঝা যাচ্ছে৷ এর ফল ভুগতে হচ্ছে পড়ুয়াদের৷''

নিয়োগের দাবিতে সোমবার কলকাতায় মহামিছিল করে চাকরিপ্রার্থী কয়েকটি সংগঠনের যৌথ মঞ্চ৷ সেই মিছিলে হাঁটতে দেখা যায় শিক্ষাবিদ মীরাতুন নাহারকে৷ তার মন্তব্য, ‘‘যারা যোগ্য প্রার্থী, তারা শুধু চাকরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন না৷ তাদের মানবাধিকারও লঙ্ঘিত হচ্ছে৷ বাম শাসনের বিরুদ্ধে পথে নেমেছিলাম৷ এখনও নামতে হচ্ছে৷''