বিপন্ন পৃথিবী
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৩অ্যাস্টেরয়েড, মেটিয়র, মেটিওরয়েড, মেটিওরাইট, গ্রহাণু, ধূমকেতু, উল্কা, উল্কাপাত, উল্কাবৃষ্টি, নানা কথাই শোনা যাচ্ছে৷ কিন্তু মোদ্দা কথাটা হল, একই দিনে এ'ধরণের দু'টি মহাশূন্য থেকে আসা অতিথি – তাদের একজন জানান দিয়ে এবং অন্যজন আচম্বিতে – সকলকে ভাবিয়ে তুলেছে, যেমন সাধারণ মানুষ, তেমনই বিজ্ঞানী ও রাজনীতিকদের৷
রাশিয়ার উল্কাটি ছিল ১৫ মিটার ব্যাসের; ওজন ১০ টন কি তার বেশি; ফেটেছে বিশটি হিরোশিমা বোমার শক্তি নিয়ে; উরাল পর্বতাঞ্চলের চেলিয়াবিন্স্ক্ শহরে ও অন্যত্র আহত হয়েছে প্রায় বারো'শ মানুষ, হাজার হাজার বাড়ির কাচ ভেঙেছে৷ উল্কার সাইজ ছিল প্রায় একটি বাসের মতো৷ পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের ফলে তা বায়ুমণ্ডলে ঢোকে ঘণ্টায় চুয়ান্ন হাজার কিলোমিটার গতি নিয়ে৷ এবং আকাশেই জ্বলেপুড়ে ভেঙে যায়৷
২০১২ ডিএ-১৪ অ্যাস্টেরয়েড বা গ্রহাণুটি রাশিয়ার উল্কার তিনগুণ বড়৷ ঘণ্টায় ২৮ হাজার কিলোমিটার গতিতে পৃথিবীর প্রায় ৩০ হাজার কিলোমিটার দূরত্ব দিয়ে যায় – যোগাযোগ সংক্রান্ত অনেক স্যাটেলাইটও ওর চেয়ে বেশি দূর থেকে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করছে৷ একটি অ্যাস্টেরয়েডের পৃথিবীর এতো কাছ দিয়ে যাওয়া, এবং বিশেষ করে তা আগে থেকে জানা থাকার ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি, বলে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা মন্তব্য করেছে৷
মুশকিল এই যে, পাঁচ লাখ থেকে দশ লাখ এই ধরণের অ্যাস্টেরয়েড – মহাশূন্যের বিচারে – পৃথিবীর কাছ দিয়েই ঘোরাফেরা করছে৷ তাদের মধ্যে মাত্র হাজার খানেক নথিবদ্ধ করতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা৷ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে রোজ ১০০ টন পরিমাণ ‘স্টারডাস্ট' বা তারকার ধুলিকণা এসে পড়ে, তার অধিকাংশই বালির কণার মতো ছোট এবং বাতাসেই পুড়ে ছাই হয়ে যায়৷
তবে রাশিয়ায় উল্কাপাতের ঘটনা ও অ্যাস্টেরয়েড ২০১২ ডিএ-১৪'র উদয় প্রমাণ করল যে, আমাদের ছোট্ট নীল গ্রহটি ঠিক কতোটা বিপন্ন, কতোটা অসহায়৷ তাই যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিল থেকে মস্কোর ডুমা অবধি রাজনীতিকরা ভাবতে শুরু করেছেন, নিজেদের মধ্যে মারামরি না করে, মহাশূন্যের এই বিপদের মোকাবিলা করার জন্য একত্রিত হলে কেমন হয়!
এসি / এসবি (এপি, এএফপি)