1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এক পরিবারের ৩১ জনের করোনা

২০ এপ্রিল ২০২০

দিল্লিতে একই পরিবারের ৩১ জন সদস্য করোনায় আক্রান্ত হলেন। ঘটনাটি ঘটেছে জাহাঙ্গিরপুরিতে।

https://p.dw.com/p/3b9ev
ছবি: Reuters/A. Dave

বলা যেতে পারে করোনা-রেকর্ড করে ফেললো দিল্লি। জাহাঙ্গিরপুরিতে একই পরিবারের ৩১ জন সদস্য করোনায় আক্রান্ত হলেন। প্রথমে পরিবারের এক বয়স্কা নারীর করোনায় মৃত্যু হয়। তিনি মারা যাওয়ার পর রিপোর্ট আসে যে তাঁর করোনা হয়েছিল। তারপর পরিবারের বাকিদের পরীক্ষার পর প্রথমে ২৬ জনের করোনা ধরা পড়ে। রোববার আরও পাঁচজনের করোনা হয়েছে বলে রিপোর্ট আসে। জাহাঙ্গিরপুরির এই মুসলিম পরিবারের বাচ্চারাও করোনায় আক্রান্ত। ভারতে একই পরিবারের এতজন ব্যক্তির একসঙ্গে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা এই প্রথম। আক্রান্তদের নারেলায় আইসোলেশন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পুরো এলাকা সিল করে দেওয়া হয়েছে। মৃতা মহিলা আরও ৩৩ জনের সঙ্গে মিশেছিলেন। তাঁদের রিপোর্ট অবশ্য নেগেটিভ এসেছে। এর ফলে একটি বিষয় আবার স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, লোকে লকডাউনের বিধিনিষেধ পুরোপুরি মানছেন না। না হলে পরিবারের বাইরে আরও ৩৩ জনের সঙ্গে মেলামেশা হলো কী করে?

দিল্লিতে দ্বিতীয় বড় ঘটনাটি ঘটেছে তুঘলকাবাদ এক্সটেনশনে। সেখানে এক দোকানদার সহ ৩৮ জনের করোনা ধরা পড়েছে। পুলিশের সন্দেহ, দোকানদারের থেকেই ওখানে করোনা ছড়িয়েছে। দোকানদারের সংস্পর্শে আসা ৯৪ জনের পরীক্ষা হয়েছিল, তার মধ্যে ৩৮ জনের করোনা ধরা পড়েছে। নিজামুদ্দিনের পর কোনও এলাকায় এতজন করোনায় আক্রান্ত হলেন। দিল্লিতে সব মিলিয়ে এক হাজার ৮৯৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গিয়েছেন ৪৩ জন। সারা ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা ১৭ হাজার ২৬৫ জন। মারা গিয়েছেন ৫৫৩ জন। মহারাষ্ট্রেই গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৫২ জন আক্রান্ত হয়েছেন।

করোনার সময়ও হিন্দু-মুসলিম বিভাজনের একাধিক নিদর্শন সামনে এসেছে। গুজরাটে একটি হাসপাতালে আলাদা করে হিন্দু ও মুসলিমদের ওয়ার্ড তৈরি হয়েছে। এরপর উত্তর প্রদেশে একটি হাসপাতাল জানিয়ে দেয়, মুসলিম রোগীরা সেখানে ভর্তি হতে চাইলে করোনা পরীক্ষার সার্টিফিকেট সঙ্গে নিয়ে আসতে হবে। এরপর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছেন, ''করোনা কোনও জাতি, ধর্ম, বর্ণ বিচার করে আক্রমণ করে না।'' তবে বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, প্রধানমন্ত্রীর উচিত ছিল, অনেক আগে এই আবেদন করা ও যাঁরা এই কাজ করছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার নির্দেশ দেওয়া।

এই অবস্থায় দিল্লি, পাঞ্জাব, তেলেঙ্গানা ঠিক করেছে, রাজ্যের কোথাও লকডাউন শিথিল করা হবে না। কর্ণাটক তো লকডাউনের সময়সীমা আরও বাড়িয়ে ৭ মে পর্যন্ত করেছে। শুধু গোয়া ও মণিপুরকে করোনামুক্ত বলে ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। কেরলে তো রেস্তোরাঁ খুলে  দেওয়া হয়েছে। বেসরকারি গাড়ি চলার অনুমতিও দেওয়া হয়েছে। বাকি ভারতে যেখানে করোনার প্রকোপ কম, সেখানে  সোমবার থেকে অনেক ক্ষেত্রেই কাজ শুরু হয়ে যাচ্ছে। যেমন স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস তৈরির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, কৃষি ও ফুলের চাষ করা যাবে, মাছ ধরা যাবে, পশুপালন করা যাবে, চা সহ বিভিন্ন বাগানে কাজ শুরু হয়ে যাবে। তবে বাগানের ক্ষেত্রে শর্ত হলো ৫০ শতাংশ শ্রমিক কাজ করতে পারবেন। চা, কফি ছাড়া নারকেল, রবার, বাঁশ, মশলা, বিভিন্ন ধরনের বাদাম ও কোকো বাগান খুলবে। আদিবাসীদের ক্ষেত্রে বনের জিনিস সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে কোনও বাধা থাকবে না।

এ ছাড়াও গ্রামের দিকে ১০০ দিনের কাজ বা মনরেগা চালু হয়ে যাবে। গ্রামের দিকে নির্মাণ কাজও শুরু হবে, বিদ্যুতের লাইন বিছানো, অপটিক ফাইবার ও কেবল বিছানো, জল সরবরাহ ও নিকাশির কাজও শুরু হবে। অত্যাবশ্যকীয় জিনিস তৈরির কারখানাও খুলবে। তবে সেখানে কিছু শর্ত মানতে হবে। কর্মীদের কারখানা বা তার পাশে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। মাল ওঠানো-নামানোর কাজ শুরু হবে। ই কমার্স সংস্থাগুলি এতদিন কেবল নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করতে পারতো। এ বার তারা মোবাইল, ল্যাপটপ, ইলেকট্রনিক্স থেকে শুরু করে অনেক জিনিসই দিতে পারবে।   

সরকারের আশা, এর ফলে শ্রমিকরা কাজ পাবেন। অর্থনীতি আবার সচল হবে। পরিযায়ী শ্রমিকরাও কাজ পাবেন, বিশেষ করে কৃষির ক্ষেত্রে। যেমন পাঞ্জাব, হরিয়ানার মতো রাজ্যে ফসল তোলার কাজটা এই শ্রমিকরাই করেন। যন্ত্রও ব্যবহার করা হয়, তবে শ্রমিক ছাড়া বড় কৃষকরা বিপাকে পড়েন। মুশকিল হলো, ওই রাজ্যগুলিতে তাঁরা পৌঁছবেন কী করে? দিল্লি থেকে কোনও ধরনের যানবাহন চলছে না। তবে গ্রাম ও জেলার দিকে কাজকারবার শুরু হলে সেখানকার শ্রমিক ও গরিব মানুষেরা বঁচার রসদ পাবেন।

জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এএনআই)