1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এক কবরেই ৩৮ জনের লাশ!

সঞ্জীব বর্মন, সাগর সরওয়ার ও আরাফাতুল ইসলাম২৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৯

বিডিআর সদর দপ্তরের ভেতরে একটি স্থানে গণকবরের সন্ধান পেয়েছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা৷ সেখানে একটি কবরে অন্তত ৩৮ জন সেনা সদস্যকে সমাধিস্থ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে তল্লাশি দলের প্রধান শেখ মিজানুর রহমান৷

https://p.dw.com/p/H1cc
বিডিআর সদর দপ্তর সেনা সদস্যরা প্রবেশ করেছে৷ (ফাইল ফটো)ছবি: DW/Swapan

শেখ মিজানুর রহমান জানান, অন্তত ১৫টি মরদেহ দেখা যাচ্ছে৷ বাকি মরদেহ উদ্ধার করতে আমাদের বিশেষ যন্ত্রপাতি প্রয়োজন কারণ সেগুলোতে মারাত্মকভাবে পচন ধরেছে৷

এর আগে, নিখোঁজ সেনা কর্মকর্তাদের খোঁজে সেনাবাহিনীর সদস্যরা সাঁজোয়া যান নিয়ে শুক্রবার পিলখানার বিডিআর সদর দপ্তরে প্রবেশ করেছে৷ এসময় তারা তল্লাশি চালিয়ে আরো লাশ উদ্ধার করেছে বলে প্রকাশ৷ সব মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা অন্তত ৭০ জন৷

শুক্রবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সাহারা খাতুন এবং সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদ শুক্রবার বিডিআর সদর দপ্তরে যান৷ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমতি নিয়ে সেনা সদস্যরা সেখানে উদ্ধার কাজে নেমেছে৷

এছাড়া নৌবাহিনীর একটি ডুবুরি দল এবং দমকল বাহিনীর সদস্যরাও সেখানে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে৷ বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৭০ জনের নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে পুলিশ এবং দমকল বাহিনী৷ এদিকে এখন পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে বিদ্রোহের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ২৩০ বিডিআর সদস্যকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব়্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার এ কে আজাদ৷

নিখোঁজ সেনা কর্মকর্তাদের সম্পর্কে তথ্য পাওয়ার জন্য বিডিআর সদর দপ্তরের প্রধান ফটকের কাছে অপেক্ষা করছে৷ এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার সকালে সেনাবাহিনী সদর দপ্তরে যান এবং বিডিআর বিদ্রোহে আহত ও নিহতদের আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ খবর নেন ও সান্ত্বনা দেন৷ এসময় শেখ হাসিনা বিডিআর বিদ্রোহে ইন্ধনদাতাদের খুঁজে বের করা হবে৷ এই ঘটনার তদন্ত হবে৷ এই ঘটনা কেন ঘটল এবং কারা দায়ী তা খুঁজে বের করা হবে৷

এ সময়ের তুখোর ছাত্র৷ দারুন এক ক্যারিয়ার৷ কোন কিছুই তাঁকে বাঁচাতে পারলোনা৷ বিডিআর বিদ্রোহে তিনি প্রাণ হারালেন৷ তিনি নিহত ক্যাপ্টেন মাজহারুল হায়দার৷ বাংলাদেশের পুলিশ প্রধানের জামাতা৷ বিডিআর মহাপরিচালকের এডিসি৷

বিডিআর সদর দফতরের সকল সদস্যের প্রিয় মুখ ছিলেন হায়দার৷ বাংলাদেশে পুলিশের আইজিপি নূর মোহাম্মদের বড় মেয়ে নুসরাত নূর বাঁধনের সঙ্গে তার বিয়ে হয় তিন মাস আগে৷ বুধবার সকালে বিডিআর মহাপরিচালকের উপর হামলার সময় তিনি তাঁকে রক্ষার সর্বাত্মক চেষ্টাই যেন তার কাল হলো৷ বিদ্রোহীরা বিডিআর দরবার হল থেকে টেনে-হিঁচড়ে বের করে এনে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেয় তার সারা শরীর৷ নিভে যায় জীবন প্রদীপ৷

অফিসার হাউজে অবরুদ্ধ স্ত্রী বাঁধন স্বামীর মৃত্যুর খবর জানতে পারেন ১৫ ঘন্টা পরে৷ বুধবার ভোর রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুন অবরুদ্ধ অবস্থায় অন্যদের সঙ্গে বাঁধনকেও উদ্ধার করেন৷ বাবা আইজিপি নূর মোহাম্মদ তখন সেই সদর দফতরেই৷

বুধবার ভোরে ডয়চে ভেলের বন ষ্টুডিও থেকে যখন আইজিপি নূর মোহাম্মদকে ফোন করা হলো, তখন তিনি কেবল বললেন, এখন কথা বলতে পারবো না৷ সরকারী দায়িত্ব৷ তিনি তখন পরিকল্পনা করছেন কি করে দেশের এই সমস্যা সমাধান সঠিকভাবে করা যায়৷ আর তার পরিবারের অবস্থা! তিনি তখনও জানেন না তাঁর জামাতা কোথায় আছেন!

ক্যাপ্টেন মাজহারুল হায়দারকে হত্যার পর ঘাতকরা তার লাশ ফেলে দেয় স্যুয়ারেজ লাইনে৷ পরে সেই মৃতদেহ পাওয়া যায় বৃহস্পতিবার সকালে৷ লালবাগের বেড়িবাঁধ স্যুয়ারেজ লাইন মুখে৷ তখনো শুকায়নি তার হাতের মেহেদির রং..

বিডিআর প্রধান নিহত হন প্রথম দিনেই

বুধবার সকালে বিডিআর সেনাদের বিদ্রোহের শুরুতেই বিডিআর প্রধান মেজর জেনারেল শাকিলকে হত্যা করা হয়৷ বৃহস্পতিবার রাতে বিডিআর কর্মকর্তা কর্নেল এম কামরুজ্জামান এর বরাত দিয়ে একাধিক সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে এই তথ্য৷

কর্নেল কামরুজ্জামান জানান, বিদ্রোহী বিডিআর সেনারা সর্ব প্রথম বিডিআর প্রধানকে হত্যা করে৷ দরবার হলে তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়৷ হত্যার পর তাঁর মৃতদেহ দরবার হলেই ফেলে রাখা হয়েছিল৷

তিনি জানান, বিদ্রোহী সেনারা আমাকেও গুলি করে৷ কিন্তু আমি কোনভাবে বেঁচে যাই৷

Bangladesh Soldaten Paramilitär Hauptquartier
বুধবার রাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সাহারা খাতুনের কাছে অস্ত্র সমর্পন করে বিডিআর এর একাংশ৷ছবি: Harun-ur-Rashid Swapan

বিদ্রোহী বিডিআর সেনারা অস্ত্র সমর্পণ এবং জিম্মিদের ছেড়ে দেয়ার পরও অন্তত ১৩৭ সেনা কর্মকর্তা নিখোঁজ রয়েছে বলে জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র৷

সেনাবাহিনীর মুখপাত্রের বরাত দিয়ে সংবাদ সংস্থা এএফপি জানায়, বুধবার বিডিআর বিদ্রোহের সময় দরবার হলে ১৬৮ সেনা কর্মকর্তা বৈঠক করছিলেন৷ বিডিআর সেনাদের অস্ত্র সমর্পণের পর এখন পর্যন্ত সেই বৈঠকে থাকা ৩১ জনের সন্ধান পাওয়া গেছে৷

এর আগে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখপাত্র আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিডিআর সদস্যরা অস্ত্র সমর্পণ করে তাদের ব্যারাকে ফিরে গেছে৷ তিনি আরও জানান, ইতিমধ্যে সব পণবন্দিদের মুক্তিও দেওয়া হয়েছে৷ আজাদ বলেন, গোটা দেশের পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে৷

উল্লেখ্য, অশান্তি যাতে আরও ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশের টেলিকম কর্তৃপক্ষ দেশের ৬টি কোম্পানিকে মোবাইল টেলিফোন পরিষেবা বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিল৷ বৃহস্পতিবার সীমান্তের ১৫টি জেলায় বিডিআর সদস্যদের বিদ্রোহ করেছে বলে পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছিল৷

এর আগে, বাংলাদেশ সরকারের প্রধান মধ্যস্থতাকারী মাহবুব আরা গিনি জানিয়েছেন, বিদ্রোহী বিডিআর সেনাদের সবাই ইতিমধ্যে অস্ত্র সমর্পণ করেছে৷ বিডিআর-এর সদর দফতরে আটক পণবন্দিরাও মুক্তি পেয়েছেন বলে জানানো হয়েছে৷

বিডিআর-এর সদর দফতরের কাছে সামরিক বাহিনী ট্যাংক মোতায়েন করেছে৷ সামরিক বাহিনীর এক মুখপাত্র বলেন, জরুরি পরিস্থিতি দেখা দিলে তা প্রতিরোধ করতে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে৷ সংবাদ সংস্থা, এএফপির এক সাংবাদিক কমপক্ষে ৫টি সাঁজোয়া গাড়ি দেখেছেন৷

জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে শেখ হাসিনা বিদ্রোহী বিডিআর সেনাদের এখনই অস্ত্র সমর্পণ করে ব্যারাকে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘ব্যারাকে ফিরে যান৷ অন্যথায় আমি দেশবাসীর স্বার্থে যেকোন ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব৷’’

শেখ হাসিনার ভাষণের পর বিদ্রোহী বিডিআর বাহিনী অস্ত্র সমর্পণ করতে শুরু করে৷ ঢাকা থেকে আমাদের প্রতিনিধি হারুন-উর-রশিদ স্বপন জানিয়েছেন, দুপুর থেকে এধরণের অস্ত্র সমর্পণ আবারো শুরু হয়েছে৷

Kämpfe in Bangladesch
আতংকিত মানুষে কান্ড৷ছবি: AP

এদিকে, দুপুরে বিডিআর সেনাদের পক্ষের একটি মিছিলে গুলি চালায় সেনাবাহিনী৷ এতে অন্তত দুইজন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে আমাদের ঢাকা প্রতিনিধি৷ এসময় বিদ্রোহি বিডিআর সেনারাও সেনাবাহিনীকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় বলে প্রকাশ৷

এদিকে ঢাকা এখন অনেকটাই জনমানবশুন্য বলে মনে হচ্ছে৷ প্রয়োজনের বাইরে সাধারণ নাগরিকরা রাস্তায় নামছেন না৷ বিডিআর সদর দপ্তরের আশেপাশের আবাসিক এলাকাগুলো থেকে সাধারণ মানুষ সরে যাচ্ছে বলে প্রকাশ৷ সরকার এবং মাঝে মাঝে বিদ্রোহী বিডিআর সেনারাও মাইকে আশেপাশের সাধারণ মানুষদের নিরাপদ দূরত্বে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন৷

এছাড়া অন্তত ১২ জন বিডিআর সেনার লাশ এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন আমাদের প্রতিনিধি৷ অবশ্য বুধবার রাতেই বাংলাদেশের আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম জানিয়েছেন, বিডিআর বিদ্রোহে অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছেন৷

ঢাকার বাইরে বিভিন্ন বিডিআর কার্যালয়েও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ছে বলে প্রকাশ৷ ইতিমধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন স্থানে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তাসংস্থাগুলো৷