1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এক বছরে শতাধিক বাংলাদেশিকে জার্মানি থেকে জোরপূর্বক ফেরত

২৯ জানুয়ারি ২০২২

আশ্রয় আবেদন বাতিল হওয়া বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠাচ্ছে জার্মানি৷ দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এক বছরে জোরপূর্বক ফেরত পাঠানো বাংলাদেশিদের সংখ্যা শতাধিক৷ স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তনের সুযোগ নিয়েছেন আরো অনেকে৷

https://p.dw.com/p/46G8h
(ফাইল ছবি) ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরছবি: DW/M. Zahidul Haque

গত বছরের জানুয়ারি থেকে শুরু করে অন্তত ১১৯ বাংলাদেশিকে জোরপূর্বক প্রত্যাবাসন করেছে জার্মানি৷ আশ্রয় আবেদন বাতিল হওয়ার পর স্বেচ্ছায় ফেরত না যাওয়ায় এই ব্যবস্থা নিয়েছে দেশটি৷ জার্মানির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাশা লাওফরে ইনফোমাইগ্রেন্টসকে এমন তথ্য জানান৷

নিয়ম অনুযায়ী কোনো অভিবাসীর বসবাসের অনুমতির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে বা আশ্রয় আবেদন প্রত্যাখ্যান হলে তিনি জার্মানি ছাড়তে বাধ্য৷ এক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কেউ দেশটি না ছাড়লে পরবর্তীতে কোনো সময় না দিয়ে কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে তাকে জোরপূর্বক ফেরত পাঠানো হয়৷

এই প্রক্রিয়ায় গত ১৮ জানুয়ারি একটি চার্টার্ড ফ্লাইটের মাধ্যমে ২৬ বাংলাদেশিকে ফেরানো হয়৷ সাশা বলেন, ‘‘প্রত্যাবর্তনকারীদের জোরপূর্বক দেশত্যাগ করানোর বাধ্যবাধকতা ছিল৷ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদেরকে বিমানবন্দরে নিয়ে আসে এবং ফ্লাইটেও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের সঙ্গে ছিলেন৷’’

এর আগে গত বছরের অক্টোবরে ৩৩ জনকে ঢাকায় ফেরত পাঠায় বার্লিন৷ জার্মানির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইনফোমাইগ্রেন্টসকে বলেন, ‘‘২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে মোট ৯৩ জন বাংলাদেশি নাগরিককে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে৷ তবে ডিসেম্বরের পরিসংখ্যান এখনও পাওয়া যায়নি৷’’

সামনের দিনে আর কতজনকে ফেরত পাঠানো হতে পারে এমন প্রশ্নের উত্তরে সাশা বলেন, ‘‘আগে থেকে এই তথ্য দেয়া সম্ভব নয়৷’’

তবে, জানুয়ারির মাঝামাঝিতে ইনফোমাইগ্রেন্টসকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘‘আশ্রয় আবেদন বাতিল হওয়া ৫০ থেকে ৬০ জন বাংলাদেশির ট্রাভেল পারমিট সম্প্রতি ইস্যু করেছে দূতাবাস৷ বাংলাদেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার ক্লিয়ারেন্স প্রতিবেদন পাওয়ার পরে আমরা তাদের ট্রাভেল পারমিট ইস্যু করেছি৷’’

এর আগে গত অক্টোবরে বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো ‘আট শতাধিক বাংলাদেশিকে জার্মানি থেকে ঢাকায় ফেরত পাঠাচ্ছে বলে’ প্রতিবেদন প্রকাশ করে৷ তখন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ইনফোমাইগ্রেন্টসকে জানান, এদের মধ্যে অনেকে ইতোমধ্যে জার্মানি ছেড়ে চলে গেছেন৷ ফলে ফেরত পাঠানোর প্রকৃত সংখ্যাটি আরো কম হবে৷

স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তনে সহায়তা

গত এক বছরে আশ্রয় আবেদন বাতিল হওয়া আরো অনেকে জার্মান কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মেনে ফিরে এসেছেন৷ তাদেরই একজন মনসুর (ছদ্মনাম)৷ ২০১৩ সালে ইরাকে যান ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার এই বাসিন্দা৷ কিন্তু সেখানে পরিস্থিতি ভালো না থাকায় ইউরোপ পাড়ি জমানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি৷ কুর্দিস্তান, তুরস্ক, গ্রিস, মেসিডোনিয়া, সার্বিয়া, অস্ট্রিয়া হয়ে ২০১৫ সালে পৌঁছান জার্মানিতে৷ ২০২১ সালে তার আশ্রয় আবেদন সম্পূর্ণ বাতিল করে দেশটি৷ গত ২৪ সেপ্টেম্বর দেশে ফিরতে বাধ্য হন তিনি৷

‘‘আমাকে বলা হয়েছে নিজের থেকে না ফিরলে জোর করে ফেরত পাঠানো হবে৷ আমি এজন্য আইওএম এর সহায়তায় ফেরার সিদ্ধান্ত নেই,'' বলেন তিনি৷

আশ্রয়প্রার্থীদের স্বেচ্ছা প্রত্যাবর্তনে উৎসাহ দিতে আরইএজি/জিএআরপি নামে জার্মানির সরকারের একটি প্রকল্প রয়েছে৷ এর অধীনেই আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা-আইওএম প্রত্যাবর্তনকারীদের নানাভাবে সহযোগিতা করে৷ ফ্লাইট টিকেট, যাত্রাকালীন খরচ হিসেবে ২০০ ইউরো, এমনকি এককালীন নগদ এক হাজার ইউরো অর্থ সহায়তাও বুঝে পান তারা৷ মনসুরসহ স্বেচ্ছায় ফিরে যাওয়া আরো কয়েকজনও এই সহায়তাগুলো পাওয়ার কথা জানিয়েছেন ইনফোমাইগ্রেন্টসকে৷ এককালীন টাকা তারা বুঝে পেয়েছেন ফ্লাইটে ওঠার আগে৷ তবে যাদের জোরপূর্বক ফেরত পাঠানো হয় এই সুবিধাগুলো পান না তারা৷

চার বছরে ফেরত ৪৫০ অনিয়মিত অভিবাসী

জোরপূর্বক বা স্বেচ্ছায় যেভাবেই আসেন না কেন প্রত্যাবাসনকারীরা বাংলাদেশে নামার পর দুইটি প্রকল্পের মাধ্যমে সহায়তা পেয়ে থাকেন, যা থেকে ফেরত আসার মোট সংখ্যাটিও জানা যায়৷ এরমধ্যে ১৬টি ইইউ দেশের অর্থায়নে পরিচালিত একটি প্রকল্প ইউরোপীয় রিটার্ন অ্যান্ড রিইন্টিগ্রেশন নেটওয়ার্ক বা ইরিন৷ অন্যটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে আইওএম পরিচালিত ‘প্রত্যাশা’৷

দুইটি প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গেই যুক্ত বাংলাদেশের বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক৷ ইরিন প্রকল্পের অধীনে গত বছর জার্মানি থেকে ফিরে আসা ২৯ জনকে সহায়তা দিয়েছে তারা৷ অন্যদিকে, প্রত্যাশার অধীনে সহায়তা পেয়েছেন ১৬৮ জন৷ অর্থাৎ, সব মিলিয়ে জার্মানি থেকে ফিরে আসা প্রায় ২০০ জন গত বছর এই দুই প্রকল্পের সহায়তা নিয়েছেন৷ গত চার বছরে এই সংখ্যাটি প্রায় ৪৫০৷ এরা সবাই ২০১৫ সালের পর ফেরত এসেছেন৷

যোগাযোগ করা হলে ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগামের প্রধান শরিফুল হাসান ইনফোমাইগ্রেন্টসকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশ সরকার ২০১৭ সালে ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরস (এসওপি) চুক্তি স্বাক্ষর করেছে আনডকুমেন্টেড বাংলাদেশিদের ফেরত আনার জন্য৷ এর মানে বাংলাদেশ চায় না অনিয়মিত পন্থায় লোক বিদেশ যাক৷''

শরিফুল জানান, গত কয়েকবছরে ইউরোপ থেকে ফেরত আসা সবচেয়ে বেশি লোক তারা পেয়েছেন ইটালি, গ্রিস ও জার্মানি থেকে৷ ‘‘যারা ফেরত এসেছেন তাদেরকে বিমানবন্দরে জরুরি সহায়তা, কাউন্সেলিং ও পরে অর্থনৈতিক সহায়তা দেওয়া হয় যাতে তারা ফের ঘুরে দাঁড়াতে পারেন৷ পাশাপাশি এইভাবে ঝুঁকি নিয়ে যেন লোকজন ইউরোপে না যায় সেজন্য সারাদেশে আমরা সচেতনতা তৈরির কাজ করছি৷ আসলে দেশে বিদেশে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই সংকটের সমাধান করতে হবে,’’ বলেন তিনি৷

প্রথম প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি, ২০২১ ইনফোমাইগ্রেন্টস

অভিবাসী বিষয়ক সংবাদমাধ্যম ইনফোমাইগ্রেন্টস তিনটি প্রধান ইউরোপীয় সংবাদমাধ্যমের নেতৃত্বে একটি যৌথ প্লাটফর্ম৷ প্লাটফর্মটিতে রয়েছে জার্মানির আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলে, ফ্রান্স মিডিয়া মোন্দ, এবং ইটালিয়ান সংবাদ সংস্থা আনসা৷ এই প্রকল্পের সহ-অর্থায়নে রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷

১৯ জানুয়ারির ছবিঘর দেখুন...

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান