এতিমখানার ৮০ ভাগ শিশুই এতিম নয়!
হ্যারি পটার স্রষ্টা জে কে রাউলিং-এর সংগঠন ‘লুমোস’ বলছে, সারা বিশ্বে প্রায় ৮০ লক্ষ শিশু এতিমখানা ও অন্যান্য সংস্থায় থাকে৷ তবে এদের মধ্যে ৮০ ভাগের বেশি শিশু আসলে এতিম নয়!
ব্যবসার অংশ
হ্যারি পটার স্রষ্টা জে কে রাউলিং-এর সংগঠন ‘লুমোস’ বলছে, দরিদ্র দেশগুলোতে স্থাপিত অনেক এতিমখানা আসলে লোভনীয় ব্যবসার একটি অংশ৷ বিদেশি দাতাদের আকৃষ্ট করতে এই এতিমখানাগুলো পরিবার থেকে শিশুদের পৃথক করে এনে সেখানে রাখে৷ এক্ষেত্রে দরিদ্র পরিবারগুলোকে অর্থের লোভ দেখানো হয়, কিংবা সন্তানদের ভালো শিক্ষা দেবার অঙ্গীকার করা হয়৷
অন্তত একজন অভিভাবক
লুমোসের দাবি, সারা বিশ্বে প্রায় ৮০ লক্ষ শিশু এতিমখানা ও অন্যান্য সংস্থায় থাকে৷ তবে এর মধ্যে ৮০ ভাগের বেশি শিশুর অন্তত একজন অভিভাবক আছে৷ লন্ডনে ‘থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন’ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই তথ্য জানিয়েছে তারা৷
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা
লুমোসের মতো আরেকটি সংগঠন ‘ফরগেট মি নট’৷ অস্ট্রেলিয়ার আইনজীবী কেট ভ্যান ডুরে এটি প্রতিষ্ঠা করেছেন৷ অতীতে তিনি নেপাল ও উগান্ডায় দুটি এতিমখানা গড়ে তুলেছিলেন৷ সেইসময় তিনি একটি বিষয় জেনে খুবই অবাক হয়েছিলেন যে, এতিমখানায় আসা এতিমরা আদতে এতিম নয়! লন্ডনের অনুষ্ঠানে তিনি তাঁর এই অভিজ্ঞতার কথা জানান৷
শিশুর বেড়ে ওঠায় সমস্যা
লুমোসের দাসত্ব বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ক্লোয়ে সেটার জানান, এতিমখানা কিংবা অন্যান্য সংস্থায় থাকা শিশুদের বেড়ে ওঠায় সমস্যা দেখা দেয়৷ গবেষণায় দেখা গেছে, এসব শিশুর মধ্যে সামাজিক, ইমোশনাল ও চেতনাবোধ সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দেয়৷
‘ভলানটুরিজম’
ভলান্টিয়ার আর টুরিজম শব্দের মিশ্রনে এই শব্দটি চালু হয়েছে৷ এর মানে হচ্ছে, উন্নত দেশ থেকে অনেক ভলান্টিয়ার বা স্বেচ্ছাসেবক এসব এতিমখানায় কাজ করতে যান৷ এভাবে নতুন এক দেশ দেখা ছাড়াও ভালো কোনো কাজের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারার আনন্দ পেতে চান পর্যটকরা৷
শিশুর জন্য ক্ষতিকর
ভলানটুরিজম বিষয়টি এতিমখানার শিশুদের জন্য ক্ষতিকর৷ কারণ, স্বেচ্ছাসেবকরা মাত্র তিন সপ্তাহ থেকে তিন মাসের জন্য এতিমখানায় থাকেন৷ অর্থাৎ, শিশুরা প্রতিনিয়ত নতুন একজনের সঙ্গ পেয়ে থাকে৷ ফলে কারো সঙ্গে দীর্ঘ সম্পর্কে জড়ানোর যে প্রয়োজনীয়তা সেটি তারা অনুভব করতে পারে না৷
ভয়ংকর কিছু তথ্য
গবেষণা বলছে, এতিমখানায় থাকা শিশুদের নাকি পরিবারের সঙ্গে থাকা শিশুদের চেয়ে যৌনকর্মে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা ১০ গুন বেশি থাকে৷ এছাড়া একজন শিশুকে এতিমখানায় দেয়ার মানে হচ্ছে, তার যৌন সহিংসতার শিকার হওয়ার আশঙ্কা চার গুন বেড়ে যাওয়া৷
পরিবারই আসল ঠিকানা
উন্নত দেশগুলোতে এতিমখানার চল নেই৷ কারণ, সেসব দেশে শিশুর পরিবারের সঙ্গে থাকাটাকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়৷ ফলে এতিমদের জন্য সরকারিভাবে কোনো পরিবার খুঁজে দেয়া হয়৷
দাতাদের পরামর্শ
লুমোস বলছে, দাতারা এতিমখানায় যে অর্থ সহায়তা দিয়ে থাকে, সেটি সেখানে না দিয়ে এমন জায়গায় দেয়া উচিত, যারা দরিদ্র পরিবারগুলো মান উন্নয়নে কাজ করে থাকে৷