1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এখন ‘জয় বাংলা’ দেশের সবার স্লোগান

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২

হাইকোর্টের আদেশ অনুসরণ করে সরকার ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান হিসেবে বাধ্যতামূলক করেছে৷ তবে এটা না মানলে কানো শাস্তির বিধান থাকবে কিনা সে বিষয়ে কিছু জানাননি মন্ত্রিপরিষদ সচিব৷

https://p.dw.com/p/47Mkk
প্রতীকী ছবিছবি: Mahmud Hossain Opu/AP Photo/picture alliance

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রবিবারের মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকের এই সিদ্ধান্ত প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হবে৷ তখন এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানা যাবে৷ তবে এ ব্যাপারে সংসদে কোনো আইন পাশের ইচ্ছা আপাতত সরকারের নেই৷ ২০২০ সালের ২২ মার্চ হাইকোর্ট যে আদেশ দিয়েছে, তার আলোকেই মন্ত্রিপরিষদ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷

মৎস প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী অ্যাডভোকেট শ. ম. রেজাউল করিম জানান, ‘‘জয় বাংলা স্লোগান জাতীয় স্লোগান হিসেবে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে৷ এর বিস্তারিত জানা যাবে প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পর৷ শাস্তির বিধান থাকবে কি থাকবে না সেটা প্রজ্ঞাপন হলে বোঝা যাবে৷'' 

‘জয় বাংলা জাতীয় স্লোগান হিসেবে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে রবিবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান হিসেবে বাধ্যতামূলক করার পর এ নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম৷

তিনি বলেন, ‘‘২০২০ সালে হাইকোর্টের যে রায়, সেখানে বলা হয়েছে যে জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান হিসেবে বিবেচনা করতে হবে এবং সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে৷''

তিনি বলেন, ‘‘মন্ত্রিপরিষদে আলোচনার পর জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান হিসেবে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং এটা প্রচারের ব্যবস্থা নেয়া হবে৷''

যেসব ক্ষেত্রে ‘জয় বাংলা' স্লোগান বাধ্যতামূলক

মন্ত্রিপরিষদ সচিব ‘জয় বাংলা' স্লোগান ব্যবহারের ক্ষেত্রগুলোও স্পষ্ট করেছেন৷ তিনি জানিয়েছেন, সাংবিধানিক পদধারী সব ব্যক্তি, রাষ্ট্রের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী রাষ্ট্রীয় বা সরকারি অনুষ্ঠানের শেষে জয় বাংলা বলবেন৷

এছাড়া স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসহ সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে কোনো ধরনের সভা-সেমিনার শেষে জয় বাংলা বলতে হবে৷ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অ্যাসেম্বলিতে অংশগ্রহণকারীদের ‘জয় বাংলা' স্লোগান দিতে হবে৷

আর যে কোনো ধরনের অ্যাসেম্বলি, অনুষ্ঠানে সরকারি-বেসরকারি যে ব্যক্তিই থাকবেন, তিনি ‘জয় বাংলা' স্লোগান দেবেন৷ আনোয়ারুল ইসলাম জানান, মন্ত্রিপরিষদের সভায় এটা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে৷

আওয়ামী লীগ বিএনপি যা বলছে

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান করার সরকারি সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের দলের মধ্যে কোনো আলোচনা হয়নি৷ আমরা আলোচনা করে পরে আমাদের প্রতিক্রিয়া জনাবো৷'' 

‘সরকার নতুন একটি ফাঁদ পেতেছে’

তবে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘‘আমার ব্যক্তিগত মতামত হলো, দেশে এখন চরম সংকট চলছে, সে সবের কোনো সমাধান না করে জয় বাংলা স্লোগান নিয়ে এখন সরকার একটি নতুন ইস্যু তৈরি করছে৷ মানবাধিকার লঙ্ঘন, ভোটাধিকার না থাকা, দ্রব্য মুল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ এখন অতিষ্ঠ৷ এসব নিয়ে মন্ত্রিসভায় কথা হয় না৷ এইসব সমস্যা থেকে মানুষের দৃষ্টিকে অন্যদিকে নেয়ার জন্যই সরকার নতুন একটি ফাঁদ পেতেছে৷''

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘এখন জয় বাংলা আর বাংলাদেশ জিন্দাবাদ বিতর্কের সময় নয়৷ আমরা সরকারের এই ফাঁদে পা দিতে চাই না৷ দেশের মানুষ যেটা মনে করে সেটাই হবে৷''

এর জবাবে মন্ত্রী শ. ম রেজাউল করিম বলেন, ‘‘এটা হাইকোর্টের আদেশ বাস্তবায়ন করা হয়েছে৷ আর এটা নতুন কিছু নয়৷ মুক্তিযুদ্ধে জয় বাংলা স্লোগান ছিল মুক্তিকামী সকলের স্লোগান৷ এটা কোনো দলের বা ব্যক্তির স্লোগান ছিল না৷ সেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় মানুষকে অনপ্রাণিত করাই এর লক্ষ্য৷ এখানে কোনো দলীয় বিষয় নেই৷ যারা জয় বাংলায় বিশ্বাস করে না, তারা পাকিস্তান জিন্দবাদের অনুসারী৷ তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে দীর্ঘদিন টেলিভিশন, রেডিও ও পত্রিকায় জয় বাংলা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল৷ বইয়ে লেখা যেতো না৷ বঙ্গবন্ধু শব্দটিও লেখা যেতো না, বলা যেতো না৷ লেখা হতো শেখ মুজিব৷'' 

‘জয় বাংলা স্লোগান কোনো দলের নয়, এটা সবার’

রিটকারী আইনজীবীর কথা

জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান করার জন্য ২০১৭ সালে হাইকোর্টে রিট করেছিলেন আইনজীবী বশির আহমেদ৷ তিনি বলেন, ‘‘মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে কোনো শাস্তির কথা বলা না হলেও এটা যারা লঙ্ঘন করবেন তারা আদালত অবমাননা করবেন৷ তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করা যাবে৷ কারণ, এই সিদ্ধান্ত আদালতের৷ সরকার যদি সংসদে আইন পাস করে এটা করতো তাহলে কেউ কেউ বলতো তারা দলীয় স্বার্থে করেছে৷ কিন্তু এটা আদালতের নির্দেশে করা হয়েছে৷ জয় বাংলা স্লোগান কোনো দলের নয়, এটা সবার৷''

তার কথা, মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে৷ মুক্তিযোদ্ধারা জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে মৃত্যুকে বরণ করেছেন, শহীদ হয়েছেন৷ বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বলেছেন, জয় বাংলা স্লোগানের মধ্যে জাতির রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি নিহিত আছে৷ তাই আমি মনে করি এই  স্লোগান আমাদের জাতীয় মন্ত্র৷ এটা সব সময়ের৷ আর এখন এটা সবার মাঝে আবার নতুন করে ছড়িয়ে দিতে হবে৷''

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘জয় বাংলাকে দলীয় স্লোগান বলার কোনো সুযোগ নেই৷ এটা বাংলাদেশের চিরন্তন ও চিরায়ত স্লোগান৷ আমি আমার রিট আবেদনে ১৬৫ দেশের রেফারেন্স দিয়েছি৷ ১৭৫টি দেশের সংবিধানের স্ট্যাটাস উল্লেখ করেছি৷ সেখানেও জাতীয় স্লোগান আছে৷ আর এখন জয় বাংলা আমাদের জাতীয়  স্লোগান৷ এটা সবার জন্য৷''