1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এক নজরে : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

১৪ এপ্রিল ২০০৯

এক বহুদর্শী বর্ষীয়ান বাম নেতা একবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন, এরকম মেয়ে কী করে বাম আন্দোলনের বাইরে থেকে গেল কে জানে৷ তৃণমূল নেত্রীর এত চমৎকার রাজনৈতিক মূল্যায়ন সম্ভবত আর হয়নি৷

https://p.dw.com/p/HWof
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ছবি: AP

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথাকথিত দক্ষিণপন্থী রাজনীতিতে দীক্ষিত হলেও রাজনৈতিক আচরণের দিক দিয়ে তিনি আনখশির বামপন্থী৷ শুধু সাধারণ মানুষের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়া নয়, যেভাবে তিনি সাধারণ মানুষের পক্ষে আন্দোলন গড়ে তোলেন, তা পুরোদস্তুর বামপন্থী কায়দা৷ যে কারণে লোকসভা ভোটে মমতার বিরুদ্ধে লড়তে নেমে কার্যত তাঁর সেই বামপন্থী ইমেজেরই মোকাবিলা করতে হচ্ছে বামপন্থীদের৷ বা বলা ভাল, বামপন্থীদের জবাব মমতা দিচ্ছেন বামপন্থীদের ভাষাতেই৷ সিঙ্গুর বা নন্দীগ্রামে কৃষিজমি রক্ষার আন্দোলনের কথা ছেড়েই দেওয়া যাক৷ এই আন্দোলন সম্পর্কে সমাজকর্মী মেধা পাটেকারের মন্তব্যই মোদ্দা কথাটা বলে দিয়েছে যে বাকি দেশে যেখানে কৃষকদের স্বার্থরক্ষায় বামপন্থীরা সবার আগে ঝাঁপিয়ে পড়ে, সেখানে পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থীরাই কৃষিজমি কেড়ে নিতে উদ্যত৷ মেধা যেটা বলেননি সেটা রাজ্যবাসী কিন্তু ঠিকই বুঝতে পেরেছেন. কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় শেষপর্যন্ত কে ঝাঁপিয়েছেন, না মমতা৷ বামপন্থী নয়?

কিন্তু সিঙ্গুর বা নন্দীগ্রাম নয়, অপেক্ষাকৃত ছোট ইস্যুগুলির কথা ধরা যাক৷ পরিবেশ দূষণ ঠেকাতে কলকাতা এবং শহরতলীতে টু স্ট্রোক অটোরিকশা বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে আদালত৷ এই নির্দেশ কার্যকর করার কথা সরকারের৷ কিন্তু অটো ইউনিয়নগুলিকে হাতে রাখার রাজনৈতিক তাগিদ থেকেই সম্ভবত, সম্পূর্ণ নিশ্চেষ্ট রইল সরকার৷ বিষয়টা আবার ফিরে গেল আদালতে৷ এবার আদালত অনেক কঠোর৷ রাজ্য পরিবহণ দফতর বাধ্য হয়েই পুরনো অটো বাজেয়াপ্ত করতে শুরু করল৷ অটোচালকরা প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু করলেন৷ পাশে কে দাঁড়ালেন, না মমতা৷ এবং সিপিএম বা বামফ্রন্ট যেটা প্রচার করতে চেষ্টা করে যে যেখানেই হাঙ্গামা সেখানেই মমতা, নৈরাজ্যের রাজনীতি করে তাঁর দল তৃণমূল, ব্যাপারটা কিন্তু আদৌ সেরকম কিছু হল না৷ বরং আন্দোলনের মঞ্চকে কাজে লাগিয়ে মমতার দল লোককে বোঝাল, যে আদতে সরকারই দূষণ রোধে এবং অটো চালকদের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে এতদিন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি৷ যে তরল পেট্রলিয়াম গ্যাসের জ্বালানিতে অটো চালাবার কথা আদালত বলছে, তা যাতে সহজলভ্য হয় তা নিশ্চিত করার কোনও উদ্যোগই নেয়নি রাজ্য পরিবহণ দফতর৷ কাজেই অটোচালকদের জীবন ও জীবিকা যদি আজ বিপন্ন হয়, তার জন্য বামফ্রন্ট সরকারই পুরোপুরি দায়ী৷

অথবা ডানলপ কারখানার পুনরুজ্জীবনের কথা ধরা যাক৷ শিল্প ধ্বংসের এই রাজ্যে ডানলপ কারখানার বন্ধ দরজা খুলিয়ে যে শ্লাঘা বোধ করেছিল সরকার, তা একেবারে গুরুত্বহীন করে দিলেন মমতা, বিক্ষুব্ধ ডানলপ কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়ে৷ অবস্থা এমন হয়েছিল যে শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা শ্রমিকদের হাতে মার খাওয়ার ভয়ে কারখানার ধারে কাছে ঘেঁষছিলেন না৷ শেষপর্যন্ত ডানলপের মালিক পবন রুইয়াকে মাথা ঝোঁকাতেই হল৷ মমতার বাড়িতে গিয়ে তিনি কথা দিয়ে এলেন, শ্রমিক স্বার্থ নষ্ট হয় এমন কোনও কাজ তিনি করবেন না৷ জিত কার? শ্রমিকদের, কে সেই অধিকার হাসিল করে দিলেন? না মমতা৷

এভাবে উদাহরণের পাহাড় জমতে পারে৷ যাটের দশকের বাম আন্দোলনের আবহকে যেন ফিরিয়ে এনেছেন তৃণমূল নেত্রী৷ ভাবা যায়, বিলাসবহুল শপিং মল, সুপার মার্কেটের পাহারায় পুলিশ বসাতে হয়েছে বাম সরকারকে কারণ সুপার মার্কেট যাতে রাস্তার হকারদের ভাত না মারতে পারে সেজন্য আন্দোলন করছেন হকাররা৷ কে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সেই আন্দোলনের, না দক্ষিণপন্থী মমতা৷

আর এই সবকিছুর সঙ্গে যোগ হয়েছে লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূল কংগ্রেসের জোট৷ এই জোট নিয়ে মূলত রাজ্য কংগ্রেসের উঁচুতলায় যথেষ্ট ক্ষোভ আছে. আশঙ্কা আছে অন্তর্ঘাতের৷ কিন্তু দলের প্রার্থীপদ না পেয়ে বিক্ষুব্ধ একজন নেতার সঙ্গে দলের একেবারে তৃণমূল স্তরের একজন কর্মী বা সমর্থক, যিনি মনেপ্রাণে একটা বদল চাইছেন, তাঁর মানসিকতায় বিস্তর ফারাক আছে৷ এই মানসিকতার যদি জোট বন্ধন হয়, তাহলে ভুয়ো ভোটার, ভুল ভোটার তালিকা, ভোটে কারচুপি, সব সত্ত্বেও অনেক হিসেব উল্টে পাল্টে যেতে পারে৷ আর যদি সেটা নাও হয়, তবু যদি বাম ভোট ব্যাঙ্কে একটা বড়সড় ধাক্কা দিতে পারে বিরোধীরা, সেটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক বিরাট নৈতিক জয় হবে৷ রাজ্যে বিধানসভা ভোটের আগে তাঁর হাতে তো এখনও দুবছর সময় আছে৷

প্রতিবেদক: শীর্ষ বন্দোপাধ্যায়, সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল-ফারূক